
সাগরকন্যা প্রতিবেদক, তালতলী (বরগুনা)
সরকারী নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে তালতলী উপজেলা মৎস্য অফিসের মাঠ সহায়ক মোঃ আবুল কাসেম রিঙ্কু ও তার বাবা উপজেলা আওয়ামীলীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক জলিল ফকির সাগরে ইলিশ মাছ শিকার করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাগরে শিকার করা ইলিশ রিঙ্কুর আড়ৎ থেকে তারা সরিয়ে ফেলেছেন- এমন অভিযোগ স্থানীয় জেলে আমির হোসেন ও রুবেলের। ঘটনা ঘটেছে রবিবার দিবাগত গভীর রাতে তালতলী উপজেলার ফকিরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবী করছেন তারা।
জানা গেছে, তালতলী উপজেলার সোনাকাটা গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা মৎস্য অফিসের মাঠ সহায়ক নিষদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা আবুল কাসেম রিঙ্কু ও তার বাবা কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগের উপজেলা শ্রম বিষয়ক সম্পাদক জলিল ফকিরের দুটি ট্রলার অবরোধের আগের দিন শুক্রবার রাতে ফকিরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র থেকে ইলিশ শিকারে সাগরে যায়। সরকারী নির্দেশনা অমান্য করে ওই ট্রলার দুটি সাগরে ইলিশ শিকার করে। জেলেদের অভিযোগ, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইনের নির্দেশে আওয়ামীলীগ নেতা জলিল ফকির ও তার ছেলে মৎস্য অফিসে কর্মকর্তা মাঠ সহায়ক রিঙ্কু সাগরে ইলিশ মাছ শিকার করেছেন। রবিবার দিবাগত গভীর রাতে ইলিশ মাছ নিয়ে ওই ট্রলার দুটি ফকিরহাট ঘাটে আসে। পরে ট্রলারের লোকজন ইলিশ মাছ ড্রামে ভরে রিঙ্কুর মৎস্য আড়তে রাখেন।
স্থানীয় জেলে আমির হোসেন ও রুবেল মাঠ সহায়ক রিঙ্কুর আড়তে বস্তায় ভরে রাখা মাছ আটক করেন, কিন্তু রাতেই ওই আড়ৎ থেকে ম্যানেজার আল আমিন, জলিল ফকির ও রিঙ্কু মাছ সরিয়ে ফেলেন- এমন খবরে স্থানীয় জেলেরা ওই আড়তে এসে জড়ো হয়।
উল্লেখ্য, আবুল কাসেম রিঙ্কু উপজেলা ছাত্রলীগ সহ সম্পাদক পদে রয়েছেন। ২০২১ সালে সাবেক সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর প্রভাব খাটিয়ে তিনি উপজেলা মৎস্য অফিসে মাঠ সহায়ক পদে চাকুরী নেন।
জেলে আমির হোসেন ও রুবেল বলেন, ট্রলারের শব্দ পেয়ে মৎস্য ঘাটে এসে দেখি উপজেলা মৎস্য অফিসের মাঠ সহায়ক ছাত্রলীগ নেতা আবুল কাসেম রিঙ্কু ও তার বাবা আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল জলিল ফকিরের দুটি ট্রলারে অনেক ইলিশ মাছ। ট্রলারের জেলেরা ওই মাছ বস্তা ও ড্রামে ভরে রিঙ্কুর আড়তে নেয়। আমরা এর প্রতিবাদ করলে তারা আমাদের প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে ওই মাছ রাতেই তাদের বাড়ীতে নিয়ে যায়। তারা আরো বলেন, অবরোধের দিন সন্ধ্যায় রিঙ্কু ও তার বাবার দুটি ট্রলার ইলিশ শিকারে সাগরে যায়। রবিবার দিবাগত গভীর রাতে ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরে আসে। রিঙ্কু ও তার বাবা জলিল ফকির উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার প্রভাবখাটিয়ে সরকারী নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সাগর মাছ শিকার করছে।
তালতলী উপজেলা মৎস্য অফিসের মাঠ সহায়ক আবুল কাসেম রিঙ্কুর আড়তের ম্যানেজার আল আমিন বলেন, এই মাছ অনেক আগের। তবে তাজা রক্ত মাখা মাছ আড়তে এলো কিভাবে? এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি নিরব থাকেন। তিনি আরো বলেন, রাতেই আড়ৎ থেকে মাছ সরিয়ে ফেলে হয়েছে।
তালতলী উপজেলা মৎস্য অফিসের মাঠ সহায়ক আবুল কাসেম রিঙ্কু মুঠোফোনে বলেন, আমার বাবার ইলিশ মাছের আড়ত ব্যবসা আছে। রাজনৈতিকভাবে হেনেস্থা করতেই আমাকে জড়ানো হয়েছে। আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই।
তালতলী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইন ইলিশ শিকারের সঙ্গে তার জড়িতের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি নদীতে টহলে ছিলাম, তবে সোমবার সকালে শুনেছি আমার অফিসের মাঠ সহায়ক আবু কাসেম রিঙ্কু ও তার বাবার দুটি ট্রলারে সাগর থেকে ইলিশ মাছ শিকার করে ঘাটে এসেছে। তিনি আরো বলেন, আমার অফিসের কেউ অনিয়ম করলে আমি এর দায়ভার নেব না। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোঃ রোকনুজ্জামান খাঁন বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। তদন্তে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সফিউল আলম বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।