
সাগরকন্যা প্রতিবেদক, ছাতক (সুনামগঞ্জ)
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) দীর্ঘদিন ধরে চলমান ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের পর উপজেলা প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলামকে অবশেষে বদলি করা হয়েছে।
রবিবার (২৩ নভেম্বর) জারি করা এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ের আদেশে তাঁকে ছাতক থেকে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় পদায়ন করা হয়। এই আদেশকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ঠিকাদার সম্প্রদায় ও সচেতন মহলে নতুন করে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মো. রিয়াজ মিয়াকে সামনে রেখে একটি অর্থ আদায়কারী নেটওয়ার্ক পরিচালিত হতো বলে জানান স্থানীয়রা।
জানা যায়, ছাতকের ১৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান একযোগে প্রধান প্রকৌশলীর কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন উপজেলা প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। অভিযোগে বলা হয়, বিল ছাড়ের আগে নিয়মিতভাবে ২ শতাংশ ঘুষ দাবি, জিপিএস স্কুল প্রকল্প, এসডিআইআর আইআইপি–৩সহ একাধিক প্রকল্পের বিল আটকে ঘুষ আদায়, কাজ পরিদর্শনের নামে অতিরিক্ত সিএনজি ভাড়া চাওয়ার অজুহাতে নথিপত্রে স্বাক্ষর না দেওয়া এবং অপছন্দের ঠিকাদারদের নিয়মিতভাবে হয়রানি করা ছিল তাঁর অভ্যাস। অভিযোগ দায়েরের পর দীর্ঘ চার মাস ধরে কর্তৃপক্ষের কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা না নেওয়ায় এলাকায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
ঠিকাদারদের দাবি, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক গ্রুপের সঙ্গে গোপন সমঝোতার মাধ্যমে গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নে ঘোষিত ১০ কোটি টাকার নতুন প্রকল্পের প্রায় ৫ কোটি টাকার কাজ নির্দিষ্ট ঠিকাদারদের দেওয়ার শর্তে অভিযোগের প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়। তবে ঠিকাদারদের অব্যাহত প্রতিবাদের মুখে শেষ পর্যন্ত রফিকুল ইসলামকে বদলি করার সিদ্ধান্ত নিতে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়। এর আগেও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় দায়িত্ব পালনের সময় তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ঘুষ, স্বেচ্ছাচারিতা ও ঠিকাদার হয়রানির অভিযোগ উঠেছিল এবং ২০২১ সালের তদন্তে সেসব অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছিল, যা সে সময় জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এদিকে ছাতক এলজিইডি অফিসের আরেক কর্মচারী পিয়ন থেকে অফিস সহকারীতে উন্নীত মো. রিয়াজ মিয়াকে ঘিরেও দফায় দফায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। দেশের শীর্ষ জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় “ছাতক এলজিইডি অফিসের পিয়ন রিয়াজ দুর্নীতির বটবৃক্ষ” শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, নিয়ম বহির্ভূতভাবে একটানা দশ বছর একই দপ্তরে বহাল থাকা রিয়াজ মিয়া প্রকল্প অনুমোদন, বিল পাস, ফাইল নড়াচড়া সব ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ‘ঘুষের হার’ নির্ধারণ করে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। সরকারি নথি নির্দিষ্ট ঠিকাদারদের হাতে তুলে দেওয়া, সেবা প্রার্থীদের প্রতি দুর্ব্যবহার ও হয়রানির অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। রিয়াজ মিয়া একটি অসাধু সিন্ডিকেটের অংশ হিসেবে দাপ্তরিক পরিবেশকে নষ্ট করে রেখেছেন বলে জানা গেছে।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলামের ছাতক থেকে ফেঞ্চুগঞ্জে বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এলজিইডি অধিদপ্তরের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী (প্রশাসন) মো. শফিকুল ইসলাম।
এএমএল/এমআর