
পটুয়াখালীর কলাপাড়া-কুয়াকাটা এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণ ও ট্রান্সফরমার চুরির একের পর এক ঘটনায় বাসিন্দারা এখন গভীর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। প্রতি রাতেই কোথাও না কোথাও ঘটছে এমন কোনো অপরাধ, যার পরিণতি মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলছে। স্থানীয়দের দাবি- এ যেন এক ধরনের অপরাধচক্রের নিয়ন্ত্রিত রাজত্ব, যেখানে প্রশাসনের তৎপরতা দৃশ্যমান নয়।
রোববার দিবাগত রাতে কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের নাওভাঙ্গা গ্রামে পুরো পরিবারকে চেতনানাশক স্প্রে দিয়ে অচেতন করে দুর্বৃত্তরা। ঘর থেকে লুট হয় তিন ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ দুই লাখ টাকা। ভুক্তভোগী সহিদুল ইসলাম ও তার পরিবার বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
একই রাতে, টিয়াখালী ইউনিয়নের পশ্চিম রজপাড়ার আবদুস সোবাহানের বাড়িতেও ডাকাতি হয়। ডাকাতরা বাড়ির সবাইকে হাত-পা বেঁধে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
এর কয়েকদিন আগে, কলাপাড়ার বালিয়াতলী ইউনিয়নে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে আন্তঃজেলা চোরচক্রের দুই সদস্য। পুলিশ আরও কয়েকজনকে শনাক্ত করে, যারা এই অঞ্চেলাসহ বরগুনার বিভিন্ন এলাকায় ট্রান্সফরমার চুরি করে আসছিল।
আরও ভয়ংকর এক ঘটনা ঘটে ১৩ জুলাই গভীর রাতে, যখন কলাপাড়ার টিয়াখালীতে শিক্ষক তরিকুল ইসলাম সুনানের বাসায় ডাকাতির সময় তার আমেরিকাপ্রবাসী স্ত্রী নিশাত তাবাসসুমকে মারধর করা হয়। একই রাতে, সেই বাড়িতেই যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এক নববধূকে অস্ত্রের মুখে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে, যা দেশের সামাজিক নিরাপত্তা ও মানবিক মূল্যবোধকে গভীরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
এই সব ঘটনা স্পষ্ট করে দেয়- কলাপাড়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। পুলিশ কখনো ঘটনাস্থলে যাচ্ছে, সন্দেহভাজন আটক করছে, আবার কখনো শুধু তদন্তের আশ্বাস দিচ্ছে- কিন্তু অপরাধের গতি কমছে না, বরং বাড়ছেই। সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা ও সহ্যশক্তি দুই-ই ভেঙে পড়ছে।
এই অবস্থায় আমাদের উপলব্ধি করতে হবে- এটি শুধু বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার সমষ্টি নয়, বরং পরিকল্পিত অপরাধচক্রের ধারাবাহিক অপারেশন। তাদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তৎপরতা, গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক রূপ নেবে।