ইজতেমার সময় বাড়ল একদিন

প্রথম পাতা » ইসলামী জীবন » ইজতেমার সময় বাড়ল একদিন
মঙ্গলবার ● ৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৯


ফাইল ছবি
ঢাকা সাগরকন্যা অফিস ॥
তাবলিগ জামাতের সবচেয়ে বড় সম্মিলন বিশ্ব ইজতেমার সময় একদিন বাড়িয়ে চার দিন করা হয়েছে। মঙ্গলবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ে তাবলিগের দুইপরে সঙ্গে বৈঠকের পর ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ এই ঘোষণা দেন।

সন্ধ্যায় নিজের দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বিশ্ব ইজতেমা একদিন বাড়িয়ে চারদিন করা হয়েছে। প্রথম দুই দিন মাওলানা জোবায়ের ও পরের দুই দিন সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামের ব্যবস্থাপনায় ইজতেমা হবে। আখেরি মোনাজাত কে পরিচালনা করবেন, সে সিদ্ধান্ত তাবলিগের মুরুব্বিরা ঠিক করবেন বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। কয়েক লাখ লোকের জমায়েতের কারণে বিশ্ব ইজতেমাকে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম সম্মিলন বলা হয়। প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন হলেও তাবলিগ জামাতের নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে এবার তা স্থগিত হয়ে যায়।

এই পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সম্প্রতি দুই পরে ‘মুরুব্বিদের’ নিয়ে বৈঠকে বসেন। পরদিন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ঘোষণা দেন, এবার ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে তিন দিন ইজতেমা হবে। সেই সিদ্ধান্ত বদলে এখন তাবলিগের বিবদমান দুই পরে তত্ত্বাবধানে দুই দিন করে চারদিন ইজতেমা ঠিক হল। ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভি এবার ইজতেমায় আসছেন না বলে জানান প্রতিমন্ত্রী আবদুল্লাহ।  সাদ সাহেব আসবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বলেন তিনি। উপমহাদেশে সুন্নি মতাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় সংঘ তাবলিগ জামাতের মূলকেন্দ্র ভারতের দিল্লিতে।

মাওলানা সাদের দাদা ভারতের ইসলামি প-িত ইলিয়াছ কান্ধলভি ১৯২০ এর দশকে তাবলিগ জামাত নামের এই সংস্কারবাদী আন্দোলনের সূচনা করেন। মাওলানা ইলিয়াছের মৃত্যুর পর তার ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ এবং তারপর মাওলানা ইনামুল হাসান তাবলিগ জামাতের আমিরের দায়িত্ব পালন করেন। মাওলানা ইনামুলের মৃত্যুর পর একক আমিরের বদলে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার দেওয়া হয় একটি শুরা কমিটির উপর। মাওলানা জুবায়েরের মৃত্যুর পর মাওলানা সাদ আমিরের দায়িত্ব নেন এবং একক নেতৃত্বের নিয়ম ফিরিয়ে আনেন। কিন্তু মাওলানা জুবায়েরের ছেলে মাওলানা জুহাইরুল হাসান তখন নেতৃত্বের দাবি নিয়ে সামনে আসেন এবং তার সমর্থকরা নতুন করে শুরা কমিটি গঠনের দাবি জানান। কিন্তু সাদ তা প্রত্যাখ্যান করলে বিরোধ বড় আকার ধারণ করে। নেতৃত্ব নিয়ে দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজ এবং দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুসারীদের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে গত বছর জানুয়ারিতে ঢাকায় বিশ্ব ইজতেমার সময়। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করে আসা সাদ কান্ধলভি বিরোধীদের বিােভের মুখে পড়েন। শেষ পর্যন্ত ইজতেমায় অংশ না নিয়েই তাকে ঢাকা ছাড়তে হয়।

এরপর দুই পরে কোন্দল চলতে থাকলে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে নির্ধারিত বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব গত নির্বাচনের আগে স্থগিত করা হয়। কিন্তু তার মধ্যেই সাদপন্থিরা ডিসেম্বরের শুরুতে পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা করার ঘোষণা দিলে দেওবন্দপন্থিরা টঙ্গীর ইতজেমা মাঠ দখল করে পাহারা বসায়। ১ ডিসেম্বর ভোর থেকে সাদের অনুসারী শত শত মানুষ টঙ্গীর পথে রওনা হলে পরিস্থিতি বিস্ফোরন্মুখ হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে দুই পরে লোকজন বাঁশ ও লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে পড়ে প্রাণ যায় সত্তর বছর বয়সী এক বৃদ্ধের, দুই শতাধিক মানুষ আহত হন। পরে দুইপরে অনুসারীদের বের করে দিয়ে ইজতেমা মাঠের নিয়ন্ত্রণ নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলছেন, ইজতেমায় যে কোনো ধরনের গোলমাল না হয় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সামরিক বাহিনীর সদস্যদেরও মোতায়েন করা হতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অতিথিরা যেন আসতে পারেন, ভিসা সংক্রান্ত কোনো সমস্যা যাতে না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

এফএন/কেএস

বাংলাদেশ সময়: ১৬:০৪:৩৫ ● ৪৯৬ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ