আত্মসমর্পণ করা মাদক ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রথম পাতা » জাতীয় » আত্মসমর্পণ করা মাদক ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে: প্রধানমন্ত্রী
বুধবার ● ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৯


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ঢাকা সাগরকন্যা অফিস ॥
মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত যারা আত্মসমর্পণ করছেন তাদের সরকার আর্থিক সহায়তা দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া সমাজিক সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশকে মাদকমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। বুধবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে আওয়ামী লীগের সদস্য দিদারুল আলম এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফজারীর সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে মাদক নির্মূলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মাদক সেবন, ব্যবসা ও সরবরাহ একটি অপরাধ। এটি বোঝানোর ফলে মানুষের মধ্যে সচেতনতা এসেছে। মাদকসেবীদের নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা ও কাউন্সিলিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে তারা যাতে মাদকসেবন ছেড়ে দেয় সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত যারা আত্মসমর্পণ করছে তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারণ যারা এই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে তারা যাতে অন্য কিছু করতে পারে সেই ব্যবস্থা নেবো। আমি অভিভাবকদেরকেও বলবো সন্তানের দিকে ল্য রাখতে, তারা কি করে, কোথায় যায় সেদিকে ল্য রাখতে হবে। সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে সুস্থ সমাজ গড়ে তোলার জন্য সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ এলাকায় লোকজন যাতে মাদকাসক্ত না হয় সেদিকে ল্য রাখতে হবে। অন্য সব জনপ্রতিনিধিদেরও একইভাবে নজর রাখতে হবে এবং ভূমিকা রাখতে হবে মানুষ যাতে মাদক থেকে দূরে থাকে। জঙ্গি দমন অভিযানের মতো আমরা মাদক নির্মূলের উদ্যোগ নিয়েছি। সমাজকে মাদকমুক্ত করতে সীমান্তবর্তি জেলাগুলোতে চোরাচালান এবং মাদক পাচার যাতে বন্ধ হয় সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ েেত্র আইন করে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জেলায় জেলায় মাদক নিরাময় কেন্দ্র করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে রাজস্ব আসবে ৪০০ কোটি টাকা:
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাই-১ থেকে বছরে ৩৫০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা রাজস্ব আসবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিদেশি স্যাটেলাইটকে আনুমানিক যে ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ভাড়া দেয়, সেটা সাশ্রয় হবে বলেও তিনি জানান। প্রশ্নোত্তর পর্বে মো. আসলাম হোসেন সওদাগরের এক লিখিত প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ তথ্য জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহার করে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল তাদের সম্প্রচার কাজ সম্পন্ন করতে পারছে। ইতোমধ্যে ডিটিএইচ (ডাইরেক্ট টু হোম) সার্ভিসের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি চ্যানেল অনুষ্ঠান সস্প্রচার করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চারটি টিভি চ্যানেল (বিটিভি, বিটিভি ওয়ার্ল্ড, সংসদ টিভি, বিটিভি চট্টগ্রাম) সরাসরি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। বেসরকরি চারটি টিভি চ্যানেল (একাত্তর টিভি, সময় টিভি, বৈশাখী টিভি ও এনটিভি) সরাসরি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। সমুদ্রগামী বাণিজ্যিক জাহাজ ও মৎস্য আহরণকারী জাহাজগুলোর নিরাপদ চলাচল ও গতিপথ নিয়ন্ত্রণে কার্যক্রম গ্রহণের কাজ চলমান। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে ই-লার্নিং, টেলিমেডিসিন, ই-কৃষির মতো নতুন নতুন সেবার সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আপদকালীন সময় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন টেলিকমনিকেশন সেবা দেওয়া যাবে। দেশের দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সুবিধা সম্প্রসারণ করা যাবে। যেমন-চিকিৎসাসেবায় স্যাটেলাইট ব্যবহারের ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। ইতোমধ্যে আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রাপ্তির সুবিধা নেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে শুধু দেশি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোই বছরে আনুমানিক ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশি স্যাটেলাইট প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভাড়া দিয়ে আসছে। এছাড়াও অন্য প্রতিষ্ঠানও বিদেশি স্যাটেলাইট থেকে সেবা নিয়ে আসছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটি-১ ব্যবহারের মাধ্যমে উল্লিখিত খাতে ব্যয় করা বিরাট অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে সর্বমোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। বিশ্ব বাজারে ট্রান্সপন্ডারের মূল্য সময়ের সঙ্গে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করে। বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাটের সব ট্রান্সপন্ডার থেকে বছরে ৪০ মিলিয়ন থেকে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রাজস্ব আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে। যা বাংলাদেশি টাকায় আনুমানিক ৩শ ৫০ থেকে ৪শ কোটি টাকা।

গণপরিবহনের সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে:
মানুষের সমস্যা জানার ও তা সমাধানের চেষ্টা করি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর যানজট নিরসন এবং গণপরিবহনের সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। প্রশ্নোত্তর পর্বে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ ও মুজিবুল হক চুন্নুর পৃথক পৃথক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, রাজনীতি করি মানুষের জন্য। মানুষের সমস্যা কি তা জানার চেষ্টা করি এবং সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি। চেষ্টা করি কিভাবে মানুষের কল্যাণ করা যায়। আমি মনে করি মতা নিজের ভোগ করার বিষয় না, মতা মানে জনগণের সেবা করার বিষয়। বাংলাদেশের মানুষের কিভাবে উন্নয়ন করতে পারি সেই ল্য নিয়েই কাজ করি।

রাজধানীর যানজট নিরসনে সরকারের বিভিন্ন পদপে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বড় বড় শহরে যেখানেই যান ট্রাফিক সমস্যা আছে। জনসংখ্যা বাড়ছে, মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়ছে। ফলে মানুষ গাড়ি কিনছে বেশি, চালাচ্ছে বেশি। আমি নিজে কোথাও যাই না। অফিস এবং যেখানে কর্মসূচি থাকে সেখানে ছাড়া অন্য কোথাও যাই না। কারণ আমি কোথাও গেলে ট্রাফিক সিগন্যাল বন্ধ হয়ে যায়। আমার গাড়ি বহরে প্রথম দিকে ৫২টি গাড়ি ছিলো। আমি সেটা কেটে দিয়ে ৮টি করেছি। এর কম করলে যারা সিকিউরিটির দায়িত্বে রয়েছেন তরা মানবেন না।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা যখনই মতায় এসেছি তখনই গণপরিবহনের উপর গুরুত্ব দিয়েছি। একসময় যারা মতায় ছিলো তারা বিআরটিসি সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছিলো। কারণ বিআরটিসি লাভজনক পরিবহন নয়। আমরা মতায় এসে বিআরটিসি সার্ভিস চালু করেছি, বিআরটিসি বাস কিনেছি। আন্দোলনের নামে ৪/৫শ’ বাস পুড়িয়ে দিয়েছিলো। আমরা মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসসহ যেসব প্রকল্প হাতে নিয়েছি, তা সবই গণপরিবহনের সমস্যা সমাধানের আওতায়। বিআরটিসি বহরে নতুন নতুন বাস কিনছি যাতে গণপরিবহন সমস্যা দূর হয় বলেন প্রধানমন্ত্রী।

রাজধানীর আশপাশে ৮টি স্যাটেলাইট সিটি নির্মাণের পরিকল্পনা:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনসংখ্যার চাপ কমাতে রাজধানী ঢাকার আশপাশে ৮টি স্যাটেলাইট সিটি নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য বেনজীর আহমদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, জনসংখ্যার চাপ কমানোর জন্য ইতোপূর্বে রাজধানীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ৪টি স্যাটেলাইট সিটি নির্মাণের ল্েয পিপিপি পদ্ধতিতে প্রকল্প গ্রহণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রকল্পগুলো হচ্ছে, বংশী-ধামরাই স্যাটেলাইট টাউন উন্নয়ন, ধলেশ্বরী-সিংগাইর স্যাটেলাইট টাউন উন্নয়ন, ইছামতি-সিরাজদিখান স্যাটেলাইট টাউন উন্নয়ন ও সাভার স্যাটেলাইট টাউনে হাইরাইজ এপার্টমেন্ট প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পগুলো পিপিপি পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের ল্েয কার্যক্রম চলছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ছাড়া গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকায় ৪টি স্যাটেলাইট সিটি বিশেষ করে ঢাকার উত্তরে ও দেিণ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপ (রাজউক) ২টি এবং জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপ ঢাকার পশ্চিমে ও দেিণ ২টি প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি বলেন, প্রকল্পগুলো হচ্ছে, কেরাণীগঞ্জ মডেল টাউন প্রকল্প, বন্যা প্রবাহ এলাকা, জলাশয় সংরণ ও কমপ্যাক্ট টাউনশিপ কেরাণীগঞ্জ মডেল টাউন প্রকল্প, ঢাকা দেিণ কেরাণীগঞ্জ উপজেলায় আবাসিক প্লট উন্নয়ন প্রকল্প ও ঢাকার পশ্চিমে সাভার উপজেলায় আবাসিক প্লট উন্নয়ন প্রকল্প।

এফএন/কেএস

বাংলাদেশ সময়: ২০:০১:৫৪ ● ৪২৬ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ