বানারীপাড়ায় পেঁয়াজ সংকট

প্রথম পাতা » বরিশাল » বানারীপাড়ায় পেঁয়াজ সংকট
শুক্রবার ● ২৯ নভেম্বর ২০১৯


---

বানারীপাড়া (বরিশাল) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

বানারীপাড়ায় পিয়াজ আমদানী কম ও কেজি প্রতি ২৫০ টাকা দাম হওয়ার কারণে চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে বন্দর বাজারের আড়ৎদ্দার ব্যাবসায়ীরা গ্রেফতার এড়াতে ও জেল-জড়িমানার ভয়ে মোকাম থেকে বেশি দাম দিয়ে পিয়াজ আমদানী করতে চাইছেন না বলে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে বন্দর বাজার একাধিক ব্যাবসায়ী বলেছেন, সম্প্রতি ভারত থেকে পিয়াজ আমদানী বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ব্যাবসায়ীরা কম খরচে পাশর্^বর্তী বার্মা থেকে পিয়াজ আমদানী শুরু করেছিলেন। ওই সময় ব্যাবসায়ীরা বাজারে ২৪-২৫ টাকা কেজি দামের পিয়াজ পাইকারী ৬০-৬৫ টাকা থেকে শুরু করে খুচরা ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি করছিলেন। ওই সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে পিয়াজ আমদানী কারক ব্যাবসায়ীদের জেল জড়িমানা শুরু করেন। ফলে ব্যাবসায়ীরা জেল জড়িমানা ও গ্রেফতার এড়াতে পিয়াজ আমদানী কমিয়ে দেন। ফলে বাজারে প্রতিনিয়ত পিয়াজের দাম বাড়তে থাকে। এক্ষেত্রে বন্দর বাজারের ব্যাবসায়ীরা ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পিয়াজ আমদানী না করার কারণে ভোক্তারা এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
বানারীপাড়া বন্দর বাজারের আরোৎদ্দার পট্রির ব্যাবসায়ী মো. রিপন মিয়া বলেন, ভারত থেকে পিয়াজ আমদানী বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর পাশর্^বর্তী বার্মা, চিন, তুরস্ক সহ বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে ব্যবসায়ীদের সুলকোমূক্ত পিয়াজ আমদানী ঘোষনা করা হলে ব্যাবসায়ীরা প্রতিযোগীতার মার্কেটে অধিক লাভের আসায় ফ্রিজিয়ান জাহাজে করে বেশি বেশি পিয়াজ আমদানী করতেন। এক্ষেত্রে বাজারে চাহিদার চেয়ে পিয়াজ আমদানী বেশি হলে দামও অনেকটা কমে যেত। ব্যাবসায়ী রিপন মিয়া বলেন, এর আগে ভারতের বিভিন্ন সিমান্ত থেকে দৈনিক ২-৩’শ ট্রাকে কম পক্ষে ৫-৭’শ মেট্রিক টন পিয়াজ বাংলাদেশে ডোকতো। ফলে ভারতীয় পিয়াজ বাজার দখল করে নেয়ার কারণে বন্দর বাজার ব্যাবসায়ীরা বার্মা ও চিন থেকে পিয়াজ আমদানী না করে শুধু মাত্র চিন থেকে রসুন ও আদা আমদানী করে আসছিলেন। ফলে বাজারে চিন থেকে আমদানী করা আদা (পরিস্কার মোটা) ও রসুন ক্রেতাদের মার্কেট দখল করে নিয়েছেন। এবিষয়ে বন্দর বাজারের প্রবীন ব্যাবসায়ী তপন কুমার কুন্ডু সহ একাধিক ব্যাবসায়ী জানান, আমাদের দেশীয় রসুন ও আদা গায়ে একটু চিকন এবং রংটা হালকা কালসে হওয়ার কারণে বেশির ভাগ ক্রেতারা সেটি না কিনে চায়নার রসুন ১৪০ টাকা কেজি ও গায়ে মোটা পরিস্কার রংয়ের আদা ১১০ টাকা কেজি দরে কিনে নিচ্ছেন। তিনি দেশের ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী চাষিদের পিয়াজ, আদা ও রসুনসহ প্রয়োজনীয় কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে তিনি মাঠ পর্যায়ের কৃষি ও উপ-সহকারী কৃষি অফিসারদের মাধ্যমে চাষিদের আগ্রহী করার দাবী জানিয়েছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওলিউল আলম বলেন, এদেশের কৃষি উন্নয়নের দ্বারা অব্যাহত রাখার জন্য আমরা চাষিদের পাশে থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছি।
অপরদিকে পিয়াজের পাশাপাশি বাজারে সব্জী ও মাছের দাম পূর্বের চেয়ে একটু বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। একারণে ক্রেতারা বাজারে এসে বাজেটের বেশি খরচ করার পর হতাস হয়ে বাড়ি ফিড়ছেন।
শুক্রবার দুপুরে বানারীপাড়া বন্দর বাজারের সব্জী ব্যাবসায়ী মো.আব্দুল জলিল জানান, ২৩ টাকা কেজি দারের আলু ৭ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৩০ টাকা ও প্রতি কেজি সব্জীর দাম ১০-২০ টাকা বেশি দামে বেগুন ৬০ টাকা, লাউ (১টি) ৬০ টাকা, সিম ৬০ টাকা, ফুলকপি ৮০ টাকা, ওলকপি ৫০টাকা, টমেটো ১০০ টাকা ও গাজর ১২০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৩৫ টাকা, দু’টি লাউয়ের ডগা ৪০-৫০ টাকা, ধনে পাতা ৪০০ টাকা, কাচা মরিচ ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। এদিকে বন্দর বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫৪০ টাকা ও খাশির মাংস ৮০০ টাকা এবং বয়লার ১২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলেও বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মাছের মধ্যে চেলা,পুটি, খলিসা, চ্যাং, তেলাপিয়া, পাংগাস, কৈ, সিলভারকাপ, গ্লাসকাপ ও মৃগেল মাছের দাম স্বাভাবিক রয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে বন্দর বাজারে এসব মাছ প্রতি কেজি ১২৫ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করেছেন বলে মাছ ব্যাবসায়ী মো.মাসুম জানান। এছাড়াও পূর্বের চেয়ে প্রতি কেজি মাছের দাম ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা বেড়ে রুই-কাতলা ২৫০ টাকা, ইলিশ (৪০০-৬০০ গ্রাম) ৭৫০ টাকা, চিংড়ি ৬০০-৯০০টাকা, সিং ৬০০-৭০০ টাকা ও পাবদা ৪৫০-৫৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আব্দুল্লাহ্ সাদীদ জানান, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বাজার দর বাড়াতে না পারেন, সে ব্যাপারে নিয়মিত মনিটরিং করা হবে।

জিএমআর/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৬:১১:৪২ ● ৪১৪ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ