দেখার কেউ নেই কলাপাড়ায় রিংবেড়িবাধ দিয়ে দখল নদীতীরসহ সংরক্ষিত বনাঞ্চল

হোম পেজ » লিড নিউজ » দেখার কেউ নেই কলাপাড়ায় রিংবেড়িবাধ দিয়ে দখল নদীতীরসহ সংরক্ষিত বনাঞ্চল
শনিবার ● ২২ নভেম্বর ২০২৫


দেখার কেউ নেই; কলাপাড়ায় রিংবেড়িবাধ দিয়ে দখল নদীতীরসহ সংরক্ষিত বনাঞ্চল

মেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)

এবার নদীতীরের প্লাবনভূমিসহ দীর্ঘ এরিয়াজুড়ে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছপালা রয়েছে এমন এলাকা রিংবেড়িবাঁধ দিয়ে দখল করা হয়েছে। ফ্রি-স্টাইলে এক্সকেভেটর দিয়ে সংরক্ষিত বাগানসহ নদীর মাটি কেটে প্লাবনভূমি গাছপালাসহ দখল করা হয়েছে। বনবিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড কিংবা ভূমি প্রশাসন সবাই রয়েছেন নির্বিকার। এভাবে রিংবেড়িবাঁধ দিয়ে দীর্ঘএলাকা দখল করায় শত শত ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছপালা মারা যাওয়ার শঙ্কার পাশাপাশি নদীতীর দখলদৃশ্য দেখে স্থানীয় মানুষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া-কুয়াকাটা মহাসড়কের সোনাতলা নদীর সেতুর পশ্চিম দিকে এই দখল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। ফলে সবুজ দেওয়ালখ্যাত বনাঞ্চল নিশ্চিহ্নের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমনভাবে বনাঞ্চলের মাঝখান থেকে গাছপালা কেটে রিংবেড়িবাঁধ করা হয়েছে যে বর্ষায় জলাবদ্ধতা এবং জোয়ারের পানি চলাচল বন্ধ হয়ে শত শত ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছ মরে বিরানভূমিতে পরিণত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমনকি ওই সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে বাড়িঘর ও পুকুর রয়েছে। বিদ্যুতের লাইন টানা রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাদা (খালে) বাঁধ দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ করে চলাচলের সড়ক করা হয়েছে। পরিবেশ, প্রতিবেশ, নদী, বনাঞ্চল—সব যেন ফ্রি-স্টাইলে দখল চলছে ওখানটায়।

দীর্ঘ এই সংরক্ষিত বনাঞ্চলে রয়েছে প্রাচীন হাজার হাজার ম্যানগ্রোভ প্রজাতির ছৈলা-কেওড়াসহ বিভিন্ন ধরনের গাছপালা। যে গাছগুলো ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরের জলোচ্ছ্বাসের ঝাপটা সবুজ দেয়ালের মতো বাধা দিয়ে জনপদের মানুষ ও তাঁদের সম্পদকে রক্ষা করেছে। সেই বনাঞ্চল এখন ফ্রি-স্টাইলে দখল করে রিংবেড়িবাধ করা হয়েছে। দখলদারিত্ব চলছে ফ্রি-স্টাইলে। জোয়ারের সময় কোমর থেকে বুক সমান পানি থাকে সেই নদীতীর পর্যন্ত রিংবেড়িবাঁধ দিয়ে দখল করা হয়েছে।

সরেজমিনে গেলে স্থানীয় জেলেরা জানান, রুহুল ফকির নামের এক ব্যক্তি এক্সকেভেটর দিয়ে কয়েকশ’ মিটার এলাকাজুড়ে বাগান ও নদী তীরের প্লাবনভূমিসহ কোটি কোটি টাকার সরকারি খাস জমি বনাঞ্চলসহ দখল করেছে।

রিংবেড়িবাঁধ দেওয়া স্থানীয় বাসিন্দা অভিযুক্ত রুহুল ফকির জানান, ভুলা চিংড়ি শুকানোর জন্য ওই জায়গায় রিংবেড়িবাঁধ দেওয়া হয়েছে। আবার বর্ষায় কেটে দেবেন বলে জানান। এক্ষেত্রে স্থানীয় ফরেস্টার বিষয়টি দেখেছেন বলেও তিনি জানান। এছাড়া ওই জমি চার-পাঁচ জনের কার্ডের (বন্দোবস্ত) জমি বলেও তিনি দাবি করেন।

পরিবেশ সংগঠক নজরুল ইসলাম জানান, এভাবে ফ্রি-স্টাইলে নদীসহ বনাঞ্চল ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। সবার আগে প্রয়োজন নদী তীরের জমি উদ্ধার করা ও বনাঞ্চল রক্ষা করা। তিনি প্রশ্ন করেন, এখনো জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়, ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল রয়েছে, অথচ ১৫-২০ বছর আগে কীভাবে কৃষিজমি দেখিয়ে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে? এইসব ভুয়া বন্দোবস্ত বাতিল করে এই জালিয়াতি প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতদের ফৌজদারি আইনের আওতায় আনার দাবি করেন এই পরিবেশ সংগঠক।

হাজীপুর এলাকার ফরেস্টার কামরুল আহসান জানান, তিনি বিষয়টি তার কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। দুই জন ব্যক্তি এই রিংবেড়িবাঁধ দিয়েছে।

উপজেলা বন ও পরিবেশ কমিটির সভাপতি ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাউছার হামিদ জানান, তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ পদক্ষেপ নিবেন। নদী তীর কিংবা বনাঞ্চল দখল করার সুযোগ নেই।

বাংলাদেশ সময়: ২০:৫৩:১৮ ● ৮৬ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ