
সাগরকন্যা প্রতিবেদক, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী)
ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম হিসেবে আজ শুক্রবার মধ্য রাত অর্থাৎ ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিনকে নির্ধারণ করেছে সরকার। এই সময়ে দেশের সকল নদী ও সমুদ্রে ইলিশসহ সবধরনের মাছ ধরা, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ ও বিনিময় সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কুয়াকাটা, মহিপুর ও আলীপুরের গভীর সমুদ্রগামী জেলেরা এই সময়ে মাছধরা বন্ধ রাখবার সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। নিরাপদে নিয়েছেন তাদের মাছধরা ট্রলার। প্রয়োজনীয় মেরামতের কাজও এই সময় সেরে নিবেন, স্থানীয় একাধিক জেলের সাথে কথা বলে এমন প্রস্তুতির কথা জানা গেছে।
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য অফিস জানায়, প্রজনন মৌসুমে এই নিষেধাজ্ঞা মানলে মা ইলিশ নিরাপদে ডিম ছাড়তে পারে, ফলে পরবর্তী মৌসুমে উৎপাদন বাড়ে এবং জাতীয় মাছ ইলিশের বংশধারা রক্ষা সম্ভব হয়। তবে কুয়াকাটার জেলেরা বলছেন, বিগত দিন থেকে তারা অবরোধ মেনে আসছেন এবং এই সময়ে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় তারা জীবিকার অনিশ্চয়তায় পড়েন।
কলাপাড়া উপজেলার একাধিক ইউনিয়ন পরিষদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০০৭ সাল থেকে এ যাবৎকালে জেলেদের কোন নিবন্ধন হয়নি। তথ্য অনুযায়ী উপজেলায় মোট নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১৮ হাজার ৩’শ ৫জন। এসব জেলেদের অভিযোগ, সহায়তা বিতরণে তালিকা হালনাগাদ না হওয়ায় অসঙ্গতি তৈরি হচ্ছে, যা সমাধানের দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ সওকত হোসেন বিশ^াস বলেন, ২০২৫ সাল পর্যন্ত গত ১৭ বছরে বহু জেলে পেশা বদল করলেও সরকারি তালিকায় তাদের নাম রয়ে গেছে। অন্যদিকে যারা জেলে পেশা হিসেবে নতুন করে এসেছেন তাদের কোনভাবেই সরকারি সহায়তার আওতায় আনতে পারছেন না। তিনি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চেয়েছেন।
আলীপুর মৎস্য বন্দরের জেলে ফারুক মাঝি জানান, নির্ধারিত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পরও অন্তত আরও ১০ দিন পর্যন্ত ডিমওয়ালা ইলিশ সাগরে জালে ধরা পড়ছে। তার মতে ইলিশের প্রজনন সুরক্ষার স্বার্থে নিষেধাজ্ঞার শুরুটা আরও অন্তত ১০ দিন পিছিয়ে দিলে অবরোধের সুফল মিলবে।
ইলিশ ব্যবসায়ী আলীপুরের মনি ফিস’র মালিক আঃ জলিল ঘরামি বলেন, ইলিশ মৌসুমের বড় একটি অংশ জুড়ে আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকায় বাধ্য হয়ে জেলেদের সাগরে মাছ শিকার ব্যহত হয়। সাগরে নিম্নচাপ থাকলে সমুদ্র উত্তাল হয়ে যায় এবং জেলেরা মাছ ধরা বন্ধ করে ট্রলার নিয়ে উপকূলে নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান করেন। এতে তাদের লোকসানের বোঝা দিনকে দিন বাড়তে থাকে।
সব মিলিয়ে, একদিকে প্রজননকালীন নিষেধাজ্ঞা আর অন্যদিকে আবহাওয়ার বিরূপ পরিস্থিতি- দুই মিলে জেলেদের আর্থিক চাপ দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশ মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, ইলিশের টেকসই উৎপাদন নিশ্চিত করতে হলে যেমন প্রজনন মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা মানা জরুরি, তেমনি প্রকৃত জেলেদের তালিকা হালনাগাদ করে সহায়তা বিতরণের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাও সময়ের দাবি। তাই সরকারের এই পদক্ষেপ ইলিশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও জেলেদের জীবন-জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে এই কর্মসূচির সফলতা আসবে না বলেও মনে করছেন এই গবেষক।
এ প্রসঙ্গে পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, ইলিশ সংরক্ষণে এই অবরোধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি প্রকৃত জেলেদের সহায়তা নিশ্চিত করতে তালিকা হালনাগাদের কাজ চলছে। নিষেধাজ্ঞার পর কিছু ইলিশ ডিম ছাড়ে ঠিকই, তবে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে ৪ থেকে ২৫ অক্টোবরই মূল প্রজননকাল।