![---](https://www.sagorkonnya.com/cloud/archives/2019/01/71400678-thumbnail.jpeg)
ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
ইংরেজি দৈনিক নিউ নেশন, ডেইলি স্টার, ডেইলি টেলিগ্রাফ, ডেইলি ইনডিপেনডেন্ট, দৈনিক আমার দেশ, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাসহ (বাসস) বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে কাজ করে আসা প্রবীণ সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীর আর নেই। গত মঙ্গলবার রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আমানুল্লাহ কবীর। সর্বশেষ তিনি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের’ জ্যেষ্ঠ সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় তার মরদেহ জাতীয় প্রেস ক্লাবে আনা হয়। সেখানে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী, শুভাকাক্সক্ষীরা। সেখানে তার দ্বিতীয় জানাজার পর জাতীয় প্রেস ক্লাবসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে তার মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। প্রেস ক্লাবে তার জানাজায় অংশ নেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুল হালিম, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির, সাবেক সাংসদ অবসরপ্রাপ্ত মেজর আখতারুজ্জামান, গণস্বাস্থ্য সংস্থার জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাংবাদিকদের মধ্যে এম আমানুল্লাহ, রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, গোলাম তাহাবুর, খন্দকার মনিরুল আলম, আবদুল কালাম আজাদ, সৈয়দ আখতার ইউসুফ, নুরুল হুদা, মাহফুজউল্লাহ, জাহিদুজ্জামান ফারুক, গাজীউল হাসান খান, এলাহী নেওয়াজ খান সাজু, এম এ আজিজ, মঞ্জুরুল ইসলাম বুলবুল, আবদুল জলিল ভুঁইয়া, আবদুল হাই শিকদার, আজিজুল ইসলাম ভুঁইয়া, সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন, আবদুস শহিদ, কামালউদ্দিন সবুজ, কামরুল ইসলাম চৌধুরী, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, জুবায়ের আহমেদ, সরদার ফরিদ আহমেদ, শাহেদ চৌধুরী, মাঈনুল আলম, কুদ্দুস আফ্রাদ, জাহেদ চৌধুরীসহ শতাধিক সাংবাদিক। আমানুল্লাহ কবীরের বড় ছেলে শাতিল কবীর জানাজার আগে তার বাবার জন্য সবার দোয়া চান। এর আগে ভোর সাড়ে ৬টায় কল্যাণপুরের দারুস সালাম ফুরফুরা শরীফ মসজিদে মরহুমের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার পর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমীন, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের দুই অংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মোল্লা জালাল, মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতারা এই প্রয়াত সাংবাদিকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর বিএনপি, বিএফইউজে ও ডিইউজের দুই অংশ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ফটো জার্নালিস্ট ইউনিয়ন, জামালপুর সমিতি, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরাম প্রভৃতি সংগঠন থেকে প্রয়াত সাংবাদিকের কফিনে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়। আমানুল্লাহ কবীরের পরিবারের থেকে জানানো হয়েছে, জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে তার মরদেহ জামালপুরের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় মেলান্দহে রেখিরপাড়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আরেক দফা জানাজার পর পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের পাশে তাকে দাফন করা হবে। তার ছেলে শাতিল কবীর জানান, আসছে ২৪ জানুয়ারি ৭২ বছর পূর্ণ করার কথা ছিল আমানুল্লাহ কবীরের। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি ডায়াবেটিস ও লিভারের নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। বছর তিনেক আগে বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর থেকেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। মেয়ে শোভন কবীর জানান, অসুস্থতার কারণে দুই সপ্তাহ আগে শ্যামলীর ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল আমানুল্লাহ কবীরকে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে তাকে নেওয়া হয়েছিল ধানম-ির ইবনে সিনা হাসপাতালে। সেখান থেকে তাকে বিএসএমএমইউতে নেওয়া হয়। ১৯৪৭ সালের ২৪ জানুয়ারি জামালপুরে জন্মগ্রহণ করেন আমানুল্লাহ কবীর। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষার সংবাদপত্রেই তিনি কাজ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৮ সালে মাস্টার্স করা আমানুল্লাহ কবীর একসময় ছিলেন ইংরেজি দৈনিক নিউ নেশনের বার্তা কক্ষের প্রধান। নিউ নেশন তখন দেশের অন্যতম প্রধান সংবাদপত্র। আশির দশকে এস এম আলীর সম্পাদনায় ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার প্রকাশিত হলে তার প্রথম বার্তা সম্পাদক ছিলেন আমানুল্লাহ কবীর। ১৯৯১ সালের শেষ দিকে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে ইংরেজি দৈনিক টেলিগ্রাফে যোগ দেন তিনি। বেক্সিমকোর মালিকানায় দৈনিক ইনডিপেনডেন্টের প্রতিষ্ঠাকালীন নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন আমানুল্লাহ কবীর। পরে বিএনপি সরকারের সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ মাধ্যম বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি। আমানুল্লাহ কবীরের সম্পাদনায় ২০০৪ সালে প্রকাশিত হয় বাংলা দৈনিক আমার দেশ। সে সময় পত্রিকাটির মালিক ছিলেন বিএনপির মোসাদ্দেক আলী ফালু। প্রায় পাঁচ দশকের পেশা জীবনের শেষ সময়ে, শেষ পাঁচটি বছর আমানুল্লাহ কবীর ছিলেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে। ১৯৮০ আর ৯০ এর দশকে সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোর নেতৃত্বের পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছেন আমানুল্লাহ কবীর। সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো তখনও দলীয় মেরুকরণে বিভক্ত হয়নি। অবিভক্ত ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নে দুই মেয়াদে মহাসচিব এবং পরে সভাপতি ছিলেন তিনি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন। কেউ কেউ বলেন, সামরিক শাসক এই এম এরশাদের সময়ে আমানুল্লাহ কবীরই ছিলেন সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে সবচেয়ে সোচ্চার কণ্ঠ। ‘দা স্ট্রাগলিং ডেমোক্রেসি অব বাংলাদেশ’, ‘নদী ও অন্ধকারের রূপ’, ‘মুখোশবাড়ি’, ‘নিস্তব্ধতার মাতম’, ‘জেলায় জেলায় ভাষা আন্দোলন ও অন্যান্য তথ্য’ এর মত বই লিখে গেছেন আমানুল্লাহ কবীর। পাশাপাশি টেলিভিশনে আলোচনা অনুষ্ঠানগুলোতে তিনি ছিলেন নিয়মিত মুখ।
বিএনপি মহাসচিবের শোক: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রখ্যাত সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীরের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে তার ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। তার লেখনি ছিল সমসময়ই সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে। তার সততা, নিষ্ঠা ও কর্তৃত্ববোধ সর্বজনস্বীকৃত ও প্রশ্নাতীত। সাংবাদিকতায় তার অবদান অনিস্বীকার্য। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের এই দুঃসময়ে তার মৃত্যু গণতন্ত্রকামী মানুষের হৃদয়ে গভীর বেদনার সৃষ্টি করেছে। তার শূণ্যতা সহজে পূরণ হবার নয়। মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান বিএনপি মহাসচিব।
ড. কামালের শোক: সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীরের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন. এই গুণী সাংবাদিক নেতার মৃত্যুতে দেশ ও সাংবাদিক সমাজের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। প্রয়াত আমানুল্লাহ কবীরের রুহের মাগফিরাত কামনা করে শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান কামাল হোসেন।