
এ এম মিজানুর রহমান বুলেট, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমে সংকট ও হতাশা বাড়ছে। শিক্ষক স্বল্পতা, দুর্গম সড়ক যোগাযোগ, শিক্ষকদের অনুপস্থিতি, কোচিং বানিজ্য ও দারিদ্র্যের কারণে প্রাথমিক স্তরে ঝরে পড়ার হার বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
চম্পাপুর ইউনিয়নের ৭৬ নম্বর পূর্ব পাটুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩১৫ শিক্ষার্থী থাকলেও শিক্ষক মাত্র দুইজন। একাধিক শ্রেণির পাঠদান একইসঙ্গে সামলাতে হচ্ছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, দীর্ঘদিন শিক্ষক সংকটে টানা কাজ করতে গিয়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কর্তৃপক্ষকে জানালে সম্প্রতি অন্য একটি স্কুল থেকে একজন শিক্ষক ডেপুটেশনে দেওয়া হয়েছে।
লতাচাপলি ইউনিয়নের ৭৮ নম্বর খাঁজুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারপাশে কোনো পাকা রাস্তা নেই। বর্ষায় কর্দমাক্ত রাস্তায় হাঁটা যায় না। দুইটি ভাঙা কাঠের সাঁকো পেরোতে গিয়ে প্রায়শই দুর্ঘটনায় পড়ছে শিশুরা। বই-খাতা নষ্ট হচ্ছে পানিতে। এতে শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসার আগ্রহ কমছে। অনেক শিশু অভিভাবকের সঙ্গে নদীতে চিংড়ি রেনু সংগ্রহের কাজে যুক্ত হচ্ছে।
অভিভাবকরা জানান, খাঁজুরা গ্রামের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এটি। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে সড়ক পাকাকরণ ও কালভার্ট নির্মাণ প্রয়োজন। বহুবার আবেদন করেও সমাধান হয়নি বলে অভিযোগ তাদের।
উপজেলায় ১৭১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী আছে ৩১৫০ জন। তবে যথাসময়ে তথ্য ইনপুট না দেওয়ায় ও কাগজপত্র সংরক্ষণ না করায় আসন্ন প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে মাত্র ১২৬০ জন।
শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ৩১টি, সহকারী শিক্ষক ১১৪টি। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা অফিসেও তিনটি সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারসহ কয়েকটি পদ খালি আছে। জনবল সংকটে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাহিদা বেগম বলেন, আমি কিছুদিন আগে দায়িত্ব নিয়েছি। জনবল সংকটের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি দ্রুত সমাধান হবে। তিনি আরও জানান, দাসের হাওলা স্কুল ভবন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সেখানে অস্থায়ী টিনশেড শ্রেণিকক্ষ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়া দুর্গম এলাকার স্কুলগুলোর সড়ক সংস্কার জরুরি। এসব বিষয়ে নিয়মিতভাবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হচ্ছে।