বকেয়া মজুরির দাবিতে ফের ধর্মঘটে পাটকল শ্রমিকরা

প্রথম পাতা » খুলনা » বকেয়া মজুরির দাবিতে ফের ধর্মঘটে পাটকল শ্রমিকরা
সোমবার ● ৬ মে ২০১৯


বকেয়া মজুরির দাবিতে ফের ধর্মঘটে পাটকল শ্রমিকরা

খুলনা সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ১০ সপ্তাহের বকেয়া মজুরি পরিশোধ না করায় রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা ফের অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু করেছেন।
রবিবার রাতে খুলনা-যশোর অঞ্চলের তিনটি পাটকলের শ্রমিকরা ধর্মঘটে গেলেও সোমবার (৬ মে) ভোর থেকে এ অঞ্চলের সব পাটকলের শ্রমিকরা ধর্মঘটে শামিল হন। এতে সব পাটকলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। বিজেএমসির খুলনা অঞ্চলের প্রধান মো. সাজ্জাদ হোসেন সকালে বলেন, শ্রমিকরা হঠাৎ করেই কাজে যোগ না দিয়ে ধর্মঘট শুরু করেছেন।
বিজেএমসির এই কর্মকর্তা আরো বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে অর্থছাড় না হওয়ায় শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ করা যায়নি। এই অজুহাতে রোববার রাতে স্টার জুট মিল, প্লাটিনাম জুবলী জুট মিল ও ক্রিসেন্ট জুট মিলের শ্রমিকরা উৎপাদন বন্ধ রেখে ধর্মঘট শুরু করেন। তবে সোমবার ভোরের পালা থেকে নয়টি জুট মিলের শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে ধর্মঘট শুরু করেন। পাটকলগুলো হলো প্লাটিনাম জুবলী জুট মিলস, স্টার জুট মিলস, দৌলতপুর জুট মিলস, খালিশপুর জুট মিলস, আলিম জুট মিলস, ইস্টার্ন জুট মিলস, ক্রিসেন্ট জুট মিলস এবং যশোরের জে জে আই জুট ও কার্পেটিং মিলস। এর আগে বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগ এবং সিবিএ ও নন-সিবিএ পরিষদ যৌথভাবে ১২ দফা দাবিতে এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল। এই দাবিতে শ্রমিকরা এপ্রিল মাসে দুই দফা ধর্মঘট পালন করেন এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য রেল ও রাজপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান।
শ্রমিকরা জানান, এর আগে বিগত ২ থেকে ৪ এপ্রিল শ্রমিকরা ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট ও রাজপথ-রেলপথ অবরোধ পালন করেন। এরপর শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে ৬-৭ এপ্রিল ঢাকায় বিজেএমসির সঙ্গে শ্রমিক নেতাদের আলোচনা হয়। কিন্তু সেই আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ এপ্রিল থেকে ৯৬ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দেন পাটকল শ্রমিকরা। সর্বশেষ পূর্বঘোষণা অনুযায়ী শ্রমিকরা ১৫ এপ্রিল থেকে ৯৬ ঘণ্টার ধর্মঘট শুরু করেন। ওই দিন বিকেলে ঢাকায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। শ্রম অধিদপ্তরের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানসহ বিজেএমসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে কতগুলো সিদ্ধান্ত হয়। তার মধ্যে রয়েছে -২৫ এপ্রিলের মধ্যে ১০ সপ্তাহের বকেয়া মজুরি পূর্বের হারে এবং তিন মাসের বেতন পরিশোধ করা হবে। পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে শ্রমিকদের এক সপ্তাহের মজুরি মিল থেকে পরিশোধ করা হবে। এ ছাড়া অন্যান্য দাবি নিয়ে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আগামি ৮ মে বিজেএমসি বৈঠকে বসবে। এরপরই ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়। শ্রমিক নেতা খলিলুর রহমান আজকে অভিযোগ করে বলেন, কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী ২৫ এপ্রিল শ্রমিকদের বকেয়া ১০ সপ্তাহের মজুরি পরিশোধ করা হয়নি। এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছিল। যার প্রথম বহিঃপ্রকাশ ঘটে গত রোববার স্টার জুট মিলস, ক্রিসেন্ট জুট মিলস ও প্লাটিনাম জুট মিলসের শ্রমিকদের কর্মবিরতির মাধ্যমে।
আন্দোলনরত শ্রমিক নেতারা জানান, খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, স্টার, আলিম, ইস্টার্ন এবং যশোরের কার্পেটিং ও জেজেআই জুট মিলে বর্তমানে ১৩ হাজার ২৭১ শ্রমিক কাজ করছেন। মজুরি বকেয়া থাকায় শ্রমিকরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। শ্রমিকদের ঘোষিত দাবির মধ্যে রয়েছেÑসরকার ঘোষিত জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫ সুপারিশ বাস্তবায়ন, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কর্মচারীদের পিএফ গ্র্যাচুইটি ও মৃত শ্রমিকের বিমার বকেয়া টাকা প্রদান, টার্মিনেশন ও বরখাস্ত শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহাল, শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগ ও স্থায়ীকরণ, পাট মৌসুমে পাট ক্রয়ের অর্থ বরাদ্দ, উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিলগুলোকে পর্যায়ক্রমে বিএমআরই করা।
বিজেএমসির অধীনে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা জোনে মোট ২৬টি পাটকল রয়েছে। তার মধ্যে চট্টগ্রাম জোনে রয়েছে আমিন জুট মিলস লিমিটেড ও ওল্ড ফিল্ডস লিমিটেড, গুল আহমেদ জুট মিলস লিমিটেড, হাফিজ জুট মিলস লিমিটেড, এমএম জুট মিলস লিমিটেড, আরআর জুট মিলস লিমিটেড, বাগদাদ-ঢাকা কার্পেট ফ্যাক্টরি লিমিটেড, কর্ণফুলী জুট মিলস লিমিটেড, ফোরাত কর্ণফুলী কার্পেট ফ্যাক্টরি, গালফ্রা হাবিব লিমিটেড ও মিলস ফার্নিসিং লিমিটেড। অন্যদিকে খুলনায় রয়েছে ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, স্টার, ইস্টার্ন, আলিম এবং যশোরের জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিল।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২০:৩১:২৩ ● ৪৪৮ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ