
সাগরকন্যা প্রতিবেদক, কুয়াকাটা অফিস
প্রায় দুই মাসের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষে গভীর সাগরে ইলিশ ধরতে গিয়ে আশানুরূপ অর্জন নেই কুয়াকাটা-মহিপুরের জেলেদের। জালে ইলিশের দেখা না মেলায় ফিরছেন খালি হাতে, গুনছেন লোকসান। এ অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জেলে ও মৎস্য আড়ৎদাররা। অনেকে ঋণের বোঝায় জর্জরিত।
প্রথমবারের মতো চলতি মৌসুমে ভারত-বাংলাদেশের জেলেদের একই সময়ে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি হয় বঙ্গোপসাগরে ইলিশ আহরণে। কুয়াকাটা-মহিপুর উপকূলের জেলেরা ১১ জুন মধ্যরাতে নিষেধাজ্ঞা শেষ হতেই মাছধরা সরঞ্জাম নিয়ে সাগরে নেমে পড়েন। এক একটি মাছধরা ট্রলারে ১২-১৬ জন জেলে রয়েছেন, এভাবে পাঁচ শতাধিক ট্রলার নিয়ে কয়েক হাজার জেলে সাগর চষে বেড়ান ইলিশের সন্ধানে। প্রথমদিকে জেলেদের চোখে-মুখে স্বপ্ন ছিল, বড় ইলিশের প্রত্যাশায় সাগরে নেমে গত দশ দিনেরও বেশি সময় ধরে সাগরে জাল ফেলে পেয়েছেন নামমাত্র মাছ। জ্বালানি, বরফ, খাবারসহ পরিচালন ব্যয় তুলতে না পেরে অনেকেই লোকসানের মুখে ফিরেছেন ঘাটে।
রোববার দুপুরে আলীপুর ফিশারী ঘাটে সাগরকন্যার এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় জেলে বনি আমিনের। তাঁর ভাষায়,
“সাগরে নামতে যতটা খরচ করছি, তার চারভাগের এক ভাগও উঠাতে পারছি না।”
একই এলাকার জেলে রজ্জব আলী বলেন,
“ধার কইরা গেছি সাগরে, ভাবছিলাম মাছ পাইলে দেনা শোধ করমু, কিন্তু এখন তো চিন্তায় ঘুম হারাম।”
কুয়াকাটার জেলে বদিউর বলেন,
“দুই দেশের একসাথে নিষেধাজ্ঞায় ভেবেছিলাম মাছ বেশি হবে, কিন্তু বাস্তবতা পুরো উল্টো।”
মহিপুরের জেলে লিয়াকত বলেন,
“এখন আর এই পেশায় মজা নাই, ভাবছি অন্য পেশায় যাবো।”
একইভাবে বিপাকে রয়েছেন কুয়াকাটা, মহিপুর-আলীপুরের মৎস্য ব্যবসায়ীরাও। ফাঁকা পড়ে আছে মাছের আড়ত, বরফকলগুলোও অনেকটাই অচল। ঘাটে নোঙ্গর করা আছে মাছধরা ট্রলারগুলো। বাজারে ইলিশের সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে।
আলীপুর বিএফডিসি মার্কেটের মৎস্য ব্যবসায়ী আ. জলিল ঘরামী সাগরকন্যাকে বলেন,
“একেকটি ট্রলারে তিন থেকে দশ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ (দাদন) রয়েছে। প্রতি আড়ত দেড়-দুই কোটি টাকা এভাবে আটকে আছে। জেলেদের জালে পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা না পড়লে ইলিশ ব্যবসায়ীরা পথ বেয়ে বসতে হবে।”
একইভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেন সেখানকার মহেশখালী ফিশার মিজানুর রহমান ও বাচ্চু ফিশের আবুল হোসেন কাজীও।

তবে আশার বাণী শোনান কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা। তিনি সাগরকন্যাকে বলেন,
“সাগরের পানি এখনও বেশ উষ্ণ, তবে ইতোমধ্যে বৃষ্টি হওয়ায় তাপমাত্রা কমছে। আশা করছি, কয়েক দিনের মধ্যেই জেলেদের জালে মিলবে কাক্সিক্ষত ইলিশ।”
তিনি আরও জানান, নিষেধাজ্ঞা সফলভাবে বাস্তবায়ন করায় এর সুফল অবশ্যই আসবে।
উল্লেখ্য, বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ এককভাবে নিষেধাজ্ঞা পালন করলেও ভারতের জেলেরা তা মানত না। এবার দুই দেশের একসাথে নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের ফলে স্থানীয়দের মধ্যে ছিল বিশেষ আশাবাদ। জেলেদের জালে আবার ফিরুক সেই প্রতীক্ষিত রূপালি ইলিশ, এখন উপকূলজুড়ে একটাই প্রার্থনা।