শিক্ষার দায় কার? পরীক্ষার হলে বহিষ্কারই কি যথেষ্ট?

হোম পেজ » সম্পাদকীয় » শিক্ষার দায় কার? পরীক্ষার হলে বহিষ্কারই কি যথেষ্ট?
মঙ্গলবার ● ১ জুলাই ২০২৫


 

 

---

পটুয়াখালীর মহিপুরে এইচএসসি পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন রাখার দায়ে দুই পরীক্ষার্থী বহিষ্কৃত হওয়ার খবরটি কেবল শাস্তির সংবাদ নয়—এটি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার গভীর এক অসুখের উপসর্গ।

 

প্রতিবার পাবলিক পরীক্ষার মৌসুমে অসদুপায়, মোবাইল, ফাঁস হওয়া প্রশ্ন কিংবা হলভিত্তিক অনিয়ম নিয়ে সংবাদ আসে। কিন্তু সমস্যার মূল জায়গাগুলো আমরা চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হচ্ছি।

 

প্রথমত, একজন শিক্ষার্থী কেন অসদুপায় অবলম্বনের চিন্তা করে? এর জন্য একদিকে দায়ী সেই শিক্ষার্থী নিজে, কিন্তু তার চেয়েও বেশি দায় রয়েছে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক সংস্কৃতির। একজন শিক্ষার্থী প্রতিদিন যেই শিক্ষার বাতাবরণে বড় হচ্ছে, সেখানে যদি মূল্যবোধ, সততা, দায়িত্ববোধ ও নৈতিকতা শেখানো না হয়—তাহলে সিলেবাস মুখস্থ করিয়ে বড় রেজাল্ট এনে দেওয়ার প্রতিযোগিতাই শিক্ষার মানদণ্ড হয়ে দাঁড়ায়।

 

এখন প্রশ্ন—শুধু বহিষ্কার করলেই কি শিক্ষার দায় শেষ হয়? কুয়াকাটা খানাবাদ ডিগ্রি কলেজের প্রশাসন কি এই শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ গঠনে ভূমিকা রেখেছিল? ক্লাসে, অ্যাসেম্বলিতে, পাঠ্যক্রমের বাইরের আলোচনায় কি কখনো নকলের ভয়াবহতা, আত্মশক্তিতে বিশ্বাস, নৈতিক চর্চা এসব বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে?

 

পরিবারও কি কেবল ভালো ফলাফলের চাপ দিয়েছে, নাকি তাদের মনোজগতে শিক্ষার সত্যিকারের উদ্দেশ্যও ঢুকিয়েছে? মোবাইল ফোন যন্ত্র, কিন্তু এটি যখন দায়িত্বহীনতার সঙ্গে ব্যবহৃত হয়, তখন সেটি হয়ে দাঁড়ায় চরম আত্মবিনাশের হাতিয়ার।

 

আমরা যখন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা হল থেকে বের করে দেই, তখন কি তার আত্মবিশ্বাসও একসঙ্গে ভেঙে দিচ্ছি না? এই বহিষ্কার তাদের জীবনের বড় শিক্ষা হতে পারে—যদি শিক্ষা ব্যবস্থা, পরিবার ও সমাজ সেই ভুল থেকে শেখার পথ খুলে দেয়।

 

শুধু শাস্তি নয়, দরকার শিক্ষার্থীদের মনোজগতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার মতো শিক্ষা পরিবেশ। পরীক্ষার হলে ক্যামেরা বসিয়ে, ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে বা ফোন নিষিদ্ধ করে সমস্যার শিকড় উপড়ে ফেলা যাবে না। দরকার আত্মনির্ভর ও আত্মবিশ্বাসী একটি প্রজন্ম—যাদের কাছে ‘শিক্ষা’ মানে কেবল পাশ নয়, মানুষ হওয়া।

বাংলাদেশ সময়: ২১:০৪:৪৩ ● ৬৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ