চরফ্যাশনে ঝড়ে প্রায় ৪শ’ কোটি টাকা রবিশস্যের ক্ষয়ক্ষতি

প্রথম পাতা » ভোলা » চরফ্যাশনে ঝড়ে প্রায় ৪শ’ কোটি টাকা রবিশস্যের ক্ষয়ক্ষতি
সোমবার ● ৪ মার্চ ২০১৯


চরফ্যাশন এই ভাবে গোল আলু বিনষ্ট হয়েছে।

আমির হোসেন, চরফ্যাশন (ভোলা) থেকে॥
চরফ্যাশন উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ও টানা ৩ দিনের প্রবল বর্ষণে প্রায় ৩শ ৭৪ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নির্ধারণ করেছেন কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। এ ক্ষতির পরিমান আগামী ২ দিনের মধ্যে পূর্ণরূপে নির্ধারণ করা যাবে বলে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ঠাকুর কৃষ্ণ দাস এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ে ৫শতাধিক ঘরবাড়ীর বিধ্বস্ত হলেও কৃষি বিভাগের ক্ষতির পরিমান তাৎক্ষণিক নির্ধারণ করা সম্ভাব হয়নি। ঘূর্ণিঝড় ও বর্ষা শেষে যখন জমি রোদ্রে শুকাতে শুরু করেছে তখনই রবিশস্য চারা মরে যাচ্ছে। ফলে ক্ষতির পরিমান নির্ধারণ করা সম্ভাব হয়েছে। উপজেলার ৩০জন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের তথ্য মতে পৌরসভাসহ ২১টি ইউনিয়নের গোল আলু ২৮৮ হেক্টর, খেশারী ডাল ১হাজার ২২৬ হেক্টর, মুগ ডাল ৩হাজার ৫৮৮, মরিচ ২হাজার ১৩৫, ফেলন ডাল ২৬৮. চিনে বাদাম ১হাজার ১১০, তরমুজ ২হাজার ১৩৮, শাক-সবজি ৭০০হেক্টর জমিতে মোট  প্রায় ৩‘শ ৭৪ কোটি টাকা ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার আহম্মদপুর গ্রামের তরমুজ চাষী আলাউদ্দিন বলেন, আমি ৩ একর জমিতে তরমুজ চাষ করছি। ঘূর্ণিঝড় ও প্রচুর পরিমান বর্ষায় হওয়ায় তরমুজ অর্ধেকের বেশী বিনষ্ট হয়েছে। আর বর্ষা না হলেও চাষীগন লোকসানের মুখে পড়তে হবে। দিনমজুর, সার ক্রীটনাশকে ব্যয় হয়েছে। এখন কষ্ট কমে গেছে।  উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কামরুজ্জামান শিপন বলেন, আমি বিছিন্ন দ্বীপ মজিব নগর ইউনিয়নের দায়িত্বে রয়েছি। আমাদের এ এলাকায় কৃষকের ক্ষতির পরিমান বেশী। এখানে তরমুজ চাষীরা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ বেশী হয়েছে। বিছিন্ন দ্বীপ চরকুকরি মুকরির ইউপির চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন বলেন, ঢালচর ও কুকরি মুকরি কাচাঁ ঘরবাড়ী ঘূর্ণিঝড়ে মাটিতে পড়ে গেছে। সাধারণ চাষীদের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তার নিকট তালিকা প্রেরণ করেছি। চরফ্যাশন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনোতোষ সিকদার বলেন, অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্থ হয় দৃশ্যমান কৃষি ক্ষয়ক্ষতির পরিমনাটি নির্ধারণ করা হয় পরে। অর্থাৎ পানি শুকালে। যখন জমিতে পানি থাকে ওই সময় গাছ থাকে তরতাজা। আর পানি শুকতে থাকলে দেখা যায় রবিশস্যের চারা গুলো মরে যায়। তখনই আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগনের মাধ্যমে আমরা উপজেলায় ক্ষতির পরিমানটা নির্ধারণ করি। তবে এ সময় ঘূর্ণিঝড় ও বর্ষায় কৃষকের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এখনও ফাগুন মাস কালবৈশাখীর ছোয়া না লাগতেই বর্ষা ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ সবচেয়ে বেশী হয়েছে প্রান্তিক চাষীগন। চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা রুহুল আমীন বলেন, চাষীদের ক্ষয়ক্ষতি বেশী হয়েছে। এ ছাড়াও গুচ্ছ গ্রামের বেশ কয়েকটি ঘর ঘূর্ণিঝড়ে উড়িয়ে নিয়ে অন্যস্থানে পড়েছে।  আমরা উপজেলা প্রশাসন সরেজমিন গিয়ে তাদের তালিকা করে জেলা প্রশাসক ভোলার মাধ্যমে ত্রাণ মন্ত্রনালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। যেই ভাবে প্রতিবেদন তৈয়ারী করে দেয়া হয়েছে আশাকরি কিছু সহাযোগিতা পাব।

উল্লেখ্য, গত ২৪ ফ্রেরুয়ারি থেকে টানা ৩দিন বর্ষা ২৪ ও ২৫ ফ্রেরুয়ারী সন্ধ্যায় উপকূলীয় এলাকায় ঘুণিঝড়ে ঘরবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৫শতাধিক বিধ্বস্ত  হয়ে গেছে।  এতে প্রায় অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। ঘরের চাপা এবং ঘর ছাল উড়ে এসে অর্ধশতাধিক নারী পুরুষ আহতের সংবাদ পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ১০জনকে চরফ্যাশন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে শশীভূষণ এলাকার আলেফা বেগম(৪০)এর অবস্থা অসংখ্য জনক। তাকে ঢাকা প্রেরণ করা হয়েছে। বাকিরা হলেন, জাহানপুর এলাকার মো.শফিক মাঝি(৩৫), লালমোহন উপজেলার মালেখা বেগম(৬০), টেংরাখালী বিকস ফিল্ড রাসেল(২৮), রমজান আলী(১৫), রাজু(২৩), ফজর আলী(২৬), ইবাদুল(২০), ইয়াছিন(১৬), হাফিজুর রহমান(১৮) আহত হয়েছে।  সোমবার ভোররাত থেকে এই ঘুণিঝড়ের আঘাত হানে। শহর পর্যায়ে তেমন ক্ষয়-ক্ষতি না হলেও উপকুলীয় এলাকাগুলোতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে যেমনি কৃষকের ফসলের ক্ষতি হয়েছে তেমনি ঘরের ছাল উড়ে এবং ঘরের চাপায় পড়ে বহু নারী-পুরুষ ও শিশু আহত হয়েছিল ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪:৪৭:১৮ ● ৪২৬ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ