কিশোরীর আত্মহননের দায় কার?

প্রথম পাতা » সম্পাদকীয় » কিশোরীর আত্মহননের দায় কার?
শনিবার ● ১৪ জুন ২০২৫


 

---

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ঘটে যাওয়া স্কুলছাত্রী নাসিমা আক্তারের আত্মহত্যার ঘটনা আমাদের সমাজে চলমান এক গভীর মনস্তাত্ত্বিক সংকটের প্রতিচ্ছবি। পারিবারিক বকুনির পর এক শিক্ষার্থীর আত্মহননের পথ বেছে নেওয়া শুধু একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা নয়—এটি একটি সতর্ক সংকেত, যা আমাদের পারিবারিক, সামাজিক এবং শিক্ষাগত কাঠামোকে নতুন করে মূল্যায়নের আহ্বান জানায়।

 

মাত্র ১৫ বছর বয়সী নাসিমা চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। কৈশোরের সূক্ষ্ম ও সংকটময় সময়ে মায়ের সঙ্গে সামান্য বকাঝকাই তাকে ঠেলে দিল জীবনের ইতি টানার মতো এক কঠিন সিদ্ধান্তে। এ প্রশ্ন ওঠে—কী এমন মানসিক চাপ, হতাশা বা অব্যক্ত যন্ত্রণার ভারে সে এতটা ভেঙে পড়ল?

 

আমরা কি আমাদের সন্তানদের অনুভূতি বুঝতে শিখেছি? না কি এখনও সন্তানদের প্রতি কঠোরতা, উপেক্ষা ও শাসনের ছায়াতেই অভিভাবকত্বের পরিচয় দিই? সমাজে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে, বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে। এ অবস্থা প্রমাণ করে, আমরা যতই প্রযুক্তি ও শিক্ষা ব্যবস্থায় উন্নয়ন দাবি করি, মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে আমাদের প্রস্তুতি ততটাই দুর্বল।

 

শুধু পরিবার নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সমাজ ও রাষ্ট্রকেও এ দায় এড়ানো চলে না। কিশোর বয়সের মানসিক গঠন, চাপ মোকাবিলা করার কৌশল, হতাশা থেকে মুক্তির উপায়—এসব নিয়ে আলোচনা ও সহমর্মিতার পরিবেশ গড়ে তুলতে না পারলে এমন আত্মহননের খবর প্রতিদিনই শোনা যাবে।

 

এই ঘটনায় আমরা শোকাহত, কিন্তু শোকই শেষ কথা নয়। আমাদের ঘরে, স্কুলে ও সমাজে এক মানবিক, সহনশীল ও শ্রবণশীল পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে, যেখানে কিশোর-তরুণরা নিজেদের একাকী ভাববে না, নিজেকে বোঝাতে পারবে। আর সবচেয়ে বড় কথা, শাসনের বদলে সন্তানদের সঙ্গে ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলার সময় এখনই।

 

বাংলাদেশ সময়: ১৭:০৪:৫৩ ● ৯৬ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ