তালতলীতে অনুমোদনহীন ক্লিনিকে সার্জারি ডিগ্রীহীন চিকিৎসক!

প্রথম পাতা » বরগুনা » তালতলীতে অনুমোদনহীন ক্লিনিকে সার্জারি ডিগ্রীহীন চিকিৎসক!
বুধবার ● ৩১ জানুয়ারী ২০২৪


তালতলীতে অনুমোদনহীন ক্লিনিকে সার্জারি ডিগ্রীহীন চিকিৎসক!

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

অপারেশন থিয়েটারে নবজাতকের পিঠ কেটে ফেলা সেই চিকিৎসক ডাঃ রুনা রহমানের সার্জারী ডিগ্রী এবং অ্যানেস্থেসিয়া চিকিৎসক ডাঃ এ কে এম রায়হানুল ইসলামের ডিগ্রী নেই। দুই বছর ধরে ক্লিনিকের লাইসেন্স নবায়ন নেই। প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান নাদিম প্রভাব খাটিয়ে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে দোয়েল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালিয়ে আসছেন। বুধবার অনুসন্ধানে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেড়িয়ে এসেছে। ওই ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগী সোহাগ ও এলাকাবাসী।
জানাগেছে, তালতলী উপজেলা শহরের জামে মসজিদ সংলগ্ন বৈশাখী হোটেলের মালিক মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল সোহাগ শনিবার দুপুরে তার স্ত্রী লিপি বেগমকে আল্ট্্রাসনোগ্রাম করতে দোয়েল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যান। ওই ক্লিনিকে আলট্রাসনোগ্রাম শেষ হওয়ার পরপরই ডাঃ রুনা রহমান ব্যবসায়ী সোহাগকে তার স্ত্রীর দ্রুত অপারেশন করতে বলেন। নইলে তার স্ত্রীর গর্ভের বাচ্চা বাঁচানো যাবে না। নিরুপায় হয়ে প্রসুতির স্বামী সোহাগ তাৎক্ষনিক ওই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ১৮হাজার টাকায় তার সঙ্গে চুক্তি করে। সোহাগের অভিযোগ, অপারেশন না করে তার স্ত্রীকে বাসায় নিয়ে আসতে চাইলেও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাকে আসতে দেয়নি। পরে ওইদিন রাত সাতটার দিকে তার স্ত্রী লিপি বেগমকে ওই ক্লিনিকের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ রুনা রহমান অপারেশন করেন। স্বজনরা জানান অপারেশন থিয়েটারে শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে পায়। এ সময় তারা শিশুটির অবস্থা জানতে চাইলে চিকিৎসক কোন জবাব না দিয়ে এড়িয়ে যান। এতে তাদের সন্দেহ হয়। ঘটনার ২৭মিনিট পরে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে তার স্বজনদের হাতে তুলে দেন। ওই সময় শিশুটির পিঠে ধারালো অস্ত্রের কাটা চিহৃ দেখতে পায়। ওই সময় শিশুটির কাটা স্থান থেকে রক্ত বের হচ্ছিল বলে জানান শিশুটির বাবা সোহাগ। এ ঘটনা তদন্তে পরের দিন গত রবিবার বরগুনা সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ ফজলুল হক তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন।  সিভিল সার্জনের নির্দেশ পেয়ে ওইদিন বিকেলে তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ সুমন পোদ্দারসহ তিন সদস্যের একটি টিম ক্লিনিকটির তদন্ত শুরু করেন। তাদের তদন্তে বেড়িয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। অপারেশন থিয়েটারে নবজাতক শিশুকন্যার পিঠ কেটে ফেলা সেই চিকিৎসক ডাঃ রুনা রহমানের কোন সার্জারী ডিগ্রী এবং অ্যানেস্থেসিয়া চিকিৎসক ডাঃ এ কেএম রায়হানুল ইসলামের ডিগ্রী নেই। ২০২২ সাল থেকে ক্লিনিকটির লাইসেন্স নবায়ন নেই। ক্লিনিকটির মালিক আসাদুজ্জামান নাদিম কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ক্লিনিক পরিচালনা করে আসছেন। বুধবার তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন বরগুনা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেন। এমন অনিয়মের বিষয়ে জানতে ক্লিনিকের মালিক আসাদুজ্জামান নাদিমের সঙ্গে যোগাযোগকরা সম্ভব হয়নি।  তবে ক্লিনিকের ম্যানেজার জহিরুল ইসলাম সোহাগের সঙ্গে কথা বলে এমন অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। উল্টে সাংবাদিকদেও ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে অশ্লীল আচরণ করেন। অপর দিকে বুধবার দুপুরে ওই শিশুকন্যা ও প্রসূতিকে ক্লিনিক থেকে বাসায় আনা হয়েছে।
শিশুকন্যার বাবা মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল সোহাগ বলেন, শিশুকন্যা কিছুটা সুস্থ্য তাই ক্লিনিক থেকে বাসায় এনেছি। তিনি আরো বলেন, আমার শিশুকন্যাকে নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছে তা আর যেন কোন শিশুর বেলায় না ঘটে। দ্রুত ওই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান তিনি।
তদন্ত কমিটির প্রধান তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ সুমন পোদ্দার বলেন, ২০২২ সাল থেকে দোয়েল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নবায়ন নেই। নবজাতকের পিঠ কেটে ফেলা ডাঃ রুনা রহমানের সার্জারি ডিগ্রী নেই, রোগীদেও অচেতন করা অ্যানেস্থেসিয়া চিকিৎসক ডাঃ একেএম রায়হানুল ইসলামেরও ডিগ্রী নেই। তিনি আরো বলেন, নানা অনিয়মের মধ্যে দিয়েই চলছে ক্লিনিকটি। তদন্ত প্রতিবেদন বরগুনা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
বরগুনা সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ ফজলুল হক বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। ওই প্রতিবেদন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। অধিদপ্তরের নির্দেশনা মতে ক্লিনিক ও ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২২:০৫:৫৭ ● ৪৮ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ