গোপালগঞ্জ বশেমুরবিপ্রবি’র ভিসি অপসারণের দাবিতে চলছে আন্দোলন

প্রথম পাতা » ঢাকা » গোপালগঞ্জ বশেমুরবিপ্রবি’র ভিসি অপসারণের দাবিতে চলছে আন্দোলন
রবিবার ● ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯


শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশনসহ শান্তিপূর্ণ আন্দোলন
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি ॥
গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনের অপসারণের দাবিতে চলছে আমরণ অনশনসহ শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। এ আন্দোলনের চতুর্থ দিনে রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনশনরত শিক্ষার্থীরা তাদের ওই এক দফা, এক দাবি জানিয়ে এ ভিসি’র অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবেই বলে ঘোষণা দিয়েছে।

উদ্ভুত পরিস্থিতে শিক্ষার্থী-আন্দোলন থামাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শনিবার সকাল ১০ টার মধ্যে শিক্ষার্থীদেরকে আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়; কিন্তু শিক্ষার্থীরা হল ত্যাগ করেনি। শুক্রবার রাতেই সকল হলে ডায়নিং বন্ধ করে দেয়া হয়। শনিবার ভোর থেকে হলসমূহের বিদ্যুৎ ও পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসহ সকল প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতের সড়কে সব ধরণের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। তাতেও যখন শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের পথ ছাড়েনি, তখন ভিসি সমর্থিত পেটোয়া বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়, তাদের অন্ত:ত ১৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়; অনেকে পানি ঝাঁপিয়ে, বিল পাড়ি দিয়ে প্রাণ বাঁচায়। কিন্তু তারপরও শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাস ছাড়েনি। বরং তাদের আন্দোলন ক্রমেই বেগমান হয়ে ওঠে এবং উৎকণ্ঠা, উত্তেজনা ও আশঙ্কার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে ভিসি-বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে।

এদিকে গোপালগঞ্জ বশেমুরবিপ্রবি’র এসব খবরে খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদের ঝড় ও গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের ফলে শনিবার বিকেল নাগাদ ভিসি-সমর্থিত বহিরাগতরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা পুনরায় শান্তিপূর্ণ আমরণ অনশনসহ আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে।

পরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর হামলার দায় এড়াতে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোঃ নূরউদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে হামলার বিষয়টি তদন্তের জন্য তিন-সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত-কমিটি করে পাঁচ-কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

রবিবার বেলা ১২ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের অনশনসহ চলমান আন্দোলনে ইউনিয়নবাসী নিয়ে একাত্মতা ঘোষণা করেন পার্শ্ববর্তী গোবরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী সফিকুর রহমান (টুটুল)। এর কিছুক্ষণ পরই সেখানে যান গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী এমদাদুল হক, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান, সহ-সভাপতি শেখ রুহুল আমীন, প্রচার সম্পাদক বদরুল আলম বদর, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও গোপালগঞ্জ পৌর-মেয়র কাজী লিয়াকত আলী লেকু, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মিটু, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা সোলায়মান বিশ্বাস, জেলা যুবলীগ সভাপতি জি এম সাহাবুদ্দিন আযম, সাধারণ সম্পাদক এম বি সাইফ বি মোল্যা ও জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুল হামিদ সহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতৃবৃন্দ। সেখানে তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রেখে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ মুহূর্তে দেশের বাইরে আছেন, তিনি দেশে ফিরলেই এ বিষয়টির সমাধান করা হবে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী দেশে না ফেরা পর্যন্ত তারা শিক্ষার্থীদেরকে এ আন্দোলন বন্ধ রাখার অনুরোধ জানান। কিন্তু একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা সে অনুরোধ অগ্রাহ্য করলে নেতৃবৃন্দ সেখান থেকে চলে আসেন এবং শিক্ষার্থীরা পুনরায় একইভাবে শান্তিপূর্ণ অনশন কর্মসূচীসহ ভিসি-বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে।

সর্বশেষ পাওয়া খবরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অবস্থান রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে। সেখানে অবস্থান নিয়ে ভিসি’কে বিএনপি-জামাত পন্থী উল্লেখ করে তার দূর্ণীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, ভর্তি ও নিয়োগ বাণিজ্য সহ নানা অভিযোগ তুলে তারা দফায় দফায় স্লোগান দিচ্ছে এবং ভিসি’র অপসারণ দাবি করছে।

রবিবার বিকেল ৪ টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, তাদের একটাই দফা, একটাই দাবী। এ ভিসি’র অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবেই। তারা আরও জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণাসহ আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশ দিলেও শিক্ষার্থীরা হল ত্যাগ করেনি। গত রাতে দেড়টার দিকে তাদের আবাসিক হলে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ শুরু হয়েছে। তবে হলগুলোর কোন ডায়নিং এখনও খোলা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মুখভাগে কিছু খাবার হোটেল থাকলেও সেগুলো বন্ধ রয়েছে। নিকটবর্তী ঘোনাপাড়া মোড় ও গোপালগঞ্জ শহরের বিভিন্ন হোটেল থেকে খাবার কিনে এনে তারা কোনরকমে জীবন চালাচ্ছে। বৃহত্তর স্বার্থে শিক্ষার্থীরা হল ত্যাগ করে বাড়ি যায়নি কেউ। সাধারণ সব শিক্ষার্থীই স্বত:স্ফূর্তভাবে এ আন্দোলনে শরীক রয়েছে।

শিক্ষার্থীরা আরও জানিয়েছে, আন্দোলন চলাকালীন শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দায়ী করে ইতিমধ্যে সহকারী প্রক্টর মোঃ হুমায়ন কবির স্বীয় পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি বড় অংশ তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। দুপুরের পর খুলনাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু প্রাক্তণ শিক্ষার্থী গোপালগঞ্জে এসেছেন এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। তাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওই এক দফা এক দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।

এদিকে এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইল নিয়ে পালানোর সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হাতে আটক হন এক বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, প্রশাসনিক ভবনের গেট তালাবদ্ধ থাকলেও ওই কর্মকর্তা দেয়াল বেয়ে ভবনে প্রবেশ করে ফাইল নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। নিশ্চয়ই কোনে বড় ধরণের দূর্নীতির তথ্য লোপাটের জন্য তিনি ফাইল চুরি করতে চেয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের হাতে আটককৃত ওই কর্মকর্তা জানান, তার নাম ইঞ্জিনিয়ার নাঈম এবং তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার হিসেবে কর্মরত। উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে তাদের একটা মিটিং রয়েছে, তাই তিনি দেয়াল বেয়ে ফাইল আনতে যান।

এইচবি/কেএস

বাংলাদেশ সময়: ১৭:১৩:৪২ ● ৩২৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ