
ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
আদালতে মামলার দীর্ঘসূত্রতা কমানোর পাশাপাশি খুন-ধর্ষণ-অগ্নি সন্ত্রাসসহ গুরুতর অপরাধগুলোর দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা চাই প্রতিটি মানুষ ন্যায়বিচার পাক। সেই ব্যবস্থাটা যাতে নেওয়া হয়, সেটা আপনার নেবেন। আমরা চাই না আমরা যেমন বিচার না পেয়ে কেঁদেছি আর কাউকে যেন এভাবে না কাঁদতে হয়। সকলে যেন ন্যায়বিচার পায়। আমরা চাই, মামলার দীর্ঘসূত্রতা কমাতে হবে। কারাগারে এখনও অনেকেই আছে। কি কারণে যে জেলে সে জানে না। তাদের দোষটা কি তাও তারা জানে না। কি করে আইনগত সহায়তা তারা পাবে সেটাও জানে না। এই বিষয়টা দেখার জন্য আমি ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছি। এসিডদগ্ধ, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারী, প্রতিবন্ধী, পাচারকৃত নারী বা শিশু, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসহ আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন এবং নানা আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার পেতে অক্ষম নাগরিকদের সম্পূর্ণ সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা দেওয়ার কথা বলেন শেখ হাসিনা।
গুরুতর ফৌজদারি অপরাধগুলোতে দ্রুত কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুন, অগ্নিসন্ত্রাস, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা, ধর্ষণসহ নানা ধরনের সামাজিক অনাচার চলছে, এগুলোর বিচার যেন খুব দ্রুত হয় এবং কঠোর শাস্তি হয় যাতে এর হাত থেকে দেশ ও জাঁতি রক্ষা পেতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি মানুষ ন্যায় বিচার পাক, সে ব্যবস্থাটা যাতে নেয়া হয়। কারণ আমি চাই না আমরা যে রকম বিচার না পেয়ে কেঁদেছি আর কাউকে যেন এভাবে কাঁদতে না হয়। সকলেই যেন ন্যায়বিচার পেতে পারে।
বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বিচার বিভাগের সর্বত্র পৌঁছে দিতে সরকারের উদ্যোগ এবং ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বস্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এমন একটি সমাজ বিনির্মাণ করতে চাই যেখানে ধনী-দরিদ্রের কোনো বৈষম্য থাকবে না এবং জনগণ মৌলিক অধিকারসমূহ ভোগ করে নিজেরা নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন করতে পারবেন।
তিনি বলেন, সরকারি আইন সহায়তা কার্যক্রম বৈষম্য দূর করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তৃণমূল পর্যায়ে এ কার্যক্রমের বিস্তার ঘটিয়ে এটিকে একটি স্থায়ী প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে আমি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, দাতা গোষ্ঠী, আইনজীবী, বিচারকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
অ্যাসিডদগ্ধ নারী-পুরুষ, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা মহিলা, প্রতিবন্ধী, পাচারকৃত নারী বা শিশু, ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা, নৃ-গোষ্ঠীসহ আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার পেতে অক্ষম নাগরিকদের সম্পূর্ণ সরকারি অর্থ ব্যয়ে আইনগত সহায়তা প্রদান করার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনগত সহায়তা কমিটি গঠিত হয়েছে এবং সুপ্রিম কোর্টেও অসহায়-দুঃস্থ বিচারপ্রার্থীগণ সরকারি আইনি সেবা পাচ্ছেন। বিগত ১০ বছরে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৯০ জনকে সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। একই সময়ে এ কার্যক্রমের আওতায় মোট ১ লাখ ৬৬৮টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
লিগ্যাল এইড অফিসের সফলতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে গত চার বছরে প্রি-কেইস ও পোস্ট-কেইস মিলিয়ে মোট ১৭ হাজার ৯২৯টি এডিআর বা আপোশ মধ্যস্থতার উদ্যোগ গ্রহণ এবং এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫১৩ জন বিচারপ্রার্থী শান্তিপূর্ণভাবে আপস-মীমাংসার সুফল ভোগ করেছেন।
মামলা দীর্ঘসূত্রতা ও জট কমাতে অধঃস্তন আদালতের জন্য বিচারক নিয়োগ, নতুন নতুন আদালত, ট্রাইবুন্যাল স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টি ও নিয়োগ, উচ্চতর প্রশিক্ষণসহ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
এফএন/এমআর