অহংকারের মাস ডিসেম্বর ৪ ডিসেম্বর: মুক্তিযুদ্ধের গতি বদলে দেওয়া ঐতিহাসিক দিন

হোম পেজ » মুক্তিযুদ্ধ » অহংকারের মাস ডিসেম্বর ৪ ডিসেম্বর: মুক্তিযুদ্ধের গতি বদলে দেওয়া ঐতিহাসিক দিন
বৃহস্পতিবার ● ৪ ডিসেম্বর ২০২৫


৪ ডিসেম্বর: মুক্তিযুদ্ধের গতি বদলে দেওয়া ঐতিহাসিক দিন

মো. মহসীন খান
ডিসেম্বর বাঙালির জীবনে অহংকারের মাস। দিকে দিকে উড়লো বিজয় পতাকা। মহান বিজয়ের মাস। এ মাসেই একে একে মুক্ত হতে থাকে শত্রুকবলিত বাংলার গ্রাম-গঞ্জ-শহর-বন্দর। প্রতিদিনই নতুন নতুন মুক্ত এলাকায় উড়তে থাকে বিজয়ের পতাকা। বাঙালিদের বিজয়- পাকিস্তান ও রাজাকারদের পরাজয়ের মাস।
৪ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার, ১৯৭১- একাত্তরের এই দিনে বাঙালির বিজয় যখন প্রায় নিশ্চিত হয়ে ওঠে, তখন মুক্তিযুদ্ধকে বাধাগ্রস্ত ও বিলম্বিত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আনা হয়। একই সঙ্গে প্রস্তাবে বলা হয়, ভারত ও পাকিস্তান যেন নিজ নিজ সীমান্ত থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়।
কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন এ প্রস্তাবে ভেটো দিলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বাধা দেওয়ার মার্কিন ও পাকিস্তানি অসৎ পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটো দেয়ায় ব্যর্থ হলো মার্কিনদের যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ। নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নাকচ হয়ে গেলে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রস্তাবটি আবারও তোলা হয়। এখানে প্রস্তাবটির পক্ষে ১০৪ ভোট এবং বিপক্ষে ১১ ভোট পড়ে। তবে সাধারণ পরিষদের এ ধরনের প্রস্তাবে বাধ্যবাধকতা না থাকায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অব্যাহত থাকে।
৪ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনী যৌথভাবে পাক সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। ভারতীয় বিমানবাহিনী বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে আক্রমণ চালাতে থাকে। বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ঢাকার আকাশে বিমানযুদ্ধে দুটি পাক স্যাবর জেট ধ্বংস হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভারতীয় বিমানবাহিনী ঢাকা, লালমনিরহাট, সৈয়দপুর, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জসহ নানা এলাকায় হামলা চালিয়ে পাক সেনাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে।
যুদ্ধে যৌথ বাহিনী বীরবিক্রমে বাংলাদেশের একের পর এক শহর-বন্দর দখল করতে থাকে। ৪ ডিসেম্বর দিনটি স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর বাঙালির জন্য তেমনি খুশির খবর বয়ে আনে, তেমনি মুক্তিযুদ্ধে জয়ের একটি নতুন অধ্যায়ও রচিত হয়।
বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ড গঠনের পর একে একে ভেঙে পড়তে থাকে হানাদার বাহিনীর দুর্ভেদ্য প্রতিরক্ষাব্যূহ। তাদের দরজায় পরাজয়ের বার্তা কড়া নাড়তে থাকে। এদিন ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল মানেকশ’র নির্দেশে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ দিক থেকে ভারতীয় মিত্রবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধে যোগ দেয়।
মুক্তিযোদ্ধারা সিলেট, মৌলভীবাজার, ময়মনসিংহ, জামালপুর, ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, যশোর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, রাজশাহী, বগুড়াসহ পাকবাহিনীর প্রধান প্রধান ঘাঁটির ওপর সাঁড়াশি আক্রমণ চালান। এতে পাকবাহিনীর মনোবল ভেঙে পড়ে। বিভিন্ন স্থানে পাক সৈন্যরা আত্মসমর্পণ করতে শুরু করে।
এদিকে পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর স্যাবর জেট এদিন উত্তর-পশ্চিম ভারতের কাশ্মীর, আগরতলা ও কলকাতার দমদম বিমানবন্দরে ৮ দফা বোমাবর্ষণ করে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভারতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ঘোষণা দেন- পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আগা শাহী এদিন ওয়াশিংটনে বলেন, ভারতের স্থল আক্রমণের জবাব দিতেই বিমান হামলা চালানো হয়েছে। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এদিন ভাষণে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর ওপর আক্রমণ জোরদার করার নির্দেশ দেন।

–চলবে
লেখক: সাংবাদিক

বাংলাদেশ সময়: ৬:৪২:৪২ ● ৭৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ