ঝুঁকি বাড়াচ্ছে সড়ক-মহাসড়কে চলাচলরত অসংখ্য চলন্ত বোমা!

প্রথম পাতা » বিশেষ প্রতিবেদন » ঝুঁকি বাড়াচ্ছে সড়ক-মহাসড়কে চলাচলরত অসংখ্য চলন্ত বোমা!
শুক্রবার ● ১ মার্চ ২০১৯


প্রতীকী ছবি

সাগরকন্যা এক্সক্লুসিভ রিপোর্ট॥
জ্বালানি খরচ সাশ্রয়ে দেশের অধিকাংশ যানবাহনই এখন সিএনজিতে চলছে। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা যানবাহনের মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডারকে চলন্ত বোমা হিসাবে চিহ্নিত করছেন। ফলে যাতায়াতের প্রধানতম বাহনগুলো দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। জনজীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে সিএনজি ফুয়েল সিস্টেমে চলা বাসগুলো দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। কারণ জ্বালানি খরচ কমিয়ে আনতে দূরপাল্লার রুটসহ দেশের সর্বত্রই বাড়ছে সিএনজিচালিত যানবাহনের সংখ্যা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) জরিপ মতে, সিএনজিতে চলা ৪৪ শতাংশ বাসের গ্যাস সিলিন্ডারের মেয়াদ ঠিক নেই। পাশাপাশি সিএনজিচালিত অন্যান্য যানবাহনেরও বড় অংশ মেয়াদহীন গ্যাস সিলিন্ডারে চলছে। রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল) তথ্যানুযায়ী, সারা দেশে সিএনজিচালিত যানবাহনের সিলিন্ডারের অর্ধেকই রয়েছে মেয়াদহীন অবস্থায়। বিআরটিএ এবং আরপিজিসিএল সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশজুড়ে সিএনজিচালিত যানবাহনের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান সরকারি কোনো দফতরেই নেই। তবে আরপিজিসিএলের হিসাব  অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে এসে সারা দেশে সিএনজিচালিত যানবাহনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৮৬৪টি। তার মধ্যে সিলিন্ডার পরীক্ষা করা হয়েছে মাত্র ৯১ হাজার ৭৭১টির। এখনো আড়াই লাখের বেশি যানবাহনের সিলিন্ডার আছে, যেগুলোর মেয়াদ শেষ হলেও পরীক্ষা করা হয়নি। দেশে যেসব যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে সিএনজি ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর সিংহভাগই রূপান্তরিত। সিএনজিতে রূপান্তরিত যানবাহনের সংখ্যা ২ লাখ ৭০ হাজার ২৩৯। আর আমদানি করা সিএনজিচালিত যানবাহন আছে ৪০ হাজার ৩৮৩টি। তার বাইরে সারা দেশে ১ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি সিএনজিচালিত থ্রি-হুইলার চলাচল করছে। বিআরটিএর হিসাবে সারা দেশে সাড়ে ৩ লাখ প্রাইভেট কার চলছে। আর সিএনজিতে রূপান্তরিত যানবাহনের মধ্যে প্রাইভেট কারের সংখ্যাই বেশি।
সূত্র জানায়, বিগত ২০০৫ সালে প্রণীত সিএনজি বিধিমালায় ৫ বছর অন্তর গ্যাস সিলিন্ডার পরীক্ষা করার বিষয়ে আইনি বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু সারা দেশে চলাচল করা সিএনজিচালিত বাসের ৪৪ শতাংশেরই সিলিন্ডারের মেয়াদ শেষ হয়েছে। বাসের পাশাপাশি ৩৬ শতাংশ ট্রাক ও ৯ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশার সিলিন্ডারের মেয়াদ ঠিক নেই। বর্তমানে রাজধানীতে চলাচল করা ৯০ শতাংশ বাসই সিএনজিচালিত। কিন্তু মালিকদের অসচেতনতার এবং বিআরটিএর অবহেলায় এখনো সিংহভাগ যানবাহনের মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার অপরীক্ষিত রয়েছে। বিআরটিএ ফিটনেস পরীক্ষার সময়ই এ কাজ করতে পারে। কিন্তু তারা কাজটি ঠিকমতো না করায় আজ এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, সারা দেশে আরপিজিসিএল অনুমোদিত সিএনজি ফিলিং স্টেশন রয়েছে ৬০০টি। তার মধ্যে চালু স্টেশনের সংখ্যা ৫৪৯টি। ওই স্টেশনগুলোর মধ্যে ৩২৪টি তিতাস, ৭৫টি বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, ৫৭টি জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড, ৬৬টি কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ও ২৭টি সিএনজি ফিলিং স্টেশন পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের। ওসব সিএনজি স্টেশন প্রতিদিন ৩ দশমিক ২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার করছে।
এদিকে আরপিজিসিএলের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, সিলিন্ডার মেয়াদোত্তীর্ণ হলে ফিলিং স্টেশন থেকে গ্যাস সংগ্রহের সময়ও দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। এককথায় মেয়াদোত্তীর্ণ ওসব সিলিন্ডার চলন্ত বোমা। কারণ প্রতিটি জিনিসেরই একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। সিলিন্ডারের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। ৫ বছর পর পর সিলিন্ডার পরীক্ষার নিয়ম থাকলেও এদেশে বেশির ভাগ মানুষই তা মানছে না।
অন্যদিকে বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ জানান, সবসময় সিলিন্ডারের প্রেসারটা ঠিক রাখতে হয়। সেজন্য ৫ বছর পর পর তার পরীক্ষা করানোর নিয়ম। সিলিন্ডারের ভাল্ব (মুখ) ঠিকমতো বন্ধ আছে কিনা, সেটি নিয়মিত দেখা জরুরি। পাশাপাশি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেরও একটা ব্যাপার থাকে। কোনো যানবাহনে যদি মেয়াদোত্তীর্ণ বা অপরীক্ষিত সিলিন্ডার থাকে, তার যেকোনো একটিতে সমস্যা হতে পারে। কানেকশন দুর্বল হয়ে যেতে পারে, গরম হয়ে যেতে পারে। যেকোনো সময় সেই সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হতে পারে। আর বাসের মতো গণপরিবহনে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ যে মারাত্মক ক্ষতিসাধন করবে সেকথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১০:১৮:১৫ ● ৫৯৭ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ