
সাগরকন্যা প্রতিবেদক, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী)
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসীমার কাছে বঙ্গোপসাগরে জেলের জালে ধরা পড়েছে বিরল প্রজাতির সম্রাট অ্যাঞ্জেলফিশ (Pomacanthus imperator)। গত ৪ আগস্ট জেলে আনোয়ার মাঝির জালে এই মাছটি ধরা পড়ে। প্রায় চারদিন বরফে সংরক্ষণ করার পর রবিবার সকালে মহিপুর বন্দরে মাছটি আনা হয়। উৎসুক মানুষজন মাছটি দেখতে মৎস্য বন্দরে ভিড় জমায়। অনেকেই এটিকে ‘অ্যাকুরিয়াম ফিশ’ নামেও জানেন।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, রঙিন ও দৃষ্টিনন্দন এই মাছটি মূলত উষ্ণমণ্ডলীয় প্রবাল প্রাচীরের আশপাশে বাস করে। মাছটির গড় আকার প্রায় ১৬ ইঞ্চি। গাঢ় নীল পটভূমিতে হলুদ রঙের অনুভূমিক দাগ এবং মুখে নীল-কালো মাস্কের মতো ছাপ থাকে।
জেলে আনোয়ার জানান, এক সপ্তাহ আগে ‘এফবি জারিফ তারিফ’ নামের ফিশিং ট্রলারে অন্যান্য মাছের সঙ্গে এটি ধরা পড়ে।
স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী সোবহান শিকদার বলেন, এ ধরনের মাছ আগে কখনো দেখিনি। দেখতে একুরিয়ামের মাছের মতো সুন্দর। বাসার সবাইকে দেখানোর জন্য এর ছবি নিয়েছি।
আরেক মৎস্য ব্যবসায়ী ছগির আকন জানান, প্রথমে মাছটি বাসায় নিয়ে গিয়েছিলাম। তবে এ ধরনের মাছ আমার কাছে নতুন। খাওয়ার উপযোগী কিনা জানি না।
ওয়ার্ল্ডফিশ বাংলাদেশের গবেষণা সহকারী মোঃ বখতিয়ার রহমান বলেন, অ্যাঞ্জেলফিশ একটি রঙিন ও সুন্দর সামুদ্রিক মাছ। এর প্রাকৃতিক আবাস ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের প্রবাল প্রধান এলাকা। মাছটির গড় আকার সর্বোচ্চ ৪০ সেমি (১৬ ইঞ্চি) পর্যন্ত হতে পারে।
তিনি আরও জানান, মাছটি সাধারণত প্রবাল প্রধান, লবণাক্ত ও উষ্ণ জলীয় অঞ্চলে বাস করে। বঙ্গোপসাগরের উপকূলে এই ধরনের মাছ খুব কম ধরা পড়ে, কারণ আমাদের উপকূলীয় এলাকা কাদামাটি ও বালুময়। তবে বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে কিছু প্রবাল প্রধান এলাকা রয়েছে, যা আন্দামান সাগর ও মায়ানমার উপকূলের কাছে অবস্থিত।

বখতিয়ার রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও স্রোতের ধরণ বদলানোর কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু সামুদ্রিক প্রজাতি তাদের আবাসস্থল বাড়াচ্ছে। তাই হয়তো এই মাছটি বাংলাদেশের জেলেদের জালে ধরা পড়ছে।
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, অ্যাঞ্জেলফিশ বিরল প্রজাতির মাছ, যা সাধারণত উপকূলে দেখা যায় না। এটি মূলত গভীর সমুদ্রে বাস করে। বিভিন্ন প্রজাতির মাছের সঙ্গে এটি জেলের জালে ধরা পড়া জেলেদের জন্য সুখবর।