এগিয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ফণী: সারা দেশে নৌ চলাচল বন্ধ

প্রথম পাতা » আবহাওয়া » এগিয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ফণী: সারা দেশে নৌ চলাচল বন্ধ
বৃহস্পতিবার ● ২ মে ২০১৯


এগিয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ফণী: সারা দেশে নৌ চলাচল বন্ধ

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী এগিয়ে আসায় প্রতিকূল আবহাওয়ার শঙ্কায় সারা দেশে সব ধরনের নৌ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ)। সেই সঙ্গে দুর্যোগ মোকাবিলায় বিআইডাব্লিউটিএ-এর সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নৌ-পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার (২ মে) সকালে তিনি বলেন, পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত দেশের সকল রুটে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখতে হবে। ফণী বাংলাদেশ উপকূলের ৯১৫ কিলোমিটারের মধ্যে পৌঁছে যাওয়ার পর সতর্কতার মাত্রা বাড়িয়ে মোংলা, পায়রায় ৭ নম্বর এবং চট্টগ্রামে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।এছাড়া কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে আগের মতই ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া দেশের নদী বন্দরগুলোতে ১ নম্বর বিপদ সংকেত দেওয়া হয়েছে, যা পরে বাড়ানো হতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আফতাব উদ্দীন জানিয়েছেন।
অতি প্রবল এ ঘূর্ণিঝড় ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার বেগের বাতাসের শক্তি নিয়ে শুক্রবার ভারতের পুরীর কাছে গোপালপুর ও চাঁদবালির মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এরপর সন্ধ্যার দিকে ফণী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে পৌঁছাতে পারে বলে জানানো হয়েছে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে। বাংলাদেশে এখনও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব তেমন একটা দেখা না গেলেও শুক্রবার সকাল থেকেই ঝড়ের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব বাংলাদেশের খুলনা অঞ্চলে দেখা যেতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় উপকূল অতিক্রম করার সময় উপকূলীয় নিচু এলাকাগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। পাশাপাশি চলতে পারে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ। বিআইডাব্লিউটিএ-এর জন সংযোগ কর্মকর্তা মোবারক হোসেন মজুমদার বলেন, সাধারণত নদী বন্দরে ২ নম্বর বিপদ সংকেত থাকলে ৬৫ ফুটের চেয়ে ছোট সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তবে উপকূলে বিপদ সংকেত জারি হওয়ায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সব নৌযানকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট অচল: ঘূর্ণিঝড় ফণীর সবশেষ অবস্থান জানতে একসঙ্গে অনেকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে ঢোকার চেষ্টা করায় সাময়িকভাবে অচল হয়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ ওই ওয়েবসাইট। এর মধ্যে আবহাওয়া অধিদপ্তরে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় পুরো অন্ধকারে পড়ে সংস্থাটি। হটলাইনে ফোন করেও মানুষ আবহাওয়ার খবর জানতে পারছিল না। বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ২টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, একসঙ্গে অনেক হিট হওয়ায় ওয়েবসাইট হ্যাং হয়ে গেছে। ওয়েবসাইট ঠিক করতে ঘণ্টা চারেক সময় লাগতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ইন্টারন্টে সংযোগও নেই। আমরা বিটিসিএলের ইন্টারনেট ব্যবহার করি। বিষয়টি বিটিসিএল-কে জানানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের হটলাইন ১০৯০ নম্বরে ফোন করেও মানুষ আবহাওয়ার খবরও জানতে পারছেন না বলে জানান শামসুদ্দিন।
তিনি বলেন, এই সেবাটি (১০৯০ নম্বরে ফোন করে আবহাওয়ার সবশেষ খবর জানা) বিটিসিএল নিয়ন্ত্রণ করে, ওখানেও মানুষ ফোন করে সেবা পাচ্ছে না। এটা বিটিসিএলএর ইস্যু, কিন্তু মানুষ মনে করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের বিষয়। আমরা অন্ধকারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটটি সচল করতে কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, টেকনিশিয়ানরা বলেছেন, সাইট সচল হতে কযেক ঘণ্টা লেগে যাবে।
উপকূলে লাল পতাকা, মাইকিং: অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী এগিয়ে আসায় দেশের উপকূলীয় ১৯ জেলায় দুর্যোগ মোকাবিলায় চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। ঘুর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করার পাশাপাশি সাগর তীরের লোকজনকে সরিয়ে নিতে শুরু হয়েছে মাইকিং। মজুদ করা হচ্ছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিতে থাকা দেশের উপকূলীয় ১৯ জেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি উপকূলীয় সেনা ক্যাম্পগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে। উপকূলীয় জেলার ডিসিদের দুইশ মেট্রিক টন চাল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে জরুরি ত্রাণ কাজের জন্য; এ ছাড়া জরুরি সহায়তার জন্য পাঁচ লাখ টাকা করে দেওয়া আছে জেলা প্রশাসকদের। ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিতে থাকা এলাকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাপ্তাহিক ছুটি এবং অন্যান্য ছুটি বাতিল করে তাদেরকে কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে দেশের ভেতরেও সব ধরনের নৌ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের পর ফণী মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে।  বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই চট্টগ্রাম মহানগরসহ জেলার উপকূলীয় উপজেলাগুলোয় সমুদ্র তীরবর্তী লোকজনকে সরিয়ে নিতে মাইকিং, সাইক্লোন সেন্টারসমূহ প্রস্তুতসহ বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেছে। চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ফণী মোকাবেলায় আমরা সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছি। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে জেলায় দুই হাজার ৭৩৯টি সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকরা প্রস্তুত আছেন। এ ছাড়া শুকনা খাবার মজুদ করা হয়েছে। মেডিকেল টিম গঠনসহ অন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, উপকূলীয় উপজেলাগুলোয় বিশেষ করে সন্দ্বীপ, সীতাকু-, মিরসরাই, আনোয়ারা এলাকায় ইতোমধ্যে মাইকিং চলছে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার জন্য। এছাড়া উপকূলীয় উপজেলাগুলোয় পাকা ধান কেটে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
ভোলা জেলা প্রশাসন ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। জেলার সাত উপজেলা ও জেলা প্রশাসকের দপ্তরে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. মাসুদ আলম ছিদ্দিক জানান, জেলার কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, নৌপুলিশ ও আনসার সদস্যসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতিবন্ধীদের সহায়তায় সাত উপজেলায় ৮০ সদস্যের আটটি টিম গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের সব কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, গত বুধবার থেকে চরগুলোয় সতর্কতামূলক প্রচারণা শুরু হয়েছে। জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির দুই দফা বৈঠক হয়েছে।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দুর্যোগ প্রস্তুতিবিষয়ক একাধিক সভা করা হয়েছে। সিপিপির উপ-পরিচালক সাহাবুদ্দিন মিয়া জানান, জেলায় ৬৫৭টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ১০ হাজার ২০০ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে জেলা আবহাওয়া দপ্তরের জুনিয়র আবহাওয়া পর্যবেক্ষক মাহবুব রহমান জানিয়েছেন। ভোলার সিভিল সার্জন রথীন্দ্রনাথ রায় জানান, তিনি বৃহস্পতিবার জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিজে গিয়ে প্রস্তুতিমূলক সভা করেছেন। ২২টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় স্যালাইন, গজ-ব্যান্ডেজ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলে ১০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র, ৩২টি মাটির কিল্লা ও সহ¯্রাধিক স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রেখেছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির নোয়াখালীর সেক্রেটারি শিহাব উদ্দিন শাহিন বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, আশ্রয়কেন্দ্র ও মাটির কিল্লা প্রস্তুতের পাশাপাশি শুকনা খাবার, সুপেয় পানি ও দুর্যোগকালীন তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে তিন লাখ টাকা হাতে রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে রেড ক্রিসেন্টের পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্থানে মাইকিং ও পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১২:২৫:২৬ ● ৬৫৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ