বাউফলে আনসার ভিডিপি কর্মকর্তার অনিয়মের তদন্ত শুরু

প্রথম পাতা » সর্বশেষ » বাউফলে আনসার ভিডিপি কর্মকর্তার অনিয়মের তদন্ত শুরু
সোমবার ● ২২ জুলাই ২০১৯


বাউফলে আনসার ভিডিপি কর্মকর্তার অনিয়মের তদন্ত শুরু

বাউফল(পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

বাউফলের আনসার ভিডিপি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের তদন্ত শুরু হয়েছে। ওই কর্মকর্তা তার অধীনস্থ আনসার কোম্পানি কমান্ডার, আনসার প্লাটুন কমান্ডার, ইউনিয়ন আনসার প্লাটুন কমান্ডার ও ইউনিয়ন সহকারি আনসার প্লাটুন কমান্ডারদের মাসিক সম্মানী ভাতা থেকে রেভিনিউ ষ্ট্যাম্প ও কল্যাণ তহবিলের নামে মাথা পিছু ২ হাজার ২০০ টাকা করে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। সোমবার (২২ জুলাই) বাউফলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিজুস চন্দ্র দে প্রাথমিকভাবে ওই তদন্ত করেন। তদন্তকালিন সময় উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা ইসমেত আরা তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিজুস চন্দ্র দে বলেন, যে সকল ভুক্তভোগিরা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন তারা আজ উপস্থিত হননি। কিছু আনসার সদস্য ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কমান্ডার উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোন অভিযোগ পাইনি। ভুক্তভোগিরা এসে অভিযোগ করলে এবং অভিযোগ প্রমানিত হলে ইসমেত আরার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে অভিযুক্ত আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা ইসমেত আরা সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। ভবিষ্যতে ফলোআপ খবর প্রকাশসহ কোন ক্ষতি করা হবে না মর্মে রোববার ইসমেত আরা স্থানীয় এক সাংবাদিকের কাছে ৩০ হাজার টাকাও দিয়েছেন বলে গুণজন ওঠেছে। সোমবারের তদন্ত সম্পর্কে ইসমেত আরার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকের কাছে টাকা দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “আমাকে বিরক্ত করছেন কেন? আমিতো আপনাদেরকে খুশি করেছি, ৩০ হাজার টাকা দিয়েছি”। সব সাংবাদিক এক না এবং সবাই টাকা খায় না এমন কথার পর ইসমেত আরা ওই সাংবাদিকের কাছে ফোন করে ৩০ হাজার টাকা ফেরৎ চান ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা ইসমেত আরার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে আনসার সদস্যদের মাসিক সম্মানী ভাতা, পূজা ও নির্বাচনী ডিউটির টাকা থেকে উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সরেজমিন স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক উপজেলা পরিষদ এলাকায় আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা ইসমেত আরার কার্যালয়ের সামনে গিয়ে অপেক্ষা করে জানতে পারেন তিনি একের পর এক ইউনিয়ন আনসার প্লাটুন কমান্ডারকে ডেকে মাস্টার রোলে স্বাক্ষর নিয়ে তাদের প্রাপ্ত মাসিক সম্মানি ভাতা থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা হারে রেখে দিচ্ছেন। এমতাবস্থায় সাংবাদিকরা তার কার্যালয়ের ভিতরে ঢুকে পরিচয় দিয়ে উপস্থিত ইউনিয়ন আনসার প্লাটুন কমান্ডার ও ইউনিয়ন সহকারি আনসার প্লাটুন কমান্ডারদের কাছে তাদের প্র্যাপ্য সম্মানি ভাতার পরিমাণ জানতে চান। এসময় নাজিরপুর ইউনিয়ন আনসার প্লাটুন কমান্ডার মোঃ ওবায়দুল ইসালাম জানান, তার প্রাপ্য সম্মানীর টাকা হচ্ছে ৭২০০। কিন্তু তাকে দেয়া হয়েছে ৫০০০ টাকা। একই অভিযোগ করেন দাশপাড়া ইউনিয়ন আনসার প্লাটুন কমান্ডার গোপাল কৃষ্ণ সাহা এবং বগা ইউনিয়ন আনসার প্লাটুন কমান্ডার আমিনুল ইসলাম। তখন আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা ইসমেত আরাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,“অফিসিয়াল কিছু খরচপাতি আছে এ জন্য ওই টাকা রাখা হয়েছে”। কিসের খরচ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “রেভিনিউ স্ট্যাম্পের খরচ এরপর কল্যান তহবিল”। রেভিনিউ স্টাম্পের দাম কত জানতে চাইলে তিনি বলেন,“১০টাকা”। কল্যান তহবিলে কত জমা হয় জানতে চাইলে বলেন, “কল্যান তহবিলে ৫টাকা জমা হয়”। তাহলে বাকি ২ হাজার ১৮৫টাকা কোথায় যায়? এই প্রশ্নের কোনো সদত্তোর দেননি তিনি।

অক্টোবর ২০১৮থেকে মার্চ ২০১৯ পর্যন্ত মোট ৬ মাসের সম্মানী ভাতা প্রদানের মাস্টার রোলে দেখা গেছে, প্রত্যেক উপজেলা আনসার কোম্পানি কমান্ডারের জন্য বরাদ্ধকৃত সম্মানী ভাতার পরিমান লেখা রয়েছে ৯ হাজার টাকা, উপজেলা আনসার সহকারি কোম্পানি কমান্ডারের ৭ হাজার ৮০০ টাকা, ইউনিয়ন আনসার প্লাটুন কমান্ডারের ৭ হাজার ২০০ এবং ইউনিয়ন সহকারি আনসার প্লাটুন কমান্ডারের ৬ হাজার টাকা। ওই মাস্টার রোলে বিভিন্ন পদমর্যাদার মোট ৩৩ জন আনসার কমান্ডারের নাম এবং বরাদ্দকৃত টাকার পরিমাণ উল্লেখ করা রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে আজকের কাগজসহ একাধিক পত্রিকায় খবর প্রকাশের পর তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

এপি/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২০:০৯:১৫ ● ৩৬৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ