
জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী)
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে ১৩ কিলোমিটার পূর্বে সবুজে ঘেরা এক মনোরম স্থান এখন পর্যটকদের কাছে পরিচিত হচ্ছে ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’ হিসেবে। সমুদ্রের ঢেউ, সবুজ বনভূমি, লেক আর মুক্ত আকাশের মিলনে গড়ে ওঠা এই স্পটটি দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
স্থানীয় ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকেরা এখানে তাঁবু টাঙিয়ে রাত কাটাচ্ছেন। একই স্থানে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায়। সূর্যাস্তের সময় সবুজ বনের বুকে সূর্যটি হারিয়ে যাওয়া দৃশ্য পর্যটকদের মুগ্ধ করছে।
কুয়াকাটার ট্যুর গাইড আবুছালেহ সাগরকন্যাকে জানান, প্রথমে আমরা কয়েকজন এটাকে ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’ বলতাম। পরে ব্লগার মি.লাক্সছু এখানে আসেন। মোটরসাইকেলে তাকে ঘুরিয়ে দেখাই। ভিডিও ধারণের পর তিনি ব্লগে ‘মিনি সুইজারল্যাণ্ড’ হিসেবে উল্লেখ করেন। এরপর থেকে নামটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
তবে কিছু পর্যটকের অসচেতন আচরণ- সাউন্ডবক্স বাজানো, অপচনশীল প্লাস্টিক ফেলা- ইত্যাদি কারণে এখান পরিবেশের সৌন্দর্য নষ্ট করছে।
ঢাকা থেকে আসা নুরসাত ও সোহান বলেন, এমন জায়গা খুব কমই দেখা যায় যেখানে এক স্থানে সূর্যোদয় ও লেক দুটোই দেখা যায়। পর্যটক রায়হান বলেন, মিনি সুইজারল্যান্ডে এসে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছি। এখানকার নীরবতা আর হালকা মৃদুমন্দ বাতাস অন্যরকম শান্তি দেয়।
ব্লগার মি.লাক্সছু বলেন, প্রথমে জায়গাটি তেমন পরিচিত ছিল না। চারদিকে সবুজ গাছ, নীল আকাশ, সমুদ্রের শান্ত ঢেউ- সব মিলিয়ে এক অপার্থিব সৌন্দর্য নজরে পড়েছে। মনে হলো, এটি বাংলাদেশের লুকানো এক টুকরো সুইজারল্যান্ড। ব্লগে পরিচয় করানোর পর স্থানটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
পরিবেশবাদী সংগঠন উপরা’র আহ্বায়ক কে এম বাচ্চু বলেন, সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় এটি দেশের অন্যতম পর্যটন স্পটে পরিণত হতে পারে। এখনই এখানকার পরিবেশ রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন আমির বলেন, মিনি সুইজারল্যাণ্ডে ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র গড়ে উঠলে স্থানীয় অর্থনীতি চাঙা হবে ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
কুয়াকাটা পৌর প্রশাসক ইয়াসীন সাদেক সাগরকন্যাকে বলেন, পর্যটনবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সড়ক সংযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কাউছার হামিদ বলেন, মিনি সুইজারল্যাণ্ডকে ঘিরে সম্ভাব্য পর্যটন প্রকল্পের প্রাথমিক পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণে সমন্বিতভাবে কাজ করা হবে।
সবুজ প্রকৃতি, শান্ত পরিবেশ ও সমুদ্রের মায়ায় মোড়া কুয়াকাটার মিনি সুইজারল্যাণ্ড এখন নতুন প্রাণ পাচ্ছে। প্রকৃতির সৌন্দর্য অক্ষুণ্ণ রাখতে প্রয়োজন সচেতনতা, পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ- এমনটি মনে করছেন ভ্রমণপিপাসুরা।