কিশোরী বধূকে স্বামীর যৌন নির্যাতন! বাবার বাড়িতে ফিরে শিকার হলো মারধরের

হোম পেজ » বরগুনা » কিশোরী বধূকে স্বামীর যৌন নির্যাতন! বাবার বাড়িতে ফিরে শিকার হলো মারধরের
শনিবার ● ১৬ আগস্ট ২০২৫


বাবার বাড়িতে ফিরে শিকার হলো মারধরের, আমতলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন

সাগরকন্যা প্রতিবেদক, আমতলী (বরগুনা)

৩৮ বছর বয়সী সৌদি প্রবাসি আব্দুল হালিম হাওলাদারের সঙ্গে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া ১৩ বছর বয়সি জান্নাতুলকে বাল্য বিয়ে দেয়া হয়। স্বামীর যৌন নির্যাতন সইতে না পেরে বাবার বাড়ীতে চলে আসে। স্বামীর বাড়ীতে যেতে রাজি না হওয়ায় বাবা আবু জাফর হাওলাদার ও তার লোকজন মিলে মেয়ে, মা, মামা ও মামীসহ ছয়জনকে পিটিয়ে জখম করেছে। আহতদের পুলিশ উদ্ধার করে শুক্রবার রাতে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। ঘটনা ঘটেছে আমতলী উপজেলার নাচনাপাড়া গ্রামে শুক্রবার বিকেলে।

জানা গেছে, ওই গ্রামের আবু জাফর হাওলাদারের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া কন্যা জান্নাতুলকে কড়াইবুনিয়া গ্রামের হারুন-অর রশিদ হাওলাদারের ৩৮ বছর বয়সি সৌদি প্রবাসী ছেলে আব্দুল হালিম হাওলাদারের সঙ্গে গত ২ এপ্রিল জোরপুর্বক বিয়ে দেয়। গত ১৩ জুন স্বামী হালিম স্ত্রীকে তার বাড়ীতে তুলে নেয়। তুলে নেয়ার পর থেকেই স্ত্রী জান্নাতুলকে যৌন নির্যাতন করে আসছে বলে অভিযোগ স্ত্রী জান্নাতুলের। স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে গত ২২ জুলাই বাবার বাড়ীতে চলে আসে। পরে বাবাকে জানিয়ে দেয়, সে আর স্বামীর বাড়ীতে যাবে না। এতে বেঁকে বসেন বাবা আবু জাফর হাওলাদার, চাচা ফোরকান হাওলাদার ও তার দাদা নুরুল ইসলাম হাওলাদার। পরে জান্নাতুল ২৫ জুলাই পালিয়ে ঢাকায় মা আইরিন বেগমের কাছে চলে যায়। শালিস বৈঠক হওয়ার কথা বলে মেয়েকে বাড়ীতে আনে। শুক্রবার মেয়েকে বাবা আবু জাফর হাওলাদার স্বামীর বাড়ীতে যেতে বলে। কিন্তু  যেতে রাজি হয়নি। এতে ক্ষুব্দ হয়ে বাবা, চাচা ও দাদাসহ ৮-১০ জনে মেয়েকে মারধর শুরু করে। মেয়েকে রক্ষায় মা আইরিন বেগম, বোন লামিয়া, মামী শিরিনা আক্তার, মামা মিজানুর রহমান ও মামাতো ভাইয়ের ছেলে বায়েজিত এগিয়ে আসলে তাদের পিটিয়ে জখম করে এবং ঘরের মধ্যে আটকে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে  ভর্তি করেছে।

মেয়ের জান্নাতুল বলেন, বাবা আবু জাফর হাওলাদার, দাদা নুরুল ইসলাম হাওলাদার ও চাচা ফোরকান হাওলাদার আমাকে জোর করে একজন বয়স্ক ব্যক্তির কাছে বিয়ে দিয়েছেন। স্বামী যৌন নির্যাতন সইতে না পেরে আমি তার বাড়ীতে যেতে রাজি হয়নি। এতে আমার বাবা, চাচা , দাদা ও প্রতিবেশী ৮-১০ জন লোক মিলে আমাকে, আমার মা, বোন, মামা, মামিসহ ছয়জনকে পিটিয়ে জখম করেছে। আমি এ ঘটনার শাস্তি দাবী করছি।

মা আইরিন বেগম বলেন, আমার মেয়ের বয়স ১৩ বছর। ঢাকার একটি মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ে।  এই বয়সের মেয়েকে ৩৮ বছর বয়সের একটি ছেলের সঙ্গে আমার স্বামী, শ্বশুর ও তার স্বজনরা মিলে বিয়ে দিয়েছেন। জামাতার শারীরিক নির্যাতন সইতে না পেরে মেয়ে ওই জামাতার সঙ্গে যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু মেয়েকে তার বাবা শুক্রবার জামাতার বাড়ী জোর করে পাঠাতে চায়। মেয়ে যেতে রাজি না হওয়ায় মেয়েসহ ছয়জনকে বেধরক মারধর ও আটকে রেখেছে। তিনি আরো বলেন, প্রতিবেশী জসিম হাওলাদার আমাকে পানিতে চুবিয়ে মেরে ফেলতে চেষ্টা করেছে।

বাবা আবু জাফর হাওলাদার মারধর ও আটকের কথা অস্বীকার করে বলেন, মেয়ে জামাতার বাড়ী যেতে না চাওয়ায় আমি গালাগাল করেছি। মেয়ে যেতে না চাইলে আমি ওই জামাতার কাছে পাঠাবো না। জামাতার বয়স সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বয়স একটু বেশীই আছে।

স্বামী আব্দুল হালিম হাওলাদার যৌন নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমার স্ত্রীর সঙ্গে আমার সহবাসই হয়নি, তাহলে আমি শারীরিক নির্যাতন করলাম কিভাবে? বয়স জানতে চাইলে বলেন, আমার বয়স ৩০ বছর হবে। ভোটার আইডি কার্ড দেখে জন্ম তারিখ জানতে চাইলে তার কাছে ভোটার আইডি কার্ড নেই বলে জানান।

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ লুনা বিনতে হক বলেন, আহতদের চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আমতলী থানার ওসি (তদন্ত) সাইদুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪:৩৭:৫৫ ● ৮৬ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ