তালতলীতে ইউপি সদস্যের মারধরে জেলের মৃত্যু!

প্রথম পাতা » বরগুনা » তালতলীতে ইউপি সদস্যের মারধরে জেলের মৃত্যু!
বৃহস্পতিবার ● ১২ জুন ২০২৫


তালতলীতে ইউপি সদস্যের মারধরে জেলের মৃত্যু!

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

বরগুনার তালতলী উপজেলার বড়বগী ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ড সদস্য মোঃ জসিম উদ্দিন মোল্লার দুই দফায় মারধরের দুইদিন পর বুধবার রাতে জেলে ওবায়দুল হাওলাদার (৪০) মারা গেছেন। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ইউপি সদস্য জসিম মোল্লা নিহতের পরিবারকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে দিনভর চলছে নাটকীয়তা। পুলিশ লাশের ময়না তদন্ত করতে চাচ্ছে কিন্তু পরিবার ময়না তদন্ত করতে রাজি না। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে পরিবার ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি চেয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন বলে দাবী করেন স্ত্রী মিলি বেগম।  এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনা ঘটেছে তালতলী উপজেলার চরপাড়া এলাকায়। ওইদিন বিকেল সারে চারটা পর্যন্ত লাশ  পুলিশ পাহারায় ওই বাড়ীতে আছে।
বরগুনা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সজল চন্দ্র শীল বলেন, এ বিষয়ে কোন আবেদন পাইনি।  তবে পুলিশ ময়না তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন। যেহেতু এটা স্বাভাবিক মৃত্যু না।
জানাগেছে, তালতলী উপজেলার বড়বগী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গত ৫ জুন জেলেদের চাল বিতরন করা হয়। ওই সময় জেলে ওবায়দুল হাওলাদারকে ইউপি সদস্য জসিম মোল্লা চাল দেয়নি। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এতে ক্ষুব্দ হয়ে ইউপি সদস্য ওই দিন তাকে মারধর করে। পরে ইউপি সচিব ইমরান মাষ্টার রোল দেখে তাকে চাল দেন। এর জের ধরে গত সোমবার নতুন বাজার এলাকায় পেয়ে ইউপি সদস্য জসিম মোল্লা জেলে ওবায়দুলকে দ্বিতীয় দফায় মারধর করে। এ ঘটনায় ওবায়দুল তালতলী থানায় অভিযোগ দেন। বুধবার রাতে ওবায়দুল অসুস্থ হয়ে বাড়ীতে মারা যান। বৃহস্পতিবার দুপুরে সহকারী পুলিশ সুপার (আমতলী-তালতলী) সার্কেল মোঃ তারিকুল ইসলাম মাসুদ ও তালতলী থানার ওসি মো. শাহজালাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরিবারের অভিযোগ মারধরের ঘটনায় ওবায়দুল মারা গেছেন। এদিকে এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিন মোল্লা ওঠেপড়ে লেগেছেন। তিনি (্ইউপি সদস্য) ওবায়দুল হাওলাদারের পরিবারকে টাকার বিনিময়ে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। অপর দিকে ওবায়দুলের পরিবার তার লাশের ময়না তদন্ত করতে রাজি না। কিন্তু পুলিশ ময়না তদন্ত ছাড়া লাশের দাফন করতে রাজি না। এমন পরিস্থিতিতে ওইদিন বিকেলে পরিবারের লোকজন ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশের দাফন করতে বরগুনা জেলা প্রশাসকের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। দিনভর চলছে নানা নাটকীয়তা।
স্থানীয় হানিফ মিয়া ও  নুর আলম মুন্সি বলেন, জেলে ওবায়দুলের নাম মাষ্টার রোলে থাকা সত্ত্বেও ইউপি সদস্য জসিম মোল্লা তাকে চাল দেয়নি। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায় মারধর করেছে। এর জের ধরে গত সোমবার নতুন বাজার এলাকায় ওবায়দুলকে পেয়ে ইউপি সদস্য আবারো মারধর করেছে।
ওবায়দুল হাওলাদারের স্ত্রী মিলি বেগম বলেন, আমার স্বামীকে ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিন মোল্লা দুই দুই বার মারধর করেছে। এখন কিভাবে মারা গেছেন আমি জানিনা ? আমি আল্লাহর কাছে এর বিচার চাই।
ইউপি সদস্য মোঃ জসিম উদ্দিন মোল্লা বলেন, জেলে ওবায়দুল আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে অশ্লীল কথাবার্তা বলে বেড়াতো। তাই আমি তাকে দুই একটি ধাক্কা ও চর থাপ্পর মেরেছি। তবে আমার মারধরে জেলে ওবায়দুল মারা যায়নি। তিনি বাড়ীতে স্টোক করে মারা গেছেন। তিনি আরো বলেন, আমার বিরুদ্ধে জেলে ওবায়দুল পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়েছিল। পুলিশ আমাকে ডেকেছিল বিষয়টি মিমাংশা করতে।
বড়বগী ইউনিয়ন পরিষদ প্যানেল চেয়ারম্যান মাওলানা আনোয়ার হোসেন বলেন, ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিন মোল্লা গত সোমবার এক জেলেকে চাল দেয়ার ঘটনা নিয়ে মারধর করেছে।
তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ একেএম মনিরুল ইসলাম বলেন, আহত ওবায়দুল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন।
তালতলী থানার ওসি মোঃ শাহ আলম হাওলাদার বলেন, জেলে চাল দেয়াকে কেন্দ্র করে ইউপি সদস্য জসিম মোল্লা জেলে ওবায়দুলকে মারধর করেছে। গতকাল রাতে তিনি মারা গেছেন। তিনি আরো বলেন, মরদেহের ময়না তদন্ত ছাড়া দাফন করতে দেয়া যাবে না। তবে পরিবারের লোকজন বরগুনা জেলা প্রশাসকের কাছে ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশের দাফনের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন। জেলা প্রশাসকের অনুমতি পেয়ে লাশ ময়না তদন্ত ছাড়া দাফন করা হবে, নইলে ময়না তদন্ত করা হবে।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাঃ উম্মে সালমা বলেন, ইউপি সদস্যের মারধরে এক জেলে অসুস্থতার কথা শুনেছি। তারপরের ঘটনা জানিনা? এখন শুনতে পাচ্ছি তিনি মারা গেছেন।

 

 


এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২০:৫৪:৩৬ ● ৮ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ