
সাগরকন্যা প্রতিবেদক, আগৈলঝাড়া (বরিশাল)
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বড় দলের পাশাপাশি অন্যান্য রাজনৈতিক দলের এমপি প্রার্থীরাও ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি এম জহির উদ্দিন স্বপনকে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হাফেজ মাওলানা কামরুল ইসলাম খান এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মো. রাসেল সরদার মেহেদী।
এ সকল রাজনৈতিক দলের উপজেলা সদরে অফিস রয়েছে। নিয়মিত সভা-সমাবেশ ও দলীয় কর্মকাণ্ড চোখে পড়ে। ইউনিয়ন থেকে ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত মূল দল ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কমিটির কার্যক্রম সচল রয়েছে।
আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরে বিএনপির নির্মাণাধীন অফিসে দলীয় কর্মসূচি চলমান রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী সদর রোডের দোতলায় ভাড়া করা অফিসে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র কালীখোলা রোডে নিজস্ব কার্যালয় রয়েছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হলেও বড় দলের পাশাপাশি অন্যান্য দলের প্রার্থীরাও ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার সেঁটে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, হোয়াট্সঅ্যাপ, মেসেঞ্জারে বিভিন্ন গ্রুপ খুলে এমপি প্রার্থী হিসেবে নিজেদের পরিচিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এ আসনে অন্যান্য দলের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর মাজাহারুল ইসলাম নিপু, গণঅধিকার পরিষদ’র এম এইচ হাবিবুর রহমান, মো. ইলিয়াস মিয়া ও মো. নুরুল আমিন, গণতন্ত্র মঞ্চ মনোনীত নাগরিক ঐক্যের মো. স্বপন সরদার এবং বাংলাদেশ জনকল্যাণ পার্টি’র আমিনুল ইসলাম আমিন।
আগামী সংসদ নির্বাচনে তারা বিভিন্ন দল থেকে প্রার্থী হচ্ছেন। এদের বেশিরভাগেরই বিগত দিনে নিজ দলের উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপস্থিতি দেখা যায়নি। এমনকি উপজেলা সদরে অনেক দলের অফিসও নেই। এসব দলের উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি আছে কি না, তাও নিশ্চিতভাবে কেউ বলতে পারছে না।
তবে নগরবাড়ি রোডে ভাড়া করা দোকানে গণঅধিকার পরিষদ’র একটি অফিস থাকলেও অধিকাংশ সময় সেটি বন্ধ থাকে।
বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৫৫টি রাজনৈতিক দল থাকলেও আগৈলঝাড়ায় নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় রয়েছে মাত্র ৩টি দল।
বরিশাল-১ আসনে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৭-৮টি দলের প্রার্থী হওয়ার আভাস মিলেছে। সাধারণ সময়ে এই এলাকায় ৩-৪টি দলের কর্মকাণ্ড চোখে পড়ে।
বরিশাল-১ আসনে বিগত ১২টি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৭ বার, বিএনপি ৩ বার ও জাতীয় পার্টি ১ বার বিজয়ী হয়েছিল। এ কারণে বরিশাল-১ আসনটি রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
এ বিষয়ে রাজিহার গ্রামের শ্রমজীবী মো. জলিল মোল্লা সাগরকন্যাকে বলেন, আগৈলঝাড়ায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও হাতপাখার সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং দেখেছি। এখন অনেক দলের এমপি প্রার্থী দেখতে পাচ্ছি। এদের আগে কখনো দেখিনি, চিনিও না।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোল্লা বশির আহাম্মেদ পান্না সাগরকন্যাকে বলেন, আগৈলঝাড়ায় বিএনপির উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডসহ সহযোগী সংগঠনের আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। নির্বাচনী পরিচালনার জন্য উপজেলা, ইউনিয়ন ও প্রতিটি কেন্দ্রের কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আগৈলঝাড়া উপজেলা আমির অধ্যাপক আলাউদ্দিন মিয়া বলেন, জামায়াতের মূল দলের নেতৃত্বে উপজেলা থেকে গ্রাম পর্যায়ে কমিটি রয়েছে। আমরা সকল দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি গণসংযোগ ও নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশর আগৈলঝাড়া উপজেলা সভাপতি ও বরিশাল-১ আসনের প্রার্থী রাসেল সরদার মেহেদী বলেন, ইসলামী আন্দোলনসহ সহযোগী সংগঠনের তৃণমূল কমিটি রয়েছে। আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে হাতপাখা বিজয়ী করার লক্ষ্যে মানুষের কাছে যাচ্ছি।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রধান সমন্বয়কারী ও দলের এমপি প্রার্থী মাজাহারুল ইসলাম নিপু বলেন, দু’উপজেলায়ই এনসিপির অফিস রয়েছে। দুটি ইউনিয়ন কমিটি হয়েছে, বাকি তিনটি দু-এক দিনের মধ্যে ঘোষণা করা হবে। দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে, আমি জনগণের কাছে গিয়ে দলের ভালো দিকগুলো তুলে ধরছি।
গণঅধিকার পরিষদের আগৈলঝাড়া উপজেলা সভাপতি মো. নাজিরুল ইসলাম সেরনিয়াবাত বলেন, উপজেলা ও ইউনিয়নে গণঅধিকার পরিষদসহ অঙ্গ সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে। তিনটি ইউনিয়ন কমিটি হয়েছে, বাকী দুটি ঘোষণার অপেক্ষায়। তিনজন প্রার্থী থাকলেও চূড়ান্ত তালিকার পর দল যাকে মনোনয়ন দেবে, আমরা তার পক্ষে নির্বাচনী কাজ করবো।
গণতন্ত্র মঞ্চ মনোনীত নাগরিক ঐক্যের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী মো. স্বপন সরদার সাগরকন্যাকে বলেন, ছয়টি রাজনৈতিক দল নিয়ে গঠিত গণতন্ত্র মঞ্চ’র পক্ষে আমি কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি। দলের পক্ষে সাধারণ জনগণের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাইবো।