মন্ত্রিসভায় তিনটি আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন

প্রথম পাতা » জাতীয় » মন্ত্রিসভায় তিনটি আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন
সোমবার ● ১৮ মার্চ ২০১৯


ফাইল ছবি
ঢাকা সাগরকন্যা অফিস:
মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে বাংলাদেশ সুগার ক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন-২০১৯, মৎস্য ও মৎস্য পণ্য (পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৯ ও বাংলাদেশ বাতিঘর আইন-২০১৯ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ের সম্মেলন কক্ষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, সুগার ক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট বিষয়ে ১৯৯৬ সালের পুরনো একটি আইন আছে, সেটি বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন। এই আইনের প্রেক্ষিতেই এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা পর্যালোচনা করে দেখেছেন চিনি শুধু আখ থেকে হয় না। আরও অনেকগুলো ক্রপ আছে।

তিনি বলেন, নতুন আইনে সুগারক্রপের সংজ্ঞায় ইক্ষু, সুগার বিট, তাল, খেজুর, গোলপাতা ও অন্যান্য মিষ্টি জাতীয় ফসল বা বৃক্ষ যেগুলো থেকে চিনি হয় তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিবর্তে বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট। এটা যেহেতু ১৯৯৬ সালের আইন তাই খুবই সামান্য পরিবর্তন আনা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আইনে কমিটি যেটা আছে তা আগের মতোই ওটা আইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। তবে একজন বাড়তি হিসেবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিএসআইআর) এর একজন প্রতিনিধি সেখানে যুক্ত হবেন।

এছাড়া, মৎস্য ও মৎস্য পণ্য (পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৯ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ১৯৮৩ সালের অধ্যাদেশের মাধ্যমে এই সেক্টরটি এতদিন পরিচালিত হয়েছে। এটি সামরিক সরকারের সময় করা। অধ্যাদেশটি ছিল ইংরেজিতে। উচ্চ আদালতের অনুশাসন অনুযায়ী, সব অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করার বাধ্যবাধকতা থাকায় এটিকে আইনে পরিণত করা হয়েছে। একই সঙ্গে এটিকে বাংলা থেকে ইংরেজিতে করা হয়েছে।

শফিউল আলম ব্রিফিংয়ে বলেন, মান নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এই আইন করা হচ্ছে। ১৯৮৩ সালের একটি অধ্যাদেশ দিয়ে চলছিল। উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে সামরিক শাসনামলে প্রণীত আইনগুলোকে নতুন করে বাংলায় করা হচ্ছে। মৎস্যের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, সকল প্রকার কোমল ও কঠিন অস্থি বিশিষ্ট মৎস্য, সাদু ও লবণাক্ত পানির চিংড়ি, উভচর জলজপ্রাণী, কাকড়া জাতীয় প্রাণী, শামুক, ঝিনুক, ব্যাঙ এবং এসব জলজপ্রাণীর জীবন্ত কোষকে মৎস্য হিসেবে গণ্য করা হবে।

তিনি বলেন, মাছ রপ্তানিতে নানান রকম সমস্য হয় কোয়ালিটি নিয়ে। এজন্য আইনকে হালনাগাদ করা হয়েছে। মৎস্য ও মৎস্যপণ্যে ভেজাল, অপদ্রব্যের মিশ্রণ ও অনুপ্রবেশ করানো এবং ক্ষতিকারক রাসায়নিক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আগে আমাদের উদাহরণ আছে চিংড়ির ওজন বাড়ানোর জন্য পেরেক ঢুকানো হয়েছে বা জেলি বা সাগু তরল করে ঢোকানো হয়েছে, এগুলো আমাদের জন্য খুব অমর্যাদার, এগুলো যাতে না করতে পারে সেজন্য আইনে বিধান রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে মৎস্যপণ্য যে স্বাস্থ্যকর সেই সনদ ছাড়া মৎস্য ও মৎস্যপণ্য রপ্তানি করা যাবে না। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নিরাপদ মৎস্য উৎপাদন নিশ্চিত করতে মৎস্য খামার স্থানীয় উপযুক্ত পদ্ধতিতে নিবন্ধন করতে হবে। মৎস্য খামার চালাতে গেলে নিবন্ধন লাগবে। খামার পর্যায়ে ব্যবহার নিষিদ্ধ ওষুধ ও রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করা যাবে না। তিনি বলেন, মৎস্য ও মৎস্যপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় ফ্রেশ মাছ প্রক্রিয়া করতে হবে। পচা, দূষিত, ভেজাল ও অপদ্রব্য মিশ্রিত মৎস্য ও মৎস্যপণ্য বাজারজাত করা যাবে না। এসব পণ্য বাজারজাত করলে দুই বছর কারাদ- বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। আগে এই অপরাধের জন্য তিন মাস জেল, পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দ- দেয়া হতো, যোগ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, আইন অমান্য করলে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পরিদর্শক বা পরিদর্শনকারী কর্মকর্তা কোনো ব্যক্তিকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রশাসনিক জরিমানা করতে পারবেন। দ্বিতীয় দফায় একই অপরাধ করলে সাজা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নির্ধারিত পদ্ধতিতে লাইসেন্স না নিয়ে মানুষের খাদ্য হিসেব মৎস্য ও মৎস্যপণ্য আমদানি করা যাবে না। তবে সরকার প্রয়োজনে গেজেট প্রজ্ঞাপন দিয়ে নির্ধারিত মৎস্য ও মৎস্যপণ্য আমদানি করার এক বা একাধিক শর্ত থেকে অব্যাহতি দিতে পারবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও জানান, বাংলাদেশ বাতিঘর আইন-২০১৯ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অমাদের একটা পুরনো আইন আছে, দ্য লাইট হাউজ অ্যাক্ট, ১৯২৭। এর মধ্যে অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে এর প্রেক্ষাপটে পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন নতুন সংযোজন জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বন্দর বাতিঘর কর্তৃপক্ষ যুক্ত করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন বন্দর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে বাতিঘর পরিচালিত হয়। বাতিঘরের উপর মাশুল আরোপ করার বিধান আগে থেকেই ছিল জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটি একটু সহজীকরণ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বন্দরে আগত এবং প্রত্যাগত ও এক বন্দর হতে অন্য বন্দরে যাতায়াতের জন্য জাহাজগুলোকে দিক নির্দেশনা দেওয়ার সুবিধার্থে বাতিঘরের সেবা সুবিধার জন্য সরকার এ আইনের অধীন প্রত্যেক আগমন ও প্রত্যাগমনকারী জাহাজের জন্য সময়ে সময়ে বাতিঘরের মাশুল নির্ধারণ এবং বাতিঘর মাশুল সংগ্রহ করতে পারবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বাংলাদেশের যে কোনো আগমন ও প্রত্যাগমনের সময় জাহাজের মালিক অথবা এজেন্ট অথবা মাস্টারকে বাতিঘর মাশুল পরিশোধ করতে হবে। তবে শর্ত আছে যে, সরকার কর্তৃপক্ষ সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপনের দ্বারা বাতিঘরের মাশুল নির্ধারণের ৩০ কার্যদিবেসের মধ্যে পুনরায় বাতিঘর মাশুল আরোপ বাতিল অথবা বা তারতম্য করার ক্ষেত্রে রেয়াত দেওয়া হয়েছে। মাশুল কালেকশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট কাস্টমস কমিশনকে। যে জাহাজ মাশুল দেবে না সে জাহাজকে আটক করা যাবে। যতক্ষণ টাকা না দেবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে সিজ করে রাখা যাবে। টাকা দিলে ছুটে যাবে।

এফএন/কেএস

বাংলাদেশ সময়: ১৬:২৫:১৪ ● ৫০৭ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ