
সাগরকন্যা প্রতিবেদক, মহিপুর (পটুয়াখালী)
পটুয়াখালীর মৎস্য বন্দর মহিপুর-আলীপুর ও কুয়াকাটায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জাটকা ইলিশ ধরা, মজুদ ও বিক্রি দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। প্রশাসনের বিচ্ছিন্ন অভিযানের মধ্যেও পুরোনো জাটকা সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য কমছে না- বরং আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে সংরক্ষিত ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বন্দরের বেশির ভাগ আড়তেই জাটকা ইলিশের স্তুপ। প্রতিদিন অর্ধকোটি টাকার বেশি জাটকা কেনা-বেচা হচ্ছে।
সরকারি বিধান অনুযায়ী, ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ২৫ সেন্টিমিটারের কম দৈর্ঘ্যরে ইলিশ ধরা, পরিবহন ও বিক্রি নিষিদ্ধ। মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ (সংশোধিত) অধ্যাদেশ-২০২৫ অনুযায়ী এ অপরাধে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড অথবা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে। তবে বাস্তবে বন্দরে আইন বাস্তবায়নের দৃশ্য খুব একটা দেখা যাচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আড়তশ্রমিক সাগরকন্যাকে জানান, প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান চালালেও জাটকা কেনাবেচা পুরোপুরি থেমে থাকেনি। জেলেদের দাবি, বড় ইলিশের সংকটে জালে জাটকাই বেশি ধরা পড়ে এবং বিকল্প জীবিকা না থাকায় তারা বাধ্য হয়ে জাটকা শিকার করে থাকেন।
গত ৮ নভেম্বর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউছার হামিদ বন্দর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন। আড়ত, ট্রলার ঘাট ও বাজার পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করেন তিনি। ইউএনও বলেন, নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের পাশাপাশি নিয়মিত অভিযান চলবে। জেলা মৎস্য বিভাগও জানিয়েছে, মহিপুর-আলীপুর এলাকায় সমন্বিত অভিযান জোরদার করা হবে।
কিন্তু ঘোষণার মাঝেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। শুক্রবার আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে জাটকা বেচা-কেনার দৃশ্য ধারণ করতে গেলে সিন্ডিকেট-সংযুক্ত স্থানীয় শ্রমিকদলের প্রভাবশালী্ এক নেতা সাংবাদিকদের বাধা দেন।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতিবছর জাটকা মৌসুমে কুয়াকাটা ও মহিপুর-আলীপুর মৎস্য বন্দরে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী, একশ্রেণির প্রভাবশালী এবং কিছু সংবাদকর্মীকে ব্যবহার করে প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে একটি চিহ্নিত সিন্ডিকেট। মোটা অঙ্কের লেনদেনে ‘ম্যানেজমেন্টের’ নামে জেলে ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়কে তারা নিয়মিত রেওয়াজে পরিণত করেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা সাগরকন্যাকে জানান, প্রশাসনকে ‘ম্যানেজের’ নামে দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ জেলে ও নিরীহ আড়তদারদের পকেট কাটা হচ্ছে। জাটকা বেচা-কেনার টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়েও অভ্যন্তরীণ বিরোধ রয়েছে।
তাদের মতে, মাঝে মধ্যে প্রশাসনের অভিযান চালিয়ে কোনো সুফল মিলবে না; প্রতিদিনের নজরদারি, জেলেদের বিকল্প জীবিকা এবং আড়তগুলোতে স্বচ্ছ তদারকি জরুরি।
এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাউছার হামিদ বলেন, কোনো সিন্ডিকেটের বিষয়ে আমার জানা নেই। জাটকা শিকার বা বিপণনে জড়িতদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। এ- সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, অনেকেই ছোট ইলিশ দেখলে সেটিকে জাটকা মনে করেন। বাস্তবে কিছু জাটকা চোখ ফাঁকি দিয়ে বেচাকেনা হলেও হতে পারে, তবে কোনো সিন্ডিকেটের সঙ্গে মৎস্য বিভাগের যোগাযোগ নেই। মহিপুর-আলীপুর বন্দরে অভিযান ও নিয়মিত মনিটরিং- দুটোই জোরদার করা হবে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, জাটকা নিধন অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে ইলিশের প্রজনন ও উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।