নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সামগ্রী ক্রমাগত অগ্নিঝুঁকি বাড়াচ্ছে

প্রথম পাতা » জাতীয় » নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সামগ্রী ক্রমাগত অগ্নিঝুঁকি বাড়াচ্ছে
বৃহস্পতিবার ● ৪ এপ্রিল ২০১৯


নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সামগ্রী ক্রমাগত অগ্নিঝুঁকি বাড়াচ্ছে

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

দেশজুড়ে যেসব অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটছে, তার অধিকাংশই ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক সামগ্রীর যথাযথ তদারকি না থাকা ও নি¤œমানের কারণে ঘটছে। মূলত শর্ট সার্কিট, নিম্নমানের সরঞ্জাম ব্যবহার কিংবা বছরের পর বছর তদারক না করায় বৈদ্যুতিক সামগ্রীর গোলযোগের কারণেই অগ্নিকা-ের সূত্রপাত হয়। গত ২০১৮ সালে সারা দেশে মোট ১৯ হাজার ৬৪২টি অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। তার মধ্যে ৭ হাজার ৮২৫টি অগ্নিকা-ের কারণ ছিল বৈদ্যুতিক ত্রুটি। অর্থাৎ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন বা ব্যবহারকারীর বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকেই ওসব অগ্নিকা-ের সূত্রপাত হয়েছে। বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে সৃষ্ট ওসব আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২০৪ কোটি টাকারও বেশি। তাছাড়া ওসব অগ্নিকা- থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১ হাজার ৫৪ কোটি ৪১ লাখ টাকার সমপরিমাণ সম্পদ। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের বিভিন্ন আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম দীঘসময় ব্যবহার হলেও সেগুলো পরিবর্তনে তেমন নজর দেয়া হয় না। তাছাড়া দৈনন্দিন প্রয়োজনে আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় ইলেকট্রনিকস পণ্যের ব্যবহারও দ্রুত বাড়ছে। আর ইলেকট্রনিকস পণ্যের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় অগ্নিঝুঁকিও বাড়ছে। পাশাপাশি ভবন নির্মাণের সময় ব্যবহার করা বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম (বৈদ্যুতিক তার, ফিটিংস ইত্যাদি) নষ্ট না হওয়া পর্যন্ত পরিবর্তন করা হয় না। ফলে নড়বড়ে কানেকশন কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম শর্ট সার্কিটের ঝুঁকি তৈরি করছে। ফলে প্রতি বছর সংঘটিত অগ্নিকা-ের সিংহভাগই বৈদ্যুতিক কারণে সংঘটিত হচ্ছে।
সূত্র জানায়, প্রতিটি বাসাবাড়িতে ইন্টেরিয়র পরিবর্তন কিংবা রঙ করা হয়। কিন্তু বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের কোনো পরিবর্তন হয় না। ভবন নির্মাণের সময় যে ক্যাবল ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি যুগের পর যুগ ব্যবহার হচ্ছে। তাছাড়া এদেশের বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনও নানাভাবে ত্রুটিপূর্ণ অবস্থায় সড়ক ও ভবনসংলগ্ন এলাকায় রয়েছে। ফলে বৈদ্যুতিক কারণে অগ্নিকা-ের ঘটনাও বেড়ে যাচ্ছে। যেকোনো পণ্যের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকলেও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার অনুপযোগী না হওয়া পর্যন্ত পরিবর্তন করা হয় না। ওসব কারণে নিরাপত্তার স্বার্থে ভবনের অন্য ঝুঁকির সঙ্গে সমন্বয় করে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামও পরিবর্তন কিংবা তদারক প্রয়োজন। মূলত অধিকাংশ ভবনে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় সেগুলো অগ্নিঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। পাশাপাশি ভবনের ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত মানুষের বসবাস, অতিরিক্ত আসবাব ও ইলেকট্রনিক পণ্যের ব্যবহারও আগুনের ঝুঁকি দ্বিগুণ করে। অগ্নিনিরাপত্তায় অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে এসব সমস্যারও সমাধান করতে হবে।
সূত্র আরো জানায়, বিগত ২০১৮ সালে যেসব অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হচ্ছে চুলার আগুন। ওই বছর চুলার আগুন থেকে ৩ হাজার ৪৪৯টি অগ্নিকা- ঘটেছিল। তাছাড়া হয় জ্বলন্ত সিগারেটের টুকরা থেকে ৩ হাজার ১০৮টি অগ্নিকা-ের সূত্রপাত হয়। পাশাপাশি গতবছর ছোটদের আগুন নিয়ে খেলার কারণে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে ৫৮৯টি, যন্ত্রাংশের ঘর্ষণের কারণে ৩১৫টি, হামলা ও আইনভঙ্গের কারণে ২৫৭টি, মাত্রাতিরিক্ত তাপ সৃষ্টির কারণে ১৬৫টি, মিস ফায়ার ৬৫০টি, চিমনি থেকে ৪৯টি, রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ায় ৩৪টি ও বাজি পোড়ানোয় ৪২টি অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। যদিও অজ্ঞাত কারণে ১ হাজার ৪১১টি বা ৭ শতাংশ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। ওসব আগুনে সর্বমোট ৩৮৬ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে ১ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকার মালপত্র।
এ প্রসঙ্গে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক পূর্ণ চন্দ্র মুৎসুদ্দী জানান, বাসাবাড়ি কিংবা বাণিজ্যিক ভবনগুলোয় ইলেকট্রনিকস যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়ছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেগুলো ব্যবহারকারীর মধ্যে তা থেকে অগ্নিকা-ের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা নেই। ফলে অগ্নিকা-ের কারণ হিসেবে বৈদ্যুতিক কারণই সবার উপরে উঠে এসেছে। এখন থেকে সতর্ক না হলে আগামীতে বৈদ্যুতিক কারণে অগ্নিকা-ের ঘটনা আরো বাড়বে।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৫:০৮:৩২ ● ৪৪৬ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ