কুয়াকাটায় সৈকতের ঝুঁকিপূর্ণ ‘সরদার মার্কেট’ অপসারণে নির্দেশ

হোম পেজ » লিড নিউজ » কুয়াকাটায় সৈকতের ঝুঁকিপূর্ণ ‘সরদার মার্কেট’ অপসারণে নির্দেশ
শুক্রবার ● ৩১ অক্টোবর ২০২৫


কুয়াকাটা সৈকতে অনুমোদনহীন ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা ‘সরদার মার্কেট’। ইনসেটে সম্প্রসারণ কাজ ও ডানে অপসারণের নোটিশ।

মেজবাহউদ্দিন মাননু, বিশেষ প্রতিবেদন

জোয়ারের সময় বুক থেকে কোমর সমান পানি থাকে। উত্তাল সাগরের ঢেউয়ের সময় প্রচণ্ড ঝাপটা লাগে। হাইকোর্টের রিট পিটিশন অনুসারে বেড়িবাঁধের বাইরে কুয়াকাটা সৈকত এলাকায় কোনো স্থাপনা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারপরও সাগরের পানির লেভেল দখল করে তোলা আলোচিত চরম ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা ‘সরদার মার্কেট’ আবার সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে। আগে আয়রণ স্ট্রাকচারের ওপর ঢালাই দেওয়া ছিল। ছিল দ্বিতল, অনুমোদনহীন। এরপর এবার করা হচ্ছে তিনতলা। যেন সাগরেরই মালিকানা দাবি করে দাঁড়িয়ে আছে স্থাপনাটি। এটি ধসে পর্যটকসহ মার্কেটের দোকানিদের প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সবশেষ কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) অনুমোদনহীন এই ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা সরদার মার্কেটের নির্মাণকাজ বন্ধ ও অপসারণের নির্দেশনা দিয়েছেন। সেখানে সাত দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইয়াসীন সাদেক উল্লেখ করেছেন, পৌরসভার অনুমোদন ব্যতীত এবং মহামান্য হাইকোর্টের রিট পিটিশন ৫১৬২/২০১১ অনুসারে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বেড়িবাঁধের বাইরে জিরোপয়েন্টে লোহার পাইপ দিয়ে কাঠের পাটাতনের ওপর ঢালাই দিয়ে প্রায় ৪০ ফুট উচ্চতার তিনতলা স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। যা ইমারত আইন, ১৯৫২, স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ২০০৯ এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১৮ জুলাই ২০১৬ তারিখের ৪৩৮ নম্বর স্মারকে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

এই ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা ধসে গিয়ে যেকোনো সময় পর্যটকের প্রাণহানি ঘটতে পারে। ইতিপূর্বে পৌরসভার প্রকৌশলীগণ আপনাকে ওই নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তা সত্ত্বেও নির্দেশ অমান্য করে স্থাপনা বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণ করেছেন। আগামী সাত দিনের মধ্যে স্থাপনাটি অপসারণের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো। অন্যথায় আপনার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৭ এবং ২১ অক্টোবরের মাসিক সভায় সরদার মার্কেটকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা করে সেখানে সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে।

কুয়াকাটা সৈকতের জিরোপয়েন্টের পশ্চিম দিকে এই মার্কেটের স্থাপনায় সাগরের জোয়ারের পানির ঝাপটা লাগে। অস্বাভাবিক জোয়ারে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস তাণ্ডব চালায়। এ কারণে ওই মার্কেটের দোকানিরাও ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক দোকানি জানান, বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের ঢেউ এসে প্রবলবেগে আঘাত হানে। ভয় লাগে। মনে হয়- এই বুঝি সব ভেসে গেল।

সরদার মার্কেটের মালিক সাজেদুল ইসলাম হিরু মিয়াকে ফোন করলে তিনি রিসিভ করেননি। তবে ইতিপূর্বে তিনি জানিয়েছেন, এটি তার মালিকানাধীন জমি। এ নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কয়েকবার বৈঠক হয়েছে। তিনি দাবি করেন, স্থাপনাটি ঝুঁকিপূর্ণ নয়। প্রকৌশলীর পরামর্শ নিয়েই স্থাপনার কাজ করেছেন। তিনিও এখানে ব্যাপক অর্থ লগ্নি করে বিপদে পড়েছেন বলে জানান। তার ভাষায়, ‘এভাবে সাগরে সব বিলীন হয়ে যাবে, আমরাও বুঝতে পারিনি।’

এটি নিয়ে পটুয়াখালী জেলা যুগ্ম জজ আদালতের একটি আদেশ রয়েছে বলেও হিরু মিয়া দাবি করেন। তবে কুয়াকাটার একাধিক পরিবেশকর্মী প্রশ্ন তুলেছেন- হাইকোর্টের রিটে নিষেধাজ্ঞা থাকলে বেড়িবাঁধের বাইরে কীভাবে সৈকতের মধ্যে এমন স্থাপনা রয়েছে?

কুয়াকাটা বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাউছার হামিদ জানান, তিনি বীচ পরিদর্শন করেছেন। এটি একটি অনুমোদনহীন ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা। সৈকত এলাকায় পর্যটকের সবসময় পদচারণা থাকে। এটি ধসে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রাথমিকভাবে অপসারণে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পর্যটকের জন্য নিরাপদ সৈকত রক্ষায় সরকারি নির্দেশনা সবাইকে মানতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫:৫৮:৩৪ ● ১০৮ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ