
জাহিদ ইসলাম, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী)
দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটায়। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকাল থেকে সৈকত এলাকাজুড়ে ছিল পর্যটকশূন্য নীরবতা। হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্ট, দোকানপাট- সবখানেই ছড়িয়ে ছিল এক ধরনের নিস্তব্ধতা।
স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণত বৃহস্পতি ও শুক্রবারে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের উপস্থিতিতে মুখর থাকে কুয়াকাটা। কিন্তু সরকার কর্তৃক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচী ঘোষণার পর হঠাৎ করেই কুয়াকাটা পর্যটন শিল্পে নেমে এসেছে স্থবিরতা। পর্যটকরা নিরাপত্তা বিবেচনায় ভ্রমণ থেকে বৃহস্পতিবার বিরত ছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় হোটেল মালিকরা।
কুয়াকাটায় হোটেল-মোটেল, ঝিনুক ও আচার মার্কেট, খাবার হোটেল, রেস্টুরেন্ট, অটোচালক, মোটরবাইকচালক, ফটোগ্রাফারসহ অন্তত ১৬টি পেশার মানুষ পর্যটক নির্ভর জীবিকা নির্বাহ করেন। পর্যটক না থাকলে তারা চরম অর্থকষ্টে পড়েন।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মাঈনুল ইসলাম সাগরকন্যাকে বলেন, দিনে (বৃহস্পতিবার) দোকান খুলে বসেছিলাম, কিন্তু কোনো ক্রেতা নেই। পর্যটক না থাকলে আমাদের ব্যবসা চলবে কীভাবে?
সৈকতের ফটোগ্রাফার সাইফুল মুন্সী বলেন, সৈকতে আজ কেউ আসেনি ছবি তুলতে। সাধারণত বৃহস্পতিবার দিনে অন্তত ১০-১৫ জনের ছবি তুলি, কিন্তু আজ একজন পর্যটকও পাইনি।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইব্রাহিম ওয়াহিদ বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচি চলতে থাকলে কুয়াকাটা পর্যটক হারাবে। পর্যটক না থাকলে অনেক হোটেল বন্ধ হয়ে যাবে, অনেক কর্মচারী বেকার হয়ে পড়বেন। ১৩ নভেম্বর বুকিংয়ের বেশিরভাগই গেস্ট ক্যানসেল করেছিলেন। তাই আজ বৃহস্পতিবার সৈকত একেবারেই ফাঁকা ছিল।
কুয়াকাটা ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব টোয়াক সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, এখন পর্যটন মৌসুম শুরু হওয়ার কথা, কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পর্যটক কম।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোতালেব শরীফ সাগরকন্যাকে বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির থাকলে পর্যটন ব্যবসা ধ্বংস হয়ে যাবে। কুয়াকাটা পর্যটননির্ভর শহর, এখানে ৭০ শতাংশ মানুষ এই খাতের সঙ্গে জড়িত।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের সহকারী পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে নিয়মিত টহল জোরদার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছি।
স্থানীয় উদ্যোক্তারা মনে করছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা দীর্ঘস্থায়ী হলে কুয়াকাটার মতো গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন এলাকায় বড় ক্ষতি হবে। দ্রুত স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করে পর্যটকদের আগমন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তারা।