
জাহিদ রিপন
কুয়াকাটা উপকূলে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ জেলেদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তবে তাদের উদ্ধারে এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছেও নেই সঠিক তথ্য। জীবিত না মৃত- এমন অনিশ্চয়তায় পরিবারগুলো মৃত্যুসনদ কিংবা ওয়ারিশ সনদ পাচ্ছে না। ফলে তারা সরকারি সামাজিক সুরক্ষাসহ নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
চলতি বছরের ২৫ জুলাই বঙ্গোপসাগরে ট্রলার ডুবে কলাপাড়ার মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের ইদ্রিস হাওলাদার ও লালুয়ার নজরুল ইসলামসহ ১৫ জেলে নিখোঁজ হন। পরে ১ আগস্ট ইদ্রিস ও ৭ আগস্ট নজরুলের লাশ কুয়াকাটা সৈকতে ভেসে আসে। কিন্তু বাকিদের আর কোনো খোঁজ মেলেনি।
প্রতি বছর প্রায় ৮৩ হাজার জেলে জীবিকার তাগিদে গভীর সমুদ্রে যায়। বৈরি আবহাওয়া ও দুর্ঘটনায় অনেকেই মারা যান বা নিখোঁজ হন। কেউ তীরে ভেসে আসেন, আবার কারও খোঁজ আর মেলে না। এরা আদৌ মারা গেছেন নাকি অন্য দেশে আটক আছেন- এ নিয়েও স্পষ্ট ধারণা নেই।
জেলেরা অভিযোগ করেন, নিখোঁজদের উদ্ধারে সরকারি উদ্যোগ নেই। পরিবার বা ট্রলার মালিকরা নিজেরাই অনুসন্ধান চালান। কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর সহযোগিতা যথাযথভাবে পাওয়া যায় না বলেও তাদের দাবি।
২০১৯ সালের ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে মহিপুরের হানিফের ট্রলার ১৯ জেলেসহ নিখোঁজ হয়। সেই ট্রলারের সোহেল শরীফের পরিবার এখনো তার কোনো খোঁজ পায়নি।
নিখোঁজ জেলেদের পরিবার জানায়, উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। দাদন ও এনজিও কিস্তির চাপ সামলাতে কিশোররাও জেলে পেশায় নামছে।
লালুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত হাসন তপন বিশ্বাস বলেন, নিখোঁজ জেলেরা জীবিত না মৃত- এমন প্রমাণ না থাকায় পরিবারগুলোকে ওয়ারিশ সনদ দেওয়া যায় না। ফলে তারা সামাজিক সুরক্ষার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
জেলেরা বলেন, নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি ট্রলারে ১৪ ধরনের জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম থাকার কথা। কিন্তু মালিকদের অবহেলা ও অর্থ সংকটে অধিকাংশ ট্রলারেই নেই লাইফ জ্যাকেট, বয়া কিংবা জিএসএম সিস্টেম।
আলীপুর-কুয়াকাটা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আনছার উদ্দিন মোল্লা বলেন, প্রতিটি ট্রলারে জিএসএম সিস্টেম থাকা জরুরি। তবে এখনো সব ট্রলারে তা যুক্ত হয়নি। অন্য দেশে আটক জেলেদের ফেরাতে কূটনৈতিক উদ্যোগও নেওয়া দরকার।
মহিপুর রাজা ফিশের মালিক রাজু আহমদ রাজা জানান, গত ১২ বছরে অন্তত ৫০০ জেলে নিখোঁজ হয়েছেন। নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডকে আধুনিক সরঞ্জাম দিয়ে আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজন রয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ৪০০ ট্রলারে জিএসএম সিস্টেম দেওয়া হয়েছে। তবে জনবল ও সরঞ্জাম সংকটে কার্যকরভাবে মনিটরিং সম্ভব হচ্ছে না।
মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুর রউফ জানান, নিবন্ধিত জেলে সমুদ্রে নিহত হলে পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়। তবে নিখোঁজ জেলে পরিবার সেই সহায়তা থেকে বঞ্চিত থাকছে।