রাজাপুর গণকবরে কঙ্কাল পাওয়া ১৬ব্যক্তির স্বীকৃতি মেলেনি

প্রথম পাতা » ঝালকাঠী » রাজাপুর গণকবরে কঙ্কাল পাওয়া ১৬ব্যক্তির স্বীকৃতি মেলেনি
বৃহস্পতিবার ● ১০ ডিসেম্বর ২০২০


রাজাপুর গণকবরে কঙ্কাল পাওয়া ১৬ব্যক্তির স্বীকৃতি মেলেনি

ঝালকাঠি সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

ঝালকাঠির রাজাপুরের কাঠিপাড়া গণকবর থেকে ২০১০ সালের ১৭ মে ১৬ ব্যক্তির মাথার খুলি ও হাড়গোড় উদ্ধার হয়। ১৯৭১ সালের মে মাসের মধ্যম দিকে পাকবাহিনী হত্যাযজ্ঞ চালায় এ স্থানের জঙ্গলে। এসময় জীবন রক্ষার্থে বেশ কিছু সাধারন মানুষ জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। ১৭ মে সকালে মানসিক প্রতিবন্ধী এক যুবক দৌড়ে ওই জঙ্গলে পালানোর জন্য ঢুকলে তা পাকবাহিনীর নজরে পড়ে। এসময় জঙ্গলে আশ্রয় নেয়া নারী-পুরুষদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয়।
যুদ্ধকালীন সময়ে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের একই পরিবারের ২৫জনসহ ৫০জনেরও বেশি লোককে হত্যা করে চলে যায় পাকবাহিনী। পরে স্থানীয়রা একটি খালের মতো গর্ত তৈরী করে নিহতদের এ গর্তে চাপা দিয়ে রাখেন। চাপা পড়া কাঠিপাড়া গ্রামের জীতেন্দ্রনাথ বড়াল, কালি কান্ত মন্ডল, সতীশ চন্দ্র হালদার, অনুকূল বড়াল, ক্ষিতীশ চন্দ্র হালদার, ব্রোজেন্দ্র নাথ হালদার, পার্শ্ববর্তী নারিকেল বাড়িয়া গ্রামের হরিমোহন হালদার, কার্তিক চন্দ্র হালদার, কামিনী কুমার হালদার, ডা. যোগেন্দ্র নাথ মিস্ত্রি, নৈকাঠি গ্রামের ধীরেন্দ্র নাথ মিস্ত্রি, যোগেশ্বর মিস্ত্রি, ললিত চন্দ্র হালদার, সূর্য ঘরামি, মধু সুধন হালদার, সুরেন্দ্রনাথ গায়েন’র নাম শনাক্ত করা হয়। ২০১০ সালের ১৭ মে ১৬ ব্যক্তির মাথার খুলি ও হাড়গোড় উদ্ধার হলে স্থানীয় প্রশাসনের টনক নড়লে একবার গণহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে ২০১১ সালের ১৭ মে কর্মসূচী পালন করা হয় এবং জেলা পরিষদ থেকে একটি গেইট এবং তার কাটা দিয়ে বেড়ার ব্যবস্থা করা হলেও বর্তমানে কাটা তারে মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু ইট-সিমেন্টের তৈরী গেইটি এতিমের মতো ঠায় দাড়িয়ে আছে। পরে ওই ১৬ ব্যক্তির নাম পরিচয়সহ একটি টিনের সাইনবোর্ড সুপারী গাছেন সাথে লটকিয়ে দেন। তা এখন জরাজীর্ণ হয়ে মরিচা ধরে অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে। নাম গুলো স্পষ্ট বুজা যাচ্ছে না। রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় গরু-ছাগলের খাদ্যের জন্য ওখানে রাখা হচ্ছে। নিরাপদ স্থান হিসেবে কুকুরও সেখানে অভয়াশ্রম হিসেবে ব্যবহার করছে। মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারীদের নাম শনাক্ত হলেও তাঁদের দেয়া হয়নি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। বর্তমানে এঁদের পরিবারের লোকজন মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
কাঠিপাড়া গ্রামের মুক্তিযুদ্ধকালে নিহত জীতেন্দ্র নাথ বড়ালের ছেলে শান্তি রঞ্জন বড়াল জানান, বি.এ.পাশ করেও বেকার ঘুরে বেড়াচ্ছি। বর্তমানে ৫সদস্যের পরিবারের বোঝা তারই বহন করতে হচ্ছে এর মধ্যে তার ছোট ভাই সত্য রঞ্জন বড়াল বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। তার পরিবারের লোকজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাবন করছেন তিনি।
তিনি আরও জানান, সরকারের কাছে তার আকুল আবেদন যাতে তিনিসহ সকল শহীদ পরিবারের লোকজন শহীদ ভাতা পেয়ে একটু মাথা গোঁজার ঠাই পান। আত্মদানকারী সতীশ চন্দ্র হালদারের পুত্র স্বপন কুমার হালদার জানান, মুক্তিযুদ্ধে পিতাকে ছোট বয়সেই হারাতে হয়েছে। শুধু মাত্র একটি সাইনবোর্ডে বাবার নামটি ব্যবহার করা ছাড়া আর কোন রাষ্ট্রীয় সুবিধা নেই। বর্তমানে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।নিহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হিসেবে প্রাপ্য সম্মানটুকু পেলেও বাবার আত্মা শান্তি পেতো আমরাও শান্তিতে থাকতে পারতাম।
কাঠিপাড়া গণ হত্যা দিবসের ৪৯বছর পেরিয়ে গেলে আজও অরক্ষিত গণকবরগুলো। স্বীকৃতি পায়নি শহীদ পরিবারের সদস্যরাও। মানবেতর জীবপন যাপন করছেন তারা। কেমন আছে স্বজনহারা পরিবারগুলো তাও দেখার যেন কেউ নেই।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আক্কাস আলী মৃধার সাথে কথা বলে জানাগেছে, ১৯৭১ সালের ১৭ মে সকালে এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৫০ জনেরও বেশি লোককে হত্যা করে পাকবাহিনী। পরে একটি ছোট খালের মতো করে কেটে মাটি চাপা দেয়া হয় নিহতদের। একাত্তরের স্মৃতি আর শোকগাঁথা এ বধ্যভূমি কালের গর্ভে হারাতে বসেছে। জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো ঝালকাঠির রাজাপুরের মুক্তিকামি জনতা দেশ রক্ষার জন্য ঝাপিয়ে পরে। একাত্তরের নয় মাস এখানকার বিভিন্ন স্থানে বধ্যভূমিতে গণহত্যা, লুট আর নারী নির্যাতনসহ হানাদার বাহিনী নির্মম নির্যাতন চালায়। ২০১০ সালে এ গণকবর খুড়ে ২৫ শহীদ ব্যক্তিদের মাথার খুলি ও হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়েছিল। কিন্তু আত্মত্যাগী এই সব শহীদের স্মৃতি রক্ষায় স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও কাঠিপাড়ার বধ্যভূমি সংরক্ষন হয়নি। উদ্ধার হওয়া মাথার খুলি ও কঙ্কাল পরে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু এখানকার শহীদ পরিবারের সন্তানরা পায়নি স্বীকৃতি।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শাহ আলম নান্নু জানান, নতুন প্রজন্মে কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে কাঠিপাড়া বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও সেখানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা প্রয়োজন। দ্রুত সংরক্ষণ করা উচিৎ এ উপজেলার মুক্তিযুদ্ধের শোকবহ আর গর্বেগাঁথা ইতিহাস। আর এজন্য সরকার এগিয়ে আসবে এ প্রত্যাশা দীর্ঘ দিনের সবার।

আরআর/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২০:২১:২৩ ● ৩৯৩ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ