
সাগরকন্যা প্রতিবেদক, গৌরনদী (বরিশাল)
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর মদিনা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিজারিয়ান অপারেশনের পর সাথী আক্তার পরী (২২) নামে এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়েছে। পরিবার অভিযোগ করেছে, চিকিৎসকের অবহেলা, জরুরি সরঞ্জামের অভাব ও দায়িত্বহীনতার কারণে তার মৃত্যু ঘটে। এ ঘটনায় স্বামী ইমন আকন ওই ক্লিনিকের ডাক্তারসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৭/৮ জনকে আসামি করে আজ রবিবার সকালে গৌরনদী থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার নাম উল্লেখিত আসামিরা হলেন- বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের সার্জন ডা. শমিরন হালদার, ক্লিনিকের মালিক এনামুল হক ডালিম ও মো. সাব্বির হোসেন এবং ডিএমএফ ডা. মো. ইসমাইল হোসেন আকাশ। মামলা গ্রহণের পর পুলিশ ক্লিনিকটি তালাবদ্ধ করে সিলগালা করে রেখেছে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, শনিবার বেলা ১১টার দিকে প্রসব ব্যথা শুরু হলে সাথীকে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ক্লিনিকের চেম্বার চিকিৎসক ডা. রাজিব কর্মকার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানান, নরমাল ডেলিভারি সম্ভব নয়, সিজার করতে হবে। ওইদিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সার্জন ডা. শমিরন হালদার অপারেশন সম্পন্ন করেন। কিন্তু অপারেশনের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হয়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে সাথী আক্তার পরীকে ওয়ার্ডে আনা হয়, তখন তার শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে পরিবারের সদস্যরা অক্সিজেনের জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ জানায়, অক্সিজেন সিলিন্ডার নেই। পরে এক স্টাফ অক্সিজেন আনতে গিয়ে ফিরে আসেননি। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্লিনিকের কর্মচারীরা পালিয়ে যান।
পরীর স্বামী ইমন আকন অভিযোগ করে বলেন, যথাসময়ে চিকিৎসা ও জরুরি অক্সিজেন না পাওয়ায় আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। ডাক্তারের অবহেলা ও ক্লিনিকের দায়িত্বহীনতা সরাসরি এই মৃত্যুর জন্য দায়ী।
এদিকে, এ ঘটনার পর এলাকাবাসী ক্লিনিকে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে তালা লাগিয়ে দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ক্লিনিকের মালিক এনামুল হক ডালিম সাগরকন্যাকে বলেন, এ ক্লিনিকে আমরা ৬ জন মালিক। বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের সার্জন ডা. শমিরন হালদার সফলভাবে সিজার সম্পন্ন করেছেন। অতিরিক্ত ব্লাডিং হওয়ায় রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানোর প্রস্তুতি চলছিল। মৃত্যুর বিষয়টি ডাক্তারই বলতে পারবেন।
গৌরনদী থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. ওয়ালিউল্লাহ সাগরকন্যাকে বলেন, ডাক্তারসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ৩০৪ (ক) ধারা অনুযায়ী মামলা হয়েছে। মামলার আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মরদেহের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. সাহতা জারাব সালেহিন বলেন, ক্লিনিকটির লাইসেন্স নবায়ন নেই। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এএসআর/এমআর