এবার গুলশানে অগ্নিকাণ্ড, কাঁচাবাজারের ২ শতাধিক দোকান ভস্মীভূত

প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ » এবার গুলশানে অগ্নিকাণ্ড, কাঁচাবাজারের ২ শতাধিক দোকান ভস্মীভূত
শনিবার ● ৩০ মার্চ ২০১৯


শনিবার রাজধানীর গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেটের পাশে কাঁচাবাজারে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
ঢাকায় বনানীর অগ্নিকাণ্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই আগুনে পুড়লো পাশের এলাকা গুলশান ১ নম্বরের ডিএনসিসি মার্কেট লাগোয়া কাঁচাবাজার। শনিবার ভোরে আড়াই ঘণ্টার এই অগ্নিকাণ্ডে ওই কাঁচাবাজারের দুই শতাধিক দোকানের সবগুলোই ভস্মীভূত হয়েছে। আগুনে কাঁচাবাজারের সামনের পাঁচ তলা গুলশান শপিং সেন্টারের কয়েকটি দোকানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কাঁচাবাজার লাগোয়া গুলশান ১ নম্বর ডিএনসিসি মার্কেট তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। ২০১৭ সালের ২ জানুয়ারি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়েছিল গুলশান ১ নম্বর ডিএনসিসি মার্কেট। তখন দোতলা মূল বিপণি বিতানের পাশের কাঁচাবাজারও সম্পূর্ণ পুড়ে গিয়েছিল। তারপর ওই বাজারটি নতুন করে গড়ে তোলার দুই বছরের মধ্যে আবার তা পুড়ে গেল। শনিবার ভোর পৌনে ৬টার দিকে কাঁচাবাজারটিতে আগুন লাগার খবর পেয়ে তা নেভাতে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনের ডিউটি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন তখন বলেন, ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে আগুন লাগে। আমাদের ১৫ টি ইউনিট কাজ করছে। ইউনিটের সংখ্যা বাড়তে পারে। এরপর ফায়ার সার্ভিসের ২০টির মতো ইউনিটের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর সদস্যরাও যোগ দেন আগুন নেভানোর কাজে। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক এনায়েত হোসেন বলেন, আগুন এখন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পরও কাঁচাবাজার অংশ থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দোকানে ঢুকে ঢুকে তল্লাশি চালাচ্ছিল, বেরিয়ে আসছিল পোড়া মাছ-মুরগি, বিভিন্ন রকম খাদ্যপণ্যের ক্যান। গুলশান ১ নম্বর ডিএনসিসি মার্কেটের দোতলা ভবনের পূর্ব পাশঘেঁষে লোহার কাঠামোর উপর টিন দিয়ে গড়ে ওঠা এই কাঁচাবাজারে মাংস ও মাছের দোকানের পাশাপাশি মুদি ও সুগন্ধীর দোকান ছিল। আমদানি করা খাদ্যপণ্য ও প্রসাধনীর অনেক দোকানের পাশাপাশি প্লাস্টিকের খেলনার দোকানও ছিল সেখানে। তার একটিকেও অক্ষত দেখা যায়নি। এই কাঁচাবাজারে দুই শতাধিক দোকান ছিল বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসি মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এস এম তালাল রিজভী। তিনি বলেন, কোনোটিই আর নেই। সবগুলো পুড়ে গেছে। তবে তাদের দোতলা বিপণি বিতানটি অক্ষত রয়েছে বলে জানান রিজভী। দোতলা মূল বিপণি বিতানে দোকান রয়েছে ২৩৪টি। অগ্নিকাণ্ডে কারও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। অগ্নিকাণ্ডস্থলে উৎকণ্ঠা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন দোকানি জানিয়েছেন, রাতে দোকানগুলোতে কেউ থাকে না, বাজারের কলাপসিবল গেইটে তালা মেরে পাহারাদাররাও বাইরেই থাকেন। কাঁচাবাজারের সামনে পাঁচ তলা গুলশান শপিং সেন্টারেও আগুন ছড়িয়েছিল। সেখানে দোতলার বেশ কয়েকটি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই বিপণি বিতানে রয়েছে, হার্ডঅয়্যারের দোকান, হার্ডঅয়্যারের দোকান, বিভিন্ন ধরনের খাবারের দোকান। কীভাবে এই অগ্নিকাণ্ডের সূচনা, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ধারণা, কাঁচাবাজারের সুগন্ধীর কোনো দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিরা পুনর্বাসনের জন্য সরকারের কাছ থেকে সহায়তা চেয়েছেন। তারা বলছেন, দুই বছর আগে অগ্নিকাণ্ডের পর তেমন সহায়তা পাননি তারা, নিজের চেষ্টায়ই উঠে দাঁড়িয়েছিলেন। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মামলা জটিলতার কারণে এখানে স্থায়ী একটি মার্কেট গড়া যাচ্ছে না। মামলা নিষ্পত্তিতে উদ্যোগ এখন নেবেন তিনি। ২০১৭ সালে অগ্নিকাণ্ডের পর আবারও একই মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল। এর পেছনে মার্কেট কমিটির কোনো রকম গাফিলতি আছে কি না সে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, আমরা এখন চেষ্টা করছি যাতে আগুন না ছড়িয়ে যায়। আগুন কন্ট্রোলে আনার চেষ্টা করছি। তারপর আমরা এর পরিপ্রেক্ষিতে কী ধরনের ব্যবস্থা নেব, আবার কেন হলো, এটার পার্মানেন্ট কোনো সল্যুশন করতে পারি কি না- সব বিষয় নিয়ে স্টেপ বাই স্টেপ আমি জানাব আপনাদের। এর আগে অগ্নিকাণ্ডের পর এ ধরনের দুর্যোগ এড়াতে ফায়ার সার্ভিস ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয় মার্কেট কমিটির কাছে। সেগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে কি না- সে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, সে সুপারিশগুলো আমি দেখব। সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই আমরা ডিসিশন নেব। মার্কেটের সবার সঙ্গে আমরা কালেকটিভ ওয়েতে কিছু করতে চাই। এ ব্যাপারে যথাযথ তদন্ত করা হবে বলেও আশ্বস্ত করেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। আগুন লাগার পর উদ্ধার কাজের জন্য গুলশান-১ নম্বর সংলগ্ন সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
আগের সুপারিশ মানেনি মার্কেট কমিটি: ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে গুলশান ১-এর ডিএনসিসি মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর অগ্নিনির্বাপণের ব্যাপারে বেশকিছু সুপারিশ করা হয়েছিল, কিন্তু সেসব সুপারিশের একটিও মানা হয়নি বলে অভিযোগ করেছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। সকালে ঘটনাস্থলে থাকা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ গণমাধ্যমকে বলেন, এর আগে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে একই মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের পর মার্কেট কমিটির কাছে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে যেসব সুপারিশ করা হয়েছিল তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক বলেন, এই মার্কেটের ব্যাপারে আমাদের অনেক নির্দেশনা আছে। এ মার্কেট কমিটিকে তিন থেকে চারবার সাবধানতা নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তারপরও তারা শুধরায়নি। ‘সমিতির সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। তারপর এই মার্কেটের ব্যাপারে আমাদের অবজেকশন আছে। এটা নিয়ে রিট চলছে, যোগ করেন ফায়ার সার্ভিসের এই পরিচালক।
অগ্নিকাণ্ড তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি: এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল সার্ভিসের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে থাকা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের এক উপপরিচালক গণমাধ্যমকে এ কথা জানান। ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা বলেন, এই কমিটির হেড হলেন উপপরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) শামীম আহসান চৌধুরী। তিনি সাতদিনের মধ্যে তদন্ত করে এটার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ, অগ্নিকাণ্ডের কারণ, আহত-নিহত ও সুপারিশমালাসহ রিপোর্ট দাখিল করবেন। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সদর দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সকালে বলেন, ভোরে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিস।

বাংলাদেশ সময়: ১২:৫০:০৮ ● ৪০৯ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ