সমুদ্রে ৫শ‘ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে বিপাকে চরফ্যাসনের আড়তদাররা

প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ » সমুদ্রে ৫শ‘ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে বিপাকে চরফ্যাসনের আড়তদাররা
শনিবার ● ২৯ মার্চ ২০২৫


সমুদ্রে ৫শ‘ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে বিপাকে চরফ্যাসনের আড়তদাররা

আমির হোসেন, চরফ্যাশন (ভোলা)সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

লাভের আশায় প্রায় ৫‘শ কোটি টাকা সমুদ্রে বিনিয়োগ করছেন ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ৭টি মৎস্যঘাটের ১৯৮জন আড়তদার। তারা এ বিনিয়োগের বিপরীতে মুনাফা তো দূরের কথা, দশ শতাংশ চালান তুলতে পারেনি চলতি মৌসুমে। এরই মধ্যে সমুদ্রে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা চলমান থাকায় পুরোদমে হাত গুটিয়ে বসে আছেন আড়তদার ও জেলেরা। তবে নির্দিষ্ট এসব আড়তদারদের বিনিয়োগ ছাড়াও পরোক্ষভাবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি পর্যায়ে প্রায় ৫শ‘ কোটি টাকার উপরে বিনিয়োগ রয়েছে এই খাতে।
বাংলাদেশে সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ হলেই ভারতের জেলেরা এদেশের সীমানায় এসে মাছ ধরে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ জেলেদের।
উপজেলার বিছিন্ন দ্বীপ ঢালচর, চরককুরী মুকরি, নুরাবাদের গাছিরখাল, আহম্মদপুরের শুকনোখালি, কাছিয়াখালি, হাজিরহাটের রাস্তারমাথা, নীলকমলের ঘোষেরহাট,  বাংলাবাজার, হাজারীগঞ্জের খেজুরখাছিয়াসহ মোটঘাট গুলোতে প্রায় সাড়ে ৩শ কোটি টাকা দাদন দিয়েছে আরৎদারেরা।
সামরাজ মৎস্যঘাট জেলে সমবায় সমিতি লিঃ এর সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, সামরাজঘাটে ১৫০কোটি টাকা দাদন দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বৃহত্তর মৎস্যঘাট হলো সামরাজঘাট। ইলিশের ভরা মৌসুমে এ ঘাটে দৈনিক ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়। এ বছরের মত খারাপ অবস্থা গত ৯-১০ বছরেও ঘটেনি। নদী ও সাগরে মাছ নাই বললেই চলে। মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা বহালের আগের দিনও তেলের খরচ উঠাতে পারেনি জেলেরা। আড়তদারদের কি দিবে? নিষেধাজ্ঞা শেষে যে, জেলেদের জালে মাছ ধরা পড়বে তা আল্লাহ ভালো জানে। এই মৎস্যঘাটে ৯৮ জনমৎস্য আড়তদার রয়েছে। এসব আড়তদাররা প্রায় দেড়শ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। অথচ দশ শতাংশ চালান তুলতে পারেনি।’ ১মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত্ সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
জেলে নুরনবী মাঝি(৩২) বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার ১০দিন আগে ২১ জন মাঝি-মাল্লা নিয়ে সমুদ্রে গিয়েছিলাম। সামান্য পরিমান মাছ পেয়েছিলাম, তাতে বাজার খরচও তুলতে পারি নাই। এখনতো সংসার চালানোর মতো সামর্থ্য নাই। সমুদ্রে আগের মতো মাছ নাই। দেনা করে পরিবারের জন্য চাল-ডাল কিনতে হয়েছে। ধার-কর্জ করে কতো দিন চলতে পারবো?’ নুরনবীর মতো একই প্রসঙ্গ তুলে কথা বলেছেন সেখানে থাকা রফিক মাঝি (৪২), ইদ্রিস (৩৭), আব্বাস উদ্দিন (২৩) ও রত্তন মাঝি (৪৪)।
চরফ্যাশন উপজেলার আহম্মদপুরের শুকনোখালি মৎস্যঘাটের আড়ৎদার ইব্রাহীম মাঝি বলেন, আমি ৫০কোটি টাকা দাদন দিয়েছি। মাত্র ১৫ ভাগ উঠিয়েছি। নদী ও সাগরে মাছ না পড়ার ফলে টাকা উত্তোলন করা সম্ভব হয় না।
আমরা মতো এ অঞ্চলের অন্য ঘাটগুলোতে শুনশান নীরবতা দেখা গেছে। বিশেষ করে বেতুয়া, নতুন স্লুইসগেট, পাঁচকপাট, খেজুরগাছিয়া, ঢালচর, বকসীরঘাট, ঘোষেরহাট, চরকচ্ছপিয়া ও কুকরিমুকরি। জেলেরা জানিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত মৎস্যঘাটগুলোতে কোলাহল থাকে না। শুধুমাত্র নোঙর করা ট্রলার পাহারা দেওয়ার জন্য জেলেরা থাকে।
চরফ্যাশন উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চরফ্যাশন উপজেলায় প্রায় ৯০ হাজার জেলে রয়েছে। উপজেলার নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৪ হাজার ৩৭৫ জন। অনিবন্ধিত জেলে রয়েছে প্রায় ৪৬ হাজার। এসব জেলেরা নদী ও সাগরে মাছ শিকার করে।
চরফ্যাশন উপজেলা মেরিন ফিশারিজ কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ বলেন, ‘এ বছর নদী ও সমুদ্র্রে মাছ খুবই কম। জেলেদের উপর নির্ভর করে আড়তদাররা কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। আড়তদারদের এ বিনিয়োগের মুনাফা তুলতেই কয়েক বছর লেগে যাবে। মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা চলমান থাকায় ইতোমধ্যে অনেক জেলে বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। মাছের বংশ বিস্তার, বেড়ে ওঠা ও টেকসই আহরণের জন্য বঙ্গোপসাগরে ভারত ও বাংলাদেশ সরকার বছরের নির্দিষ্ট একটি সময়ে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেয়। প্রতিবছর বাংলাদেশের জলসীমায় এই নিষেধাজ্ঞা থাকে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন। আর ভারতের জলসীমায়তা থাকে ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন (৬১ দিন)। সরকার মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পুনর্বিন্যাস করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, তাতে প্রতিবছর ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সময়ে নিষেধাজ্ঞা থাকবে বঙ্গোপসাগরের ভারতের জলসীমায়ও। এ ক্ষেত্রে ভারতের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকার দুদিন আগে বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়ে যাবে।’

 

 

এএইচ/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২১:০৬:৫৪ ● ৩৭ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ