অসহায় সাংবাদিকতা: তথ্যবন্ধু তুহিনের প্রতি নির্মম প্রতিদান

হোম পেজ » মুক্তমত » অসহায় সাংবাদিকতা: তথ্যবন্ধু তুহিনের প্রতি নির্মম প্রতিদান
রবিবার ● ১০ আগস্ট ২০২৫


---

মোঃ রোকনুজ্জামান শরীফ

হতবাক সাংবাদিকতা! নির্বাক সাংবাদিক সমাজ!সংবাদপত্রকে বলা হয় রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। আবার সাধারণত ‘চতুর্থ এস্টেট’ শব্দটি প্রেস এবং মিডিয়াকে বোঝায়, যা সরকার ও সমাজের অন্যান্য শাখাগুলোর উপর নজরদারি এবং প্রভাব বিস্তারের ভূমিকা নির্দেশ করে।

একজন সাংবাদিক সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তারা সমাজের চোখ-কান হিসেবে কাজ করে, তথ্য সংগ্রহ করে মানুষের কাছে পৌঁছে দেন। সাংবাদিকরা সমাজের বিভিন্ন দিক যেমন- রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ বহুমুখী বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেন। এছাড়া সমাজের অন্যায়, উন্নয়ন, দুর্নীতি, সম্ভাবনা ও সমস্যা তুলে ধরে এবং তার সমাধানে ভূমিকা রাখেন।

আপনি হয়ত জানেন না, নয়তোবা মানেন না; সেটি আপনার নিজস্ব বিষয়। আপনি এ সমাজেরই মানুষ। সমাজের নৈতিক অবক্ষয় যা কিছু হচ্ছে, তার জন্য আমাদের সকলের দায় আছে। নৈতিক অবক্ষয় খুঁজতে গিয়ে যখন কারো পক্ষে কোনো রিপোর্ট হয়, সাংবাদিক ধন্যবাদও পায় না। বিপক্ষে রিপোর্ট হলে “হলুদ সাংবাদিক” বলে অভিযোগ ওঠে। কিন্তু কেন?

যুগে যুগে সত্য কথা লিখতে গিয়ে সাংবাদিকদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, হামলা, গুম, পঙ্গুত্বসহ নানা কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। অনেকেই সন্ত্রাসীদের হাতে প্রাণও হারিয়েছেন। পুরোনো ধারাবাহিকতা অনুযায়ী সারাদেশে গণমাধ্যম কর্মীরা অনিরাপদ। রাজনৈতিক ছায়াতলে অশুভ শক্তির উত্থান বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দেশকে অশান্ত করছে। সেই অশুভ শক্তির হাতে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে সাংবাদিকসহ হাজারো মানুষ।

সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যার বিচার আজও নিরবে কাঁদছে। আর কতজন পঙ্গুত্ব নিয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন, তার খবর রাখে না রাষ্ট্র বা অন্য কেউ।

বৃহস্পতিবার ৭ আগস্ট ২০২৫, ঢাকার গাজীপুরে সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজির লাইভ প্রচার শেষে অত্যন্ত লোমহর্ষক ও নির্মমভাবে ৩৮ বছর বয়সী যুবক সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে ইট দিয়ে পেটিয়ে হত্যা করা হয়। মৃত্যুর নিশ্চয়তা দিতে জবাই করে ফেলে রাখা হয় তাকে। তুহিনের দু’টি মেসুম সন্তান এতিম হয়। বিধবা হন তার স্ত্রী। সন্তানহারা হন বৃদ্ধ পিতামাতা।

নির্মমতার এ মাত্রা কত নিচে নামবে, তাতে কখন দেশে সাংবাদিক সুরক্ষা নিশ্চিত হবে, তা জানতেও ইচ্ছে করে।

একজন সাংবাদিক দেশের প্রচলিত আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যদি কোনো সাংবাদিক মিথ্যা, ভুয়া কিংবা মনগড়া তথ্য দিয়ে রিপোর্ট তৈরি করেন, তার বিরুদ্ধে দেশের আদালতে মামলা করা যায়। অপরদিকে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকলেও কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে প্রেস কাউন্সিলে মামলা করা যায়।

যদি কোনো সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে অবহেলা করেন, মিথ্যা বা মানহানিকর সংবাদ প্রকাশ করেন, অথবা প্রেস কাউন্সিল আইন ও এথিক্সের অন্যান্য নিয়মাবলী ভঙ্গ করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা যেতে পারে।

তাহলে কেন এত নির্মমতা? কেন অসহায় সাংবাদিকতা? নিশ্চয়ই এর পেছনে রাষ্ট্রযন্ত্রের দুর্বলতা দায়ী। রাষ্ট্র এ বিষয়ে এড়িয়ে যেতে পারবে না।

গাজীপুরের সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে নির্মমভাবে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা গণমাধ্যমকে জানাতে চাইছে তাদের হাত কতটা লম্বা। কিন্তু তার সহযোদ্ধা হাজারো ‘তুহিন’ রয়ে গেছে।

একজন সাংবাদিকের তথ্য সরবরাহের কারণে আপনি কোনো না কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন, যা হয়তো কখনো পেতেন না বা দেরিতে পেতেন। তথ্যবন্ধু হিসেবে সমাজের জন্য যে কাজটি করেছেন, তা ঢাকঢোল পিটিয়ে জানান দেয়া হয় না।

একজন সাংবাদিক সমাজের জন্য যা করে-

* সাংবাদিকরা ঘটনার পেছনের সত্য তুলে ধরে, যা মানুষকে বিভিন্ন বিষয়ে অবগত থাকতে সাহায্য করে।

* পরিবেশ দূষণ, দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন ইত্যাদি সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করে।

* ক্ষমতাবানদের কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

* সরকারের ভুল কাজের সমালোচনা করে এবং জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য সোচ্চার থাকে।

* সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতির জন্য কাজ করে, উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড প্রচার করে এবং ইতিবাচক পরিবর্তনে সহায়তা করে।

* বিভিন্ন বিষয়ে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

* ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ তৈরি করে, যা সুস্থ সমাজের জন্য অপরিহার্য।

সাংবাদিকরা সমাজের দর্পণ, যারা তথ্য সরবরাহ করে, সচেতনতা বৃদ্ধি করে, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে, সমাজের উন্নতিতে অবদান রাখে ও জনমত গঠনে সাহায্য করে। এখন দেশের স্বার্থে কলমযোদ্ধা সমাজের সুরক্ষার আওয়াজ তোলা খুবই জরুরি।

 

লেখক-

শিক্ষক

সাধারণ সম্পাদক

মঠবাড়িয়া প্রেসক্লাব

মঠবাড়িয়া, পিরোজপুর

sharifsstyle@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ১৮:২১:০৩ ● ১২০ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ