
সাগরকন্যা প্রতিবেদক, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী)
কুয়াকাটার কাছে বঙ্গোপসাগরের মধ্যে অবস্থিত ‘চর বিজয়’ পরিবেশ ও পর্যটনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপ। প্রায় দুই দশক আগে উদ্ভব হওয়া ৯০ হেক্টর আয়তনের এই চর অতিথি পাখি, লাল কাঁকড়া ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। কিন্তু নিয়ন্ত্রণহীন পর্যটন এবং অগোছালো বৃক্ষরোপণ দ্বীপের টেকসই ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
মঙ্গলবার চর বিজয়ে প্রায় আড়াই হাজার তাল, খেজুর, নারিকেল ও বটগাছের চারা রোপণ করা হয়। কুয়াকাটা পৌর শাখা জামায়াতের সাবেক আমির আলহাজ্ব মাওলানা মাঈনুল ইসলাম মান্নান বলেন, চরটিকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে হলে আগে সবুজায়ন জরুরি।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, চর বিজয়ের ভাঙনপ্রবণ ও লবণাক্ত মাটিতে ম্যানগ্রোভ ছাড়া অন্যান্য গাছ টিকে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম।
বন বিভাগের মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে রোপণ করা কেওরা ও ঝাউয়ের মধ্যে টিকে থাকা অংশ প্রমাণ করে, এই চরে দীর্ঘমেয়াদে কেবল ম্যানগ্রোভই স্থায়িত্ব দিতে পারে।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘সুফল প্রকল্প’-এর আওতায় রোপিত এক লাখ চারা গাছের মধ্যে প্রায় ২৫ হাজার এখনো জীবিত আছে।
চরটি শীতকালে অতিথি পাখির আবাসস্থল। লাল কাঁকড়ার বিচরণ এবং সামুদ্রিক মাছের ডিম দেওয়ার মতো প্রাকৃতিক খাদ্যচক্রের জন্যও দ্বীপটি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন ও আবর্জনার কারণে পাখি উড়ে যায়, কাঁকড়ার বাসস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হবারও আশঙ্কা পরিবেশকর্মীদের।
কুয়াকাটার পরিবেশকর্মী কেএম বাচ্চু বলেন, উপকূলীয় চরভূমি কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের উৎস নয়, বরং টেকসই পরিবেশ সুরক্ষার একটি প্রধান হাতিয়ার। পিকনিক বা অন্য কোন কর্মসূচির নামে চরে বৃক্ষরোপণের বদলে বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তিতে পরিকল্পনা করা উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কুয়াকাটা বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব কাউসার হামিদ সাংবাদিকদের বলেন, চর বিজয়ে শুধু চারা লাগানো নয়, গাছের পরিচর্যা, পর্যায়ক্রমিক তদারকি ও ক্ষতিগ্রস্ত অংশে পুনরায় রোপণও জরুরি। যতদিন না গাছগুলো পূর্ণাঙ্গ সবুজ বেষ্টনীতে রূপ নিচ্ছে, ততদিন বনবিভাগের নিয়মিত তত্ত্বাবধান প্রয়োজন।
সনাক পটুয়াখালী সভাপতি শহিদুর রহমান বলেন, সবুজায়ন কার্যক্রম পরিকল্পিত রূপ দিতে না পারলে জীববৈচিত্র্য’র জন্য ঝুঁকি বাড়বে। স্থানীয় প্রশাসন, বন বিভাগ ও গবেষকদের সমন্বয় ছাড়া টেকসই বনায়ন সম্ভব নয়।