ডলার সংকটে এলএনজির মূল্য পরিশোধে একাধিকবার জরিমানা গুনেছে পেট্রোবাংলা

প্রথম পাতা » বিশেষ প্রতিবেদন » ডলার সংকটে এলএনজির মূল্য পরিশোধে একাধিকবার জরিমানা গুনেছে পেট্রোবাংলা
সোমবার ● ১১ মার্চ ২০১৯


---

সাগরকন্যা এক্সক্লুসিভ রিপোর্ট॥
ডলার সঙ্কটের কারণে পেট্রোবাংলা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) মূল্য যথাসময়ে পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে। সময়মতো বিল পরিশোধ করতে না পারায় গত ৬ মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটিকে দুবার জরিমানাও গুনতে হয়েছে। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) জাহাজীকরণের পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে অর্থ পরিশোধের শর্ত রয়েছে। কাতার থেকে আমদানি করা এলএনজির প্রতি চালানের (১ লাখ ৪০ হাজার ঘনমিটার) বিপরীতে আমদানিকারক পেট্রোবাংলাকে ৩ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু ডলার সংকটে পেট্রোবাংলা ওই মূল্য পরিশোধ করতে গিয়ে চাপে পড়ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে বর্তমানে আমদানিকৃত এলএনজির মূল্য পরিশোধ করে পেট্রোবাংলা। কিন্তু প্রতি মাসে অন্তত দুটি বিল পরিশোধ করতে অগ্রণী ব্যাংককে ডলার সংগ্রহে অন্যান্য ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে হয়। আর বিলম্বে বিল পরিশোধের কারণে ইতিমধ্যে দুবার জরিমানা দিতে হয়েছে পেট্রোবাংলাকে। তবে অন্য বিলগুলো নির্দিষ্ট সময়ের শেষ মুহূর্তে পরিশোধ করে ব্যাংকটি পেট্রোবাংলাকে জরিমানা থেকে রক্ষা করেছে। পেট্রোবাংলা এবং অগ্রণী ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকার শিল্প-কারখানার জ্বালানি সংকট মেটাতে এলএনজি আমদানি করছে। যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জির মাধ্যমে মহেশখালীতে দেশের প্রথম ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মাধ্যমে দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার প্রথম এলএনজি টার্মিনালটি নিয়েই বিপাকে পড়েছে পেট্রোবাংলা ও জ্বালানি বিভাগ। ব্যয়বহুল এ গ্যাসের মূল্য পরিশোধের পাশাপাশি টার্মিনাল হ্যান্ডলিংয়ে হিমশিম খাচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরে যেসব বিদেশী তেল কোম্পানির (আইওসি) কাছ থেকে গ্যাস নেয়া হচ্ছে, তাদের দুই মাস পরও বিল দেয়ার সুযোগ পাচ্ছে পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে গ্রাহকের কাছে গ্যাস বিক্রি করে পাওয়া রাজস্ব থেকে আইওসির বিলের ব্যবস্থা করা যায়। কিন্তু এলএনজির ক্ষেত্রে সে সুযোগ নেই। ফলে আমদানি করা গ্যাসের দাম মেটাতে পেট্রোবাংলাকে নিজের জমানো টাকাই ব্যবহার করতে হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি ইউনিট এলএনজি ৩২ টাকা দরে আমদানি করে গ্রাহক পর্যায়ে ৭ টাকা ১৭ পয়সায় বিক্রি করা হচ্ছে। তাতে গত আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত পেট্রোবাংলার প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।
সূত্র জানায়, এলএনজি এমনিতেই ব্যয়বহুল। তার ওপর কাতার থেকে এলএনজি নিয়ে একটি জাহাজের বিল পরিশোধ করে সপ্তাহ না যেতেই দ্বিতীয় জাহাজের বিল পরিশোধের ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়। চুক্তি অনুযায়ী পেট্রোবাংলাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ এলএনজির বিল পরিশোধ করতেই হয়। তাছাড়া এলএনজি ব্যবহার না হলেও পরিশোধ করতে হয় টার্মিনাল ভাড়া। বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক প্রায় ৪০৫ কোটি ঘনফুট। তার বিপরীতে সরবরাহ হচ্ছে ৩১১ কোটি ঘনফুট। ফলে প্রতিদিন ৯৪ কোটি ঘনফুট ঘাটতি থাকছে। ওই ঘাটতি পূরণেই এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়। তার অংশ হিসেবে কক্সবাজারের মহেশখালীতে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনে ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে চুক্তি করে জ্বালানি মন্ত্রণালয়। চুক্তি অনুযায়ী গত বছরের এপ্রিল থেকে টার্মিনালটি চালুর কথা ছিল। তবে তা চার মাস পিছিয়ে যায়। কাতার থেকে আমদানি করা এলএনজি ওই টার্মিনালে গ্যাসে রূপান্তর করে জাতীয় সঞ্চালন গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে।
এদিকে অগ্রণী ব্যাংক এলএনজির বিল পরিশোধ করতে গিয়ে হিমশিম খাওয়ায় জনতা ব্যাংককেও এগিয়ে আসার অনুরোধ করেছে পেট্রোবাংলা। গত মাসের শেষের দিকে এ নিয়ে জনতা ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকও করেন পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা। তবে এলএনজির বিল পরিশোধে হিমশিম খাওয়া প্রসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শামস-উল-ইসলাম জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাবে প্রথম দিকে কিছু সমস্যা হয়েছিল। এখন সেটি কাটিয়ে উঠেছে। দেশের রফতানি আয় ও রেমিট্যান্সের প্রবাহ বেড়েছে। তাছাড়া অগ্রণী ব্যাংকের ৩২ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ রয়েছে। সংগত কারণেই এলএনজির বিল পরিশোধ নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
অন্যদিকে একই প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক (ফিন্যান্স) নজরুল ইসলাম জানান, এলএনজির বিল পরিশোধ নিয়েই বেশি সমস্যা হচ্ছে। কারণ ডলারে বিল পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক প্রয়োজনীয় ডলার সংকুলানে হিমশিম খাচ্ছে। বিল পরিশোধে বিলম্বের কারণে ইতিমধ্যে দুবার জরিমানাও দিতে হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান জানান, এলএনজির বিষয়টি দেশে প্রথম হওয়ায় কিছু সমস্যা হচ্ছে। ভাসমান টার্মিনালের কারণে সমুদ্রের বৈরী আবহাওয়ায় আরো কিছু অতিরিক্ত সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়। তবে সেগুলো সমাধান করে এখন বেশ নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০:৩২:৩৬ ● ৫২৩ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ