সর্বশেষ

ছাতকে এসএসসি সমমান পরীক্ষার ফল বিপর্যয়ে উদ্বেগ

হোম পেজ » সর্বশেষ » ছাতকে এসএসসি সমমান পরীক্ষার ফল বিপর্যয়ে উদ্বেগ
শনিবার ● ১২ জুলাই ২০২৫


ছাতকে এসএসসি সমমান পরীক্ষার ফল বিপর্যয়ে উদ্বেগ

সাগরকন্যা প্রতিবেদক, ছাতক (সুনামগঞ্জ)

২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলে ছাতক উপজেলায় শিক্ষার করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে। সিলেট শিক্ষা বোর্ড, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে সামগ্রিকভাবে পাসের হার আশঙ্কাজনকভাবে কম। সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ছাতকে এবার পরীক্ষার্থী ছিল ৩ হাজার ৩শ ৪৪ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ২ হাজার ৩শ ৩০ জন, পাসের হার ৬৭.৬৫%। জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৭০ জন শিক্ষার্থী। এই চিত্র শিক্ষার মান নিয়ে গভীর উদ্বেগের ইঙ্গিত দিচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুর্বল ব্যবস্থাপনা, নিয়মিত শ্রেণিকক্ষে পাঠদান না হওয়া, একাডেমিক তদারকির অভাব এবং অভিভাবকদের সচেতনতার ঘাটতিই শিক্ষার্থীদের দুর্বল ফলাফলের পেছনে বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বছরের পর বছর একইভাবে খারাপ ফলাফল হলেও যথাযথ প্রশাসনিক পদক্ষেপের অভাবে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। এখনই শিক্ষার মানোন্নয়নে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ না নিলে আগামী বছরগুলোতে ফলাফল আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ছাতকে এবার ৩ হাজার ৩৪৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ২ হাজার ৩শ ৩০ জন, যেখানে পাসের হার মাত্র ৬৭.৬৫%। জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৭০ জন শিক্ষার্থী। একইভাবে, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১ হাজার ৩শ ১৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে কৃতকার্য হয়েছে ৮শ ৬৮ জন, পাসের হার ৬৫.৮৫%। জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৯ জন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চিত্র আরও হতাশাজনক। ৩শ ৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে মাত্র ১শ ৭০ জন, যা পাসের হার ৫৫.৯২%। এই পরিসংখ্যানগুলো ছাতকের শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতাকে প্রকটভাবে তুলে ধরেছে। তবে হতাশার মধ্যেও কিছু প্রতিষ্ঠান ভালো ফল করেছে। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হারে উপজেলার শীর্ষে রয়েছে ছাতক সরকারি বহুমুখী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয় থেকে ১শ ৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৯৬ জন কৃতকার্য হয়েছে এবং ২৪ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে আছে গোবিন্দগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, যেখান থেকে ৩শ ৬৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২শ ২৬ জন পাস করেছে এবং ১২ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এছাড়াও, মঈনপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৭ জন এবং সাউথওয়েস্ট সালেহ আহমদ স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ৬ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। অন্যদিকে, বহু প্রতিষ্ঠানের ফলাফল অত্যন্ত খারাপ হয়েছে। মোগলগাঁও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৩০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ২ জন পাস করেছে, যা পাসের হার ৬.৬৭%। এলংগি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের কারিগরি শাখা থেকে অংশ নেওয়া ৮ জনের কেউই পাস করতে পারেনি। একইভাবে মুনিরগাতি উচ্চ বিদ্যালয়, আজমত আলী উচ্চ বিদ্যালয়, জালালাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় এবং বনগাঁও ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসাসহ বহু প্রতিষ্ঠানে পাসের হার ৫০ শতাংশের নিচে।

উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার শোয়েব আহমেদ বলেন, সারাদেশেই গত বছরের তুলনায় কিছুটা ফল খারাপ হয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় ছাতকও ব্যতিক্রম নয়। তবে এখানকার প্রকৃত অবস্থা জানতে আমাদের আরও কিছু সময় প্রয়োজন। আমি ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষকদের সরাসরি দোষারোপ করতে চাই না। বিগত বছরের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকেও আমরা হিসাবের মধ্যে রাখছি। আমরা অচিরেই শিক্ষকদের সঙ্গে বসে একটি বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করব এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আনিসুর রহমান, যিনি ছাতকে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন, তিনি জানান, আমি মাত্র গত মাসে ছাতকে যোগ দিয়েছি। শান্তিগঞ্জ উপজেলায় আমার মূল দায়িত্ব থাকায় এখানকার সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা এখনো পুরোপুরি অনুধাবন করতে পারিনি। তবে আমি ছাতকের শিক্ষার সার্বিক চিত্র নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং অচিরেই শিক্ষার মানোন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করব। শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাই এখন মূল লক্ষ্য।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) তাপস শীল বলেন, আমরা মাত্র ফলাফল হাতে পেয়েছি এবং তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। এখনই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে না দেখলে ভবিষ্যতে আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। আমরা শিগগিরই শিক্ষকদের নিয়ে একটি বৈঠক করব এবং ফলাফল বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এএমএল/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৬:০৭:০২ ● ৪৯ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ