বানারীপাড়ায় লেগুনার যাত্রী ধর্ষণ ঘটনায় গ্রেফতার-১

প্রথম পাতা » বরিশাল » বানারীপাড়ায় লেগুনার যাত্রী ধর্ষণ ঘটনায় গ্রেফতার-১
বৃহস্পতিবার ● ৮ আগস্ট ২০১৯


বানারীপাড়ায় লেগুনার যাত্রী ধর্ষণ ঘটনায় গ্রেফতার-১

বানারীপাড়া (বরিশাল) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

বানারীপাড়ায় লেগুনা যাত্রী ধর্ষনের ঘটনায় চালক আব্দুর রাজ্জাক সহ দু’জনকে আসামী করে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বুধবার রাতে ভিকটিমের মামা ও নাজিরপুর উপজেলার পূর্ব গাওখালী এলাকার মাছ ব্যবসায়ী মো. আলাউদ্দিন মাঝি বাদী হয়ে ধর্ষক লেগুনা চালক রাজ্জাক ও মাসুম সহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে বানারীপাড়া থানায় এ মামলা দায়ের করেন। পুলিশ এ ঘটনার মূল নায়ক ও ধর্ষন মামলার প্রধান আসামী আব্দুর রাজ্জাককে বুধবার বিকেলে মলুহার এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছেন। পর দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে কোর্ট হাজতে প্রেরণ করার পাশাপশি ধর্ষক আদালতের বিজ্ঞ বিচারকের কাছে ১৬৪ ধারায় ধর্ষনের শিকারোক্তি মূলক জবাবনবন্ধি রেকর্ড করেছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) মো. জাফর আহম্মদ বলেন, ধর্ষক আব্দুর রাজ্জাককে বৃহস্পতিবার আদালতে ধর্ষনের শিকারোক্তি মূলক জবাবনবন্ধি রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া ওই দিন ভিকটিমকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন করার পাশাপশি সেখানে তাকে ভর্তি করা হয়েছে। ভিকটিম’র চিকিৎসা শেষে শারিরীক ভাবে সুস্থ্য হয়ে ওঠার পর আদালতে ২২ ধারায় তার জবানবন্ধি রেকর্ড করা হবে।
এ বিষয়ে মামলা সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে ভিকটিম (২০) বানারীপাড়া উপজেলার চৌমোহনা বাজার থেকে বাড়িতে যাওয়ার পথে দু’দফা ধর্ষনের শিকার হন। এ ঘটনার পর বুধবার সকালে স্থানীয় কতিপয় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাকে মারপিট করেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল আলীম সহ একাধিক ব্যক্তি জানান, বুধবার সকালে বানারীপাড়া উপজেলার ইলুহার ইউনিয়নের মলুহার তালুকদার উলা খেয়াঘাট সংলগ্ন লেগুনা স্ট্যান্ডের একটি রেষ্টুরেন্টে লেগুনা চালক মাসুমের হেলপার রমজান আলীকে অন্য উপজেলার এক যুবতীকে পরোটা খাওয়া হচ্ছে। স্থানীয়দের এ বিষয়টি দেখে সন্দেহ হলে তাদেরকে বিভিন্ন রকম প্রশ্ন করার পাশাপাশি চরথাপ্পর ও মারপিট করেন। এক পর্যায়ে ভিকটিম পূর্বের রাতে ধর্ষনের ঘটনার বিষয়টি প্রকাশ করেন। পরে স্থানীয়রা ওই ঘটনাটি বানারীপাড়া থানা পুলিশকে অবহ্নিত করেন। খবর পেয়ে লবনসাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের আইসি মো. আবুল খায়ের ও এস.আই সুজিৎ কুমার ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিকটিমকে উদ্ধার ও ধর্ষক লেগুনা চালক আব্দুর রাজ্জাককে আটক করেন।
এদিকে পুলিশ হেফাজতে ভিকটিম জানান, মঙ্গলবার রাত সোয়া ৭টার দিকে সে বানারীপাড়া উপজেলার চৌমোনা বাজার থেকে রাজ্জাকের লেগুনায় ওঠেন এবং তার পশের ছিটে বসেন। এ সময় সে লেগুনা চালক আব্দুর রাজ্জাকের কাছে তার সাথে ভাড়ার টাকা না থাকার বিষয়টি প্রকাশ করেন। পরে লেগুনা চালক আব্দুর রাজ্জাক তাকে তালুকদার উলার লেগুনা স্ট্যান্ডে না নামিয়ে দিয়ে তার নিজ বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যওয়ার কথা বলেন। এ সময় আব্দুর রাজ্জাক তাকে রাতের খাবার খাইয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য ভাড়ার টাকা দিয়ে নিরাপদে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়ার কথা বলে তাকে রাজি করেন। এক পর্যায়ে ওই যুবতী লেগুনা চালক রাজ্জাকের সাথে তার বাড়ি যেতে রাজি হন এবং আব্দুর রাজ্জাক তার সরলতার সুযোগ বুঝে ওই রাত ৮টার দিকে জনতা বাজারে লেগুনা রেখে ভিকটিমকে তার বাড়িতে না নিয়ে ইলুহার ইউনিয়ের মলুহার গ্রামের ৬নং ওয়ার্ডের  চাচাতো ভাই আব্দুর রশিদ’র একটি পরিত্যাক্ত ঘরে নিয়ে যান। সেখানে লেগুনা চালক আব্দুর রাজ্জাক তাকে দু’দফা ধর্ষন করেন। পরে আব্দুর রাজ্জাক তাকে ওই রাত ১০টার দিকে ইলুহার’র জনতা বাজারে নিয়ে যান এবং সেখান থেকে ভিকটিমকে বিশারকান্দিগামী একটি লেগুনায় তুলে দিয়ে তালুকদার উলা লেগুনা স্ট্যান্ডে নামিয়ে দেয়ার জন্য চালক মাসুমকে অনুরোধ করেন। পরে মাসুম তাকে তালুকদার উলা লেগুনা স্ট্যান্ডে নামিয়ে দেন এবং তার হেলপার রমজানকে দিয়ে উক্ত ভিকটিমকে বৈঠাকাটার খেয়ায় উঠিয়ে দিতে বলেন। লেগুনার হেলপার রমজান আলী খেয়া না থাকায় তাকে নিয়ে সেখানের একটি পরিত্যাক্ত ঘরে রাত কাটান। পর দিন সকালে হেলাপার রমজান আলী ভিকটিমকে নিয়ে সেখানের একটি রেস্টুরেন্টে নাস্তা খেতে বসেন। এ সময় স্থানীয়রা রমজানের সাথে ভিকটিমকে দেখে বিভিন্ন রকম প্রশ্ন ও মারপিট করেন। এ সময় ভিকটিম তাদের কাছে ধর্ষনের কথা শি^কার করেন।
এদিকে খবর পেয়ে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় লবনসাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের আইসি মো. আবুল খায়ের উপজেলার ইলুহার এলাকার তালুকদার উলা থেকে ভিকটিমকে উদ্ধার ও ধর্ষক লেগুনা চালক আব্দুর রাজ্জাক (৩৫)কে আটক করেন।
এ বিষয়ে উদ্ধারকারী পুলিশ কর্মকর্তা আবুল খায়ের বলেন, ভিকটিম তার পিত্রালয়ের নাম-ঠিকানা বলার সময় অসংলগ্নতার কারনে বুধবার বিকেলে তারা সঠিক নাম-ঠিকানা যাচাই করার জন্য নাজিরপুর উপজেলার গাওখালী এলাকায় যান। সেখান থেকে ভিকটিমের লিগাল গার্ডিয়ান পাওয়ার পর ওই ঘটনায় তার মামা আলাউদ্দিন মাঝি বাদী হয়ে থানায় একটি ধর্ষন মামলা দায়ের করেন।
এ বিষয়ে বানারীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. খলিলুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে দ্রুত ভিকটিমকে উদ্ধার করে শারিরীক চিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি তার ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া ওই ঘটনার মূল নায়ক লেগুনা চালক আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

জিএমআর/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৯:১৪:২৩ ● ৪১৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ