ঢাবি উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে ছাত্রদলের দেড় ঘন্টার অবস্থান

প্রথম পাতা » রাজনীতি » ঢাবি উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে ছাত্রদলের দেড় ঘন্টার অবস্থান
রবিবার ● ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৯


ঢাবি উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে ছাত্রদলের দেড় ঘন্টার অবস্থান

ঢাকা  সাগরকন্যা অফিস॥

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন তিন মাস পেছানোসহ সাত দফা দাবিতে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি সমর্থক ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী রবিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে ছাত্রদলের দেড় শতাধিক নেতাকর্মী মধুর ক্যান্টিন থেকে মিছিল করে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে যান। এরপর সেখানে অবস্থান নিয়ে তারা ‘খালেদা জিয়া, জিয়া খালেদা’, ‘হলে ভোটকেন্দ্র, মানি না মানব না’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। দেড় ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালনের পর সেখান থেকে সরে যান তারা। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান অবস্থান কর্মসূচিতে বলেন, ডাকসু নির্বাচনের ব্যাপারে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কতটা আন্তরিক তা আপনারা দেখেছেন। আমরা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এমন একটি সময়ে ডাকসু নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়েছে যখন ঢাকাসহ বাংলাদেশের প্রতিটি জনপদে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা গুম, ক্রসফায়ার, হামলা মামলায় জর্জরিত হয়ে নিজের এলাকায়, নিজের বাড়িতে পর্যন্ত যেতে পারছেন না। ডাকসুর প্রতি ছাত্রদলের যে মমত্ববোধ, যে বিজয়ের ইতিহাস, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে ইতিহাস ও ডাকসুর সাথে ছাত্রদলের যে আত্মিক সম্পর্ক, সে কারণে ডাকসু নির্বাচনের প্রতিটি পদক্ষেপকে আমরা স্বাগত জানিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু সাত দফা দাবি আদায়ে প্রশাসনের সব পর্যায়ে যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাননি বলে অভিযোগ করেন এই ছাত্রদল নেতা।
আকরামুল হাসান বলেন, প্রশাসনের আচরণে আজকে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক যেমনিভাবে তাদের কেন্দ্রীয় কমিটি, শাখা কমিটি গঠনের জন্য কাজ করছে, তেমনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ডাকসু শাখা গঠনের কাজটি করছে। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল অন্য সংগঠনগুলোও তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেসব দাবি কানে তুলছে না। সেই দাবির কোনো মূল্যায়ন তারা করেনি। একগুঁয়েভাবে এবং তড়িঘড়ি করে, যেনতেনভাবে একটি ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার মাধ্যমে ডাকসুকে তারা কার্যকর করার পরিবর্তে দখল করতে চায়। ডাকসু ঘিরে ‘ষড়যন্ত্র’ ছাত্রদল তার জবাব দেবে বলে হুঁশিয়ার করেন আকরাম। যদি কোনো ধরনের টালবাহানা হয়, যদি কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র হয়, তাহলে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার, বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে দাবানল জ¦লে ওঠবে।
ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার বলেন, হলে হলে মিনিমাম সহাবস্থান এখনো নেই। ডাকসু নির্বাচন তড়িঘড়ি দেয়া হচ্ছে। সাতদফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রদল আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে ঘোষণা দেন মেহেদী। ডাকসু নির্বাচন তিন মাস পেছানো ছাড়াও হলের বদলে অ্যাকাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র করা, নির্বাচনের আগে ক্যাম্পাসে সব ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করা প্রার্থিতার বয়সসীমা বাতিল করে ডাকসু ও হল সংসদের ফি প্রদানকারী সব শিক্ষার্থীকে ভোটাধিকার ও প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়ার দাবি রয়েছে তাদের সাত দফার মধ্যে।
এর আগে বিগত ৭ ফেব্রুয়ারি এসব দাবি নিয়ে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছিল ছাত্রদলের পক্ষ থেকে। অবস্থান কর্মসূচির সঞ্চালকের বক্তব্যে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক বাশার সিদ্দিকী বলেন, আমরা ধাপে ধাপে উপাচার্যের সাথে কথা বলেছি, কিন্তু তারা আমাদের কোনো দাবিই মেনে নেননি। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, রাজপথে থেকেই আমরা আমাদের দাবি আদায় করে নেব। ছাত্রদল কর্মীরা পৌঁছানোর আগেই উপাচার্য কার্যালয়ের কলাপসিবল গেইটে তালা ঝুলিয়ে দেয় প্রশাসন। পরে সেখানেই ব্যানার নিয়ে বসে পড়েন নেতাকর্মীরা।
নির্বাচন স্থগিত চেয়ে ছাত্রদল নেত্রীর রিট: এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের এক নেত্রী। ভোটার তালিকায় নাম না থাকায় রিটটি করেছেন তিনি। রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্রী ফাহমিদা মজিদের পক্ষে হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল। আবেদনকারীকে ভোটার তালিকার বাইরে রেখে তাকে প্রার্থিতা ও ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত করে ১১ মার্চ অনুষ্ঠেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল কেন বেআইনি ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, মর্মে রিটে রুল চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় ১১ মার্চের অনুষ্ঠেয় নির্বাচন স্থগিতের আরেজি জানানো হয়েছে রিটে। শিক্ষা সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ডাকসু নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা এস এম মাহফুজুর রহমানসহ রিটে পাঁচজনকে বিবাদী করা হয়েছে রিটে। রিটে বলা হয়েছে, ২৯ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের গঠনতন্ত্রে প্রথম পৃষ্ঠার প্রথম অনুচ্ছেদে সংশোধন আনা হয়। ওই সংশোধনীতে বলা হয়, ‘যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ছাত্র হয়েছিল, তারা চার বছরের আন্ডার গ্রাজুয়েট প্রোগ্রাম শেষ করে কন্টিনিউ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে; এখন সেটা মাস্টার্স হতে পারে, মাস্টার্স একই বিভাগে না হয় অন্য বিভাগে হতে পারে, অথবা কেউ কেউ এমফিল করছে, অথবা অন্য প্রোগ্রাম যেগুলি আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেখানেও ভর্তি হতে পারে; এরাই ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবে’।
এছাড়াও বিগত ২৯ জানুয়ারির সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একাধিক মাস্টার্স করা, সান্ধ্যকালীন ও অন্যান্য কোর্সের শিক্ষার্থীরা ডাকসু এবং হল সংসদ নির্বাচনে শর্ত সাপেক্ষে ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবেন। এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে তাদেরকে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে স্নাতক উত্তীর্ণ ও বয়স ৩০ বছরের মধ্যে হতে হবে। আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ডাকসু গঠনতন্ত্রের সংশোধীত এ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আবেদনকারী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার এবং ভোটার হওয়ার যোগ্য।
আবেদনকারী ফাহমিদা মজিদ ঊষার মতো আরও অনেককেই ভোটার করা হয়নি। আবার ঊষার মতো অনেক শিক্ষার্থীকে ভোটার করা হয়েছে। আবেদনকারীকে ভোটার না করায় তার সাংবিধানিক অধিকারকে খর্ব করা হয়েছে। তিনি বলেন, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২৬ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। অথচ ওই তফসিলে সম্পূরক ভোটার তালিকা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। সম্পূরক ভোটার তালিকা প্রকাশের তারিখ রাখা হয়েছে আবার ৫ মার্চ। সে তালিকায় যদি আবেদনকারীকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়, তাহলে তো তিনি ভোট দিতে পারলেও নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। ফলে তিনি ঘোষিত তফসিল যথাযথ প্রক্রিয়ায় হয়নি উল্লেখ তা স্থগিত চেয়ে রিট আবেদন করেছেন। আজ সোমবার বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাই কোর্ট বেঞ্চে রিট আবেদনটির শুনানি হতে পারে বলে জানান এই আইনজীবী।
প্রতিনিধিত্ব চায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (ডাকসু) নিজেদের প্রতিনিধিত্ব চান ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা। এই দাবিতে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) অধ্যয়নরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে রবিবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিল (বিএমএসসি) ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক নিছৈমং মারমা। লিখিত বক্তব্যে বক্তারা ডাকসু নির্বাচনে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত, ঢাবির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের জন্য পাঁচ ভাগ শিক্ষা কোটা বাস্তবায়ন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক আবাসিক সিট সংরক্ষণসহ তাঁদের নানা প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস) ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক জেউন্স রিসার্চ ঘাগড়া। ২৮ বছর পর আগামি ১১ মার্চ এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তফসিল অনুযায়ী ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা যাবে। ২৬ ফেব্রুয়ারি মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ও মনোনয়ন বাছাই। গত ১১ ফেব্রুয়ারি ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক এস এম মাহফুজুর রহমান। তফসিল অনুযায়ী ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা যাবে। ২৬ ফেব্রুয়ারি মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ও মনোনয়ন বাছাই। নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি। যাচাই-বাছাইয়ের পর ৩ মার্চ হলের নোটিশ বোর্ড ও ওয়েবসাইটে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। ভোট গ্রহণের জন্য ১১ মার্চ সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৫:১৫:২০ ● ৫৬৬ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ