আমতলীতে ইবতেদায়ী মাদ্রাসার নতুন ঘর তোলার হিড়িক

প্রথম পাতা » বরগুনা » আমতলীতে ইবতেদায়ী মাদ্রাসার নতুন ঘর তোলার হিড়িক
বুধবার ● ১৫ জানুয়ারী ২০২০


আমতলীতে ইবতেদায়ী মাদ্রাসার নতুন ঘর তোলার হিরিক

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলার অস্তিত্বহীন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার নতুন ঘর তোলার হিড়িক পরেছে। বিগত বছর অক্টোবর মাসে সরকার কর্তৃক এমপিও ভুক্তির ঘোষানা দেয়ার পরেই স্থানীয় একদল অসাধুচক্র রাতারাতি এ ঘর তুলছেন। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, আমতলী ও তালতলী উপজেলায় ১৯৯৫ সালের দিকে ২০ টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা ছিল। তখন থেকেই ওই মাদ্রাসা গুলো স্থানীয় লোকের দান-অনুদানে পরিচালিত হয়ে আসছে। ২০০০ সালে এসে ওই মাদ্রাসা গুলোকে সরকার নিবন্ধনের আওতায় এনে ৫’শ টাকা ভাতা দেয়া শুরু করে। ওই সময় থেকেই ওই ২০ টি মাদ্রাসা কোনমতে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলে আসছে। ওই স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা গুলোর মধ্যে ১৬ টি মাদ্রাসায় ২০১৬ সাল থেকে উপ-বৃত্তির আওতায় আনে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। গত বছর অক্টোবর মাসে সরকার স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা গুলোকে এমপিওভুক্তির আওতায় আনার ঘোষনা দেয়। এ ঘোষণার পরে নড়ে চড়ে বসে একটি অসাধুচক্র। তারা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসকে ম্যানেজ করে সমাপনী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্য মাদ্রাসার নাম অন্তর্ভুক্ত করে ভুয়া শিক্ষার্থী দেখিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করে। গত নভেম্বর মাসের সমাপনী পরীক্ষায় আমতলী উপজেলায় ৬৪টি মাদ্রাসা থেকে ৬’শ শিক্ষার্থী এবং তালতলী উপজেলা ৩৯টি মাদ্রাসা থেকে ৪’শ ২১শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। ওই পরীক্ষার্থীরা অন্য মাদ্রাসা থেকে ভুয়া পরীক্ষার্থী হিসেবে অংশ গ্রহণ করেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। অস্তিত্বহীন ওই মাদ্রাসা গুলোকে এমপিও ভুক্তির আওতায় আনার জন্য এ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন একটি কুচক্রিমহল। সমাপনী পরীক্ষা শেষে গত বছর ডিসেম্বর মাসে তরিগড়ি করে রাতারাতি ঘর তুলে ফেলেছে। কিন্তু বার্ষিক পরীক্ষায় ওই মাদ্রাসাগুলো থেকে কেউ অংশ গ্রহণ করেনি। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, একটি মহল বেকার যুবকদের বেকারত্বকে পুঁজিকরে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
টিয়াখালী গ্রামের আবদুল রাজ্জাক হাওলাদার বলেন, অস্তিত্বহীন উত্তরপুর্ব টিয়াখালী স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসায় চাকুরী দেয়ার নাম করে প্রধান শিক্ষক আবু তালেব দুই জনের কাছ থেকে তিন লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মোঃ আবু তালেব বলেন, শাহীন গাজীকে মাদ্রাসা চাকুরী দেয়া হয়েছে কিন্তু তার কাছ থেকে কোন টাকা নেইনি।
বুধবার আমতলীর চাওড়া ইউনিয়নের চাওড়া চালিতাবুনিয়া এলাকা ঘুরে দেখাগেছে, চালিতাবুনিয়া আদর্শ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা নামে একটি নতুন ভবন তোলা হয়েছে। ওই ভবনের মধ্যে চেয়ার, টেবিল ও বেঞ্চ নেই। ভবনটিতে তালা দেয়া। সরল মাটিতে ঘর তোলা। নেই কোন ভিটি।
চালিতাবুনিয়া গ্রামের গাজী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এই স্থানে কিছুই ছিলনা। গত মাসের শেষের দিকে ঘুম থেকে জেগে দেখি একটি ঘর তোলা। পরে দেখি সাইন বোর্ড টানানো একটি মাদ্রাসার নামে।
জমিয়াতুল মোদাররেসিন আমতলী উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, অস্তিত্বহীন মাদ্রাসাগুলোর প্রায় ঘরই নতুনকরে তোলা।
আমতলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মজিবুর রহমান বলেন, সরেজমিনে তদন্তে গিয়ে অনেক স্বতন্ত্র মাদ্রাসাই নতুন ঘর তুলতে দেখেছি। তিনি আরো বলেন, গত বছর ডিসেম্বর মাসে অনেক মাদ্রাসায় বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেছে মর্মে আমার কাছে প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা দেখাতেপারেনি।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, নতুর ঘর তোলার কথা শুনেছি। নতুন ঘর তুললেই এমপিও ভুক্তির সুপারিশ করা হবেনা। সরেজমিনে তদন্ত করে যেই সকল মাদ্রাসার অবকাঠামো, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী রয়েছে সেই সকল মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির জন্য সুপারিশ করা হবে।

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২১:১২:৩৯ ● ৩৭৪ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ