গ্যাটকো মামলার শুনানিতে অনুপস্থিত খালেদা জিয়া

প্রথম পাতা » রাজনীতি » গ্যাটকো মামলার শুনানিতে অনুপস্থিত খালেদা জিয়া
বুধবার ● ১৬ জানুয়ারী ২০১৯


---

সাগরকন্যা ডেস্ক॥
পায়ে ‘ফোঁড়া ওঠায়’ পরোয়ানা থাকার পরও গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানিতে হাজির করা যায়নি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে। ফলে পিছিয়ে গেছে শুনানির দিন; নতুন তারিখ ২৪ জানুয়ারি। বুধবার ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু সৈয়দ দিলজার হোসেনের আদালতে এই শুনানির দিন ছিল। এই শুনানিতে খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করতে গত ১০ জানুয়ারি প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি করেছিলেন একই বিচারক। দুর্নীতির দুই মামলায় সাজা নিয়ে গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগারে আছেন বিএনপিপ্রধান। দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, মামলার প্রধান আসামি খালেদা জিয়া কারাগারে আছেন। তাকে বুধবার হাজির করতে পারিনি। তার অনুপস্থিতিতে অন্যান্য আসামিদের পক্ষে শুনানি শুরু করার আবেদন জানিয়েছিলাম। শুনেছি তার (খালেদা জিয়া) পায়ে ফোঁড়া উঠেছে, এজন্য তিনি আসেননি। যোগাযোগ করা হলে আসামিপক্ষের আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ বলেন, খালেদা জিয়ার পায়ে একটি সমস্যা হয়েছে বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর কাছ থেকে শুনেছি। এদিন আসামিপক্ষ শুনানি পেছানোর আবেদনও করে। পরে আদালত ২৪ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করে ওইদিন সব আসামিকে আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দেয়। জরুরি বিধিমালা সংযুক্ত এ মামলার অভিযোগপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করে মামলা বাতিল চেয়ে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। রিট আবেদনের কারণে প্রায় ৮ বছর নিম্ন আদালতে বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। রিট খারিজ করে উচ্চ আদালত ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে দুই মাসের মধ্যে আত্মসমর্পণে নির্দেশ দেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশে ওই বছরের ৫ এপ্রিল আত্মসমর্পণ করে জামিন পান খালেদা জিয়া। ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর দুদকের উপপরিচালক মো. গোলাম শাহরিয়ার ১৩ জনের বিরুদ্ধে বাদি হয়ে তেজগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করেন। ২০০৮ সালের ১৩ মে মামলাটি তদন্ত করে জোট সরকারের প্রভাবশালী ৯ প্রাক্তন মন্ত্রী ও উপমন্ত্রীসহ মোট ২৪ জনের বিরুদ্ধে দুদকের উপ-পরিচালক মো. জহিরুল হুদা অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২৪ আসামির মধ্যে প্রাক্তন মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, আবদুল মান্নান ভুইয়া, প্রাক্তন মন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এবং খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রাহমান কোকো মারা গেছেন। মামলাটিতে বর্তমান আসামির সংখ্যা ২০ জন। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর দুদকের উপ-পরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন। চারদলীয় জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনকে সেখানে আসামি করা হয়। ওই বছর ১৮ সেপ্টেম্বর মামলাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয় জরুরি ক্ষমতা আইনে। পরের বছর ১৩ মে খালেদা জিয়াসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গ্যাটকোকে ঢাকার কমলাপুর আইসিডি ও চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাইয়ে দিয়ে রাষ্ট্রের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকার ক্ষতি করেছেন। আসামিদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, আকবর হোসেন, আবদুল মান্নান ভূঁইয়া, এমকে আনোয়ার এবং খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মারা গেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদ-ে দ-িত জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীও এই মামলার আসামি ছিলেন। মামলার বাকি আসামিরা হলেন- সাবেক মন্ত্রী এম শামছুল ইসলাম, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান কমোডর জুলফিকার আলী, আকবর হোসেনর স্ত্রী জাহানারা আকবর, দুই ছেলে ইসমাইল হোসেন সায়মন এবং একেএম মুসা কাজল, এহসান ইউসুফ, প্রাক্তন নৌ সচিব জুলফিকার হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রাক্তন সদস্য একে রশিদ উদ্দিন আহমেদ, গ্লোবাল এগ্রোট্রেড প্রাইভেট লিমিটেডের (গ্যাটকো) পরিচালক শাহজাহান এম হাসিব, প্রাক্তন মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও প্রাক্তন জ¦ালানি প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেন।
কুমিল্লায় হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠন ফের পিছিয়েছে: কুমিল্লায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বাসে আগুন দিয়ে আটজন হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন ও জামিন আবেদনের শুনানি ফের পিছিয়ে গেছে। খালেদা জিয়ার আইনজীবী কাইমুল হক রিংকু জানান, গতকাল বুধবার কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. আলী আকবরের আদালতে এ মামলার অভিযোগ গঠন ও জামিন আবেদন শুনানির দিন ছিল। রাষ্ট্রপক্ষ সময় চেয়ে আবেদন করায় বিচারক দিন পিছিয়ে দেন। তবে পরবর্তী দিন ঠিক করেননি বিচারক। পরে ঠিক করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি জামায়াত-বিএনপির ডাকা অবরোধ চলাকালে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আইকন পরিবহনের একটি বাসে পেট্রোল বোমা ছোঁড়া হয়। এতে আগুনে পুড়ে মারা যান আট যাত্রী। আহত হন আরও ২৭ জন। এ ঘটনায় চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই নুরুজ্জামান হাওলাদার বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা করেন। দুটি মামলায় দুই বছর এক মাস তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দেন চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই মো. ইব্রাহিম। মামলায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসমি করা হয়েছে। উভয় মামলায় তাকে আটক দেখানো হয়েছে। জিয়া এতিমখানা ও জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গত বছর ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে রয়েছেন। ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে তাকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪:০৬:১২ ● ১৫৫১ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ