এলাকায় উত্তেজনা গলাচিপায় বিএনপি ও গণঅধিকারের মধ্যে সংঘর্ষে আহত ৩১

হোম পেজ » লিড নিউজ » এলাকায় উত্তেজনা গলাচিপায় বিএনপি ও গণঅধিকারের মধ্যে সংঘর্ষে আহত ৩১
শুক্রবার ● ৭ নভেম্বর ২০২৫


 

ঘটনার পর রাতেই বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন হাসপাতালে গিয়ে আহতদের খোঁজ নেন।

সাগরকন্যা প্রতিবেদক, গলাচিপা (পটুয়াখালী)

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চরকাজল ইউনিয়নের চরশিবা এলাকায় বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে নারীসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৩১ জন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে দক্ষিণ কপালবেড়া খলিফা বাড়ির সামনের চৌরাস্তায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহতদের গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

আহতদের মধ্যে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী রয়েছেন- চরশিবা ওয়ার্ড যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস রাঢ়ী, সদস্য সবুজ রাঢ়ী, নূরনবী রাঢ়ী, হাসান রাঢ়ী, কুদ্দুস ব্যাপারী, ইয়াকুব রাঢ়ী, ওমর রাঢ়ী, রাহান রাঢ়ী ও সলেমান রাঢ়ী।

অন্যদিকে গণঅধিকার পরিষদের আহতদের মধ্যে রয়েছেন যুব অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. সোহেল খলিফা, আজমির খলিফা, শাহাবুল খলিফা, আমেনা বেগম, নাঈম খলিফা ও নবীন খলিফা। উভয় দলের আরও কয়েকজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কপালবেড়া বাজারে গণঅধিকার পরিষদের ওয়ার্ড কমিটি গঠনের সভা চলছিল। সভা শেষে নেতাকর্মীরা মোটরসাইকেল শোডাউন দিয়ে ফিরছিলেন। অন্যদিকে ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিএনপির শুভেচ্ছা মিছিল শেষে চরশিবার নেতাকর্মীরাও বাড়ি ফিরছিলেন। পথে দক্ষিণ কপালবেড়া চৌরাস্তায় দুই দলের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়।

নমিনেশন নিয়ে বিতর্কের একপর্যায়ে দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।

আহত যুবদল নেতা ইলিয়াস রাঢ়ী বলেন, ৭ নভেম্বরের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিতে আমরা মিছিল শেষে ফিরছিলাম। তখন গণঅধিকার পরিষদের কর্মীরা অতর্কিত হামলা চালায়। তারা বলেছিল, হাসান মামুন নমিনেশন পাবেন না, গণঅধিকারের নুরুল হক নুরকে দেওয়া হয়েছে। এই নিয়েই হামলা হয়।

আহত আজমিরের মা আমেনা বেগম বলেন, আমার ছেলে মোটরসাইকেল চালক। সভা শেষে বাসায় ফেরার পথে বিএনপির লোকজন তাকে ধরে মারধর করে। আমি ছেলেকে বাঁচাতে গেলে আমাকেও মারে।

আজমিরের বাবা শাহাবুল খলিফা বলেন, আমরা গণঅধিকার পরিষদ করি। আগে থেকেই তাদের সঙ্গে উত্তেজনা চলছিল। আজ সভায় লোক বেশি হওয়ায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে হামলা চালায়।

যুব অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সোহেল খলিফা বলেন, বিএনপির লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালালে আমরা প্রতিহত করার চেষ্টা করি। এতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়।

স্থানীয় ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ৩ নভেম্বর ২৩৭টি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেও পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনে প্রার্থী ঘোষণা স্থগিত রাখেন।

এ কারণে বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাসান মামুন ও নুরুল হক নুরের অনুসারীদের মধ্যে তীব্র বাকবিতণ্ডা চলে।

এর ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে চরশিবায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় নুরুল হক নুরের ভাই ও ঢাকা মহানগর উত্তর যুব অধিকার পরিষদের সহসভাপতি আমিনুল ইসলাম নুর বলেন, আমি এলাকায় ছিলাম না। আমাদের সভা শেষে বিএনপির কর্মীরা হামলা চালিয়েছে। হাসান মামুন নমিনেশন না পাওয়ার কারণে তারা উশৃঙ্খল আচরণ করছে।

ঘটনার পর রাতেই বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন হাসপাতালে গিয়ে আহতদের খোঁজ নেন। তিনি উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ঘটনাটি তদন্তাধীন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি দেখছে। তার ভাষ্যমতে,  (৭ নভেম্বরের) র‍্যালি উপলক্ষে নেতাকর্মীরা সংগঠিত হচ্ছিলেন। প্রোগ্রাম ব্যাহত করার উদ্দেশ্যে হয়তো গণঅধিকারের পক্ষে এ তৎপরতা চালানো হয়েছে।

গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আশাদুর রহমান বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, এটি পারিবারিক প্রভাব বিস্তারজনিত বিরোধ থেকে রাজনৈতিক সংঘর্ষে রূপ নেয়। এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে, ঘটনার পর চর কপালবেড়া ও আশপাশের এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পুলিশ গতকাল রাত থেকে ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে অবস্থান করছে বলে জানিয়েছেন থানা সূত্র।

বাংলাদেশ সময়: ১৫:১৫:৩৪ ● ২০ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ