বাংলাদেশে কয়লা ভিক্তিক নয়, নবায়ণ যোগ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের দাবি

প্রথম পাতা » জাতীয় » বাংলাদেশে কয়লা ভিক্তিক নয়, নবায়ণ যোগ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের দাবি
শুক্রবার ● ৫ এপ্রিল ২০১৯


বাংলাদেশে কয়লা ভিক্তিক নয়, নবায়ণ যোগ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের দাবি

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) সারকন্যা প্রতিনিধি॥

বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হলে, কয়লা বা পারমানুবিক উপায়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন ও উৎপাদন বন্ধ করে, নবায়ণ যোগ্য জ¦ালানীর মাধ্যমে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে বলে জানিয়েছেন তেল গ্যাস খনিজ সম্পদক ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।
শুক্রবার (৫ এপ্রিল) দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে জিএম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত, তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির উত্তারাঞ্চর প্রতিনিধি সভায় সরকারের প্রতি এই আহব্বান জানানো হয়। একই সাথে কয়লা ও পারমানুবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন বন্ধ করারও আহব্বান জানানো হয়।
ফুলবাড়ী খনিকে উন্নয়ন ও ২০০০ মেগা ওয়ার্ড তাপ বিদ্যুৎ স্থাপন করার জন্য এশিয়া এনার্জির মুল কোম্পানী জিসিএম(এঈগ) এর সাথে চীনা পাওয়ার কোম্পানীর চুক্তি বাতিল ও ফুলবাড়ী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে, ৫এপ্রিল শুক্রবার দিনব্যাপী ফুলবাড়ী জিএম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় সভাকক্ষে, তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির উত্তারাঞ্চল প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিনিধি সভায় তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী শাখার আহব্বায়ক সৈয়দ সাইফুর ইসলাম জুয়েল এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ^বিদ্যায় অর্থনীতি বিভাগ প্রধান অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ। এতে অনান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ও গণফ্রন্টের সভাপতি টিপু বিশ^াস, কেন্দ্রীয় নেতা বজলুর রশিদ, শুভ্রাশু চক্রবর্তি, বাংলাদেশে ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ এর সাধারন সম্পাদ মোশারফ হোসেন নান্নু, সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল্যাহ আলকাফি, তেল গ্যাস ও খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা আনোয়ার আলী দুলার, অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খাঁন, প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা, প্রকৌশলী মাহবুব সুমন  গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা মুরাদ মোরশেদ ও বিভিন্ন জেলা ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দরা।
তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, চীন ও ভারতের পরিত্যাক্ত কর্মসূচি, কয়লা ভিক্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, তাদের দেশীয় কোম্পানী গুলোকে টিকিয়ে রাখার জন্য বাংলাদেশে একের পর এক কয়লা পারমানুবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপননের জন্য সরকারের সাথে চুক্তি করে আসচ্ছে। তিনি বলেন, চীন ও ভারতের শক্তির প্রভাব নিয়ে, সরকার তাদের ক্ষমতা দীর্ঘায়ু করা ও মোটা অংকের কমিশনের আশায় চীন ও ভারতের সাথে একের পর এক দেশ ধ্বংশের চুক্তি করে আসচ্ছে।
অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ আরো বলেন, চীন এখন আর কোন গণমানুষের সমাজতান্ত্রীক দেশ নয় কিংবা ভারতও কোন উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রও নয়, চীন ও ভারত এখন সম্রজ্যবাদ রাষ্ট্রে পরিনত হয়েছে। তিনি উদাহরনে বলেন,ঋনের দায়ে জামাইকার বিমান বন্দর চীন তাদের দখলে নিয়েছে, একই ভাবে বাংলাদেশকে  ঋনের দায়ে আবদ্ধ করছে। একই ভাবে পাশর্^বতী রাষ্ট্র ভারত, নানা ভাবে বাংলাদেশকে তাদের আয়ত্বে রেখে শোষন করছে।
অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির মালিকানা ভারতের, এখানে যা লাভ হবে তা সবেই নিবে ভারত, এখানে ভারতের কয়লা বিক্রি হবে। কিন্তু এই রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারনে যে ক্ষতি হবে, তা সবেই বাংলাদেশের।  একই অবস্থা পাবনার রূপপুর পারমানুবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপন করছে রাশিয়া, এর ব্যবস্থাপনায় রয়েছে ভারত, কিন্তু এই পারমানুবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রর জন্য যে ক্ষতি হবে তা সবেই বাংলাদেশের। এই চুক্তি গুলো দেশ বিরোধী চুক্তি, সরকার এই দেশ বিরোধী চুক্তি করেছে কেবল মাত্র ক্ষমতায় টিকিয়ে থাকার জন্য ও মোটা অংকের কমিশন নেয়ার জন্য। আগামী ৪১ সাল পর্যন্ত  বিদ্যুৎতের চাহিদাকে সামনে রেখে এখন বড়পুকুরিয়ার পাশাপাশি, চট্রগ্রামের বাঁশখালি, পাবনার রূপপুর, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পর এখন ফুলবাড়ীর কয়লা খনিকে কাজে লাগিয়ে ৬ হাজার মেগা ওয়ার্ড বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ষড়যন্ত্র করছে সরকার। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে খুনি কোম্পানী এশিয়া এনার্জি যার বর্তমান নাম জিসিএম, সম্প্রতিক একটি চীনা পাওয়ার কোম্পানীর সাথে চুক্তি করেছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের প্রধান দুটি সম্পদ পানি ও নদী, বাংলাদেশে মাটির নিচে পানি আছে বলে এখানকার মাটি এত উর্বর যেখানে বছরের ৩-৪ টি ফসল উৎপাদন হয়, একই ভাবে নদি আছে বলে জীব বৈচিত্র রয়েছে। এই পানি ও নদীকে ধ্বংশ করে কোন প্রকল্প করতে দেয়া হবেনা।
কেন্দ্রীয় নেতা ও গণফ্রন্টের সভাপতি টিপু বিশ^াস বলেন, সম্প্রতিক সময় সারাদেশে উন্নয়ন যজ্ঞার মাধ্যমে কৃষকের সর্বনাস করার কমর্যজ্ঞ চালাচ্ছেন, একই ভাবে তাপ বিদ্যুৎ স্থাপনের নামে আবারো নতুন করে ফুলবাড়ীতে ধ্বংশ করার ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি বলেন ২০০৬ সালের ২৬ আগষ্ট ন্যায় আবারো গণআন্দোলন করে এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে।
তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা প্রকৌশলী মাহবুব সোবহান বলেন,বাংলাদেশে যে পরিমান বায়ু প্রবাহ হয়, তা দিয়ে ৩৪ হাজার মেগাওয়ার্ড বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। যেখানে পরিবেশ দূষন হবে না এবং খরচও অনেক কম। একই ভাবে বাংলাদেশের এক দশমিক ৭ শতাংশ জায়গা ব্যবহার করে ৫০ হাজার সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।
প্রকৌশলী মাহববুব সোবহান বলেন, বর্তমানে বাংলা দেশে ১৬ হাজার মেগা ওয়ার্ড বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থাকলেও বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৯ হাজার থেকে ১০ হাজার মেগাওয়ার্ড। সেই বিদ্যুৎ কয়লা ভিত্তিক ও জ¦ালানী তেল ভিক্তিক করতে খরচ যেমন বেশি হচ্ছে তেমনী পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে।  এ কারনে কয়লা বা পারমানুবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিহার করে নবাবয়ণ যোগ্য (বায়ু ও সৌর শক্তিকে কাজে লাগিয়ে) বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের দাবী জানান।
তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন বলেন, বর্তমান সরকার একের পর এক দেশ বিরোধী চুক্তির সেই দেশের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় টিকিয়ে থাকার যে ষড়যন্ত্র করছে, সেই ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে সাধারন জনগণসহ সারা দেশ। তাই আগামী দিনে লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে এই দেশ বিরোধী চুক্তি বন্ধ করতে হবে। প্রতিনিধি সম্মেলনে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে কয়লা ও পারমানুবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিহার করে নাবায়ন যোগ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন ও ফুলবাড়ী ৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়নের দাবী জানানো হয় অন্যথায় আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই দাবী পুরনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়।

এএইচ/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৬:৪৬:৫৬ ● ৪৯০ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ