বঙ্গবন্ধু টানেল খনন ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » বঙ্গবন্ধু টানেল খনন ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
রবিবার ● ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৯


চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে সুইচ টিপে খনন কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

চট্টগ্রাম সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

 কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বাংলাদেশের প্রথম সড়ক সুড়ঙ্গপথ ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ এর খনন কাজের আনুষ্ঠানিক সূচনা হল।
রবিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা সোয়া ১১টায় চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় টানেল প্রকল্প এলাকার কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে সুইচ টিপে আনুষ্ঠানিকভাবে এ খনন কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সেখানেই আরেকটি মঞ্চ থেকে ফলক উন্মোচন করে চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন তিনি। উদ্বোধন শেষে এক সুধী সমাবেশে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বে সম্মানজনক অবস্থানে এসেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম টানেল হচ্ছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে। ২০১০ সালে এ টানেল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলাম। টানেল নির্মাণে মহিউদ্দিন চৌধুরীর যুক্তি ছিল সেতু করা হলে নদীতে পলি জমবে। আজ তাকে স্মরণ করছি। মুক্তিযুদ্ধ, আন্দোলন-সংগ্রামে তার যথেষ্ট অবদান রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীন বাংলাদেশের জন্য এ প্রকল্পে শতভাগ ঋণ সহায়তা দিয়েছে। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর এ টানেলের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট। এ টানেল আনোয়ারা উপজেলাকে চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে যুক্ত করবে। ১০ কিলোমিটার সড়ক করা গেলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার চার লেন সড়কের সঙ্গে যুক্ত করা যাবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে। আরেকটি কাজ করে দিচ্ছি লালখান বাজার থেকে বিমান বন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এটি পোর্ট সিটি। ব্যবসা-বাণিজ্য সব কিছু এ জায়গা থেকে হয়। চট্টগ্রামে বিশাল আকারে অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। শহরে যানজট কমানোর জন্য বাইপাস করে দিচ্ছি। টানেল নির্মাণ হলে চট্টগ্রামে যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পায়ন হবে। কক্সবাজার পর্যটন শহর। যাতে পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠে সে লক্ষ্যে আলাদা কর্তৃপক্ষ করে দিয়েছি।
পদ্মাসেতু প্রকল্প নিয়ে বিশ্ব ব্যাংক ও সরকারের টানাপড়েনের সময় নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনুস এবং একাধিক পত্রিকার সম্পাদক ‘মিথ্যা অপপ্রচারে’ লিপ্ত হয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজের নামে পদ্মাসেতুর নামকরণের প্রস্তাব এলেও কেন তা করেননি, সেই ব্যাখ্যাও দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পদ্মা সেতুর নাম রাখতে চেয়েছিলেন ‘শেখ হাসিনা সেতু’। কিন্তু তিনি তা নাকচ করে দিয়েছেন, কারণ এই সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে ‘অনেক মিথ্যা অপবাদ ও অপপ্রচারের’ শিকার হতে হয়েছে তাকে। আমাদের দেশের লোক আমাদের বদনাম করে। আমাদের দেশের স্বনামধন্য পত্রিকার এডিটর প্লাস মালিক তারা, সাথে আপনাদের চট্টগ্রামের এক সন্তান আছে, যিনি জনগণের টাকা খেয়ে সুদের ব্যবসা করে নোবেল পেয়েছেন। তারা স্টেট ডিপার্টমেন্টে আমাদের বিরুদ্ধে সমানে অপপ্রচার করে। আর হিলারি ক্লিনটনের (সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী) কাছে ইমেইল পাঠিয়ে পাঠিয়ে নানাভাবে যোগাযোগ করে। কাজেই পদ্মা সেতুকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছিলাম। পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে বিশ্ব ব্যাংক চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে পিছু হটেছিল। এ নিয়ে দীর্ঘ টানাপড়েনের পর সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণের পথে এগিয়ে যায়। সেই ঘটনাপ্রবাহ মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগ যখন পদ্মাসেতুতে মনোযোগ দিল, বিশ্ব ব্যাংকই উৎসাহ দেখিয়েছিল সবচেয়ে বেশি। এত উৎসাহ নিয়ে এসে তারা হঠাৎ মাঝামঝিতে দুর্নীতির অভিযোগ আনল। তখনও কোনো টাকা ছাড় করে নাই, তো দুর্নীতিটা হল কোথায়? তারা এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না। তারপর বলল দুর্নীতি হয়নি, তবে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে। আমি আবার চ্যালেঞ্জ দিলাম- কোথায় দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে। তারা একটা ছোট কাগজ বের করল- যে এখান থেকে ওমুক এত পারসেন্ট পাবে, ওমুক এত পারসেন্ট পাবেৃ। এভাবে তারা নানা অপপ্রাচার চালাতে শুরু করে। সে সময় বিশ্ব ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তার বাংলাদেশে এসে তদন্ত চালানোর কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন জায়গায় বসে বসে তারা আমার নামে মিথ্যা অপপ্রচার চালাত। আমি নাকি বাংলাদেশে সবথেকে দুর্নীতিগ্রস্ত লোক, এবং আমার পুরো পরিবার দুর্নীতিগ্রস্ত। আমার নাম নিয়ে বলত তারা। পদ্মাসেতুর টাকা নাকি আমরা লুটে খেয়েছি। সেসব অভিযোগ চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কোথায় দুর্নীতি হয়েছে তার প্রমাণ হাজির করতে বলেছিলেন তিনি। তার উপদেষ্টা মসিউর রহমান প্রমাণ চেয়ে বার বার চিঠি লিখেছেন। কিন্তু দুর্নীতির কোনো প্রমাণ বিশ্ব ব্যাংক দিতে পারেনি। মাঝে মাঝে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট আসত, সাথে একজন কর্মকর্তা নিয়ে। হাতে একখান ব্যাগ বগলদাবা করে বসে থাকত। আর বলত দুর্নীতি হয়েছে, দুর্নীতি হয়েছে। আমি বললাম আপনার ব্যাগের মধ্যে কী কাগজ আছে, বের করেন, দেখান্ আমি দেখতে চাই যে কী দুর্নীতি হয়েছে, কে দুর্নীতি করেছে। আমি কী দুর্নীতি করেছি আমি সেটা দেখতে চাই। তারা বলে, এখন নেই, পরে দেব। পরে আমাদের চাপাচাপিতে একবার দুইখানা চিঠি পাঠাল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের দেওয়া সেই চিঠি ছিল ২০০২ সালের, তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। চিঠিতে যার নাম ছিল তিনি ছিলেন ‘বিএনপির মন্ত্রী’। দুর্নীতির যে অভিযোগ সেখানে ছিল, তার একটা ছিল ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক, অন্যটা সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন নিয়ে। পদ্মা সেতুর কোনো যোগাযোগ সেখানে ছিল না। কানাডার আদালতে একটা মামলা হয়। কিন্তু সেই মামলায় দুর্নীতির কোনো প্রমাণ ওয়ার্ল্ড ব্যাংক দেখাতে পারেনি। মামলার রয়ে বলে দেওয়া হয় যে এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি, যা যা বলা হয়েছে সব ভুয়া এবং বানোয়াট। শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের ওই অভিযোগ নিয়ে টানাপড়েনে দুই বছর নষ্ট হয়। অনেকের ধারণা ছিল বিশ্ব ব্যাংককে ছাড়া পদ্মা সেতু সম্ভব না। কিন্তু বাংলাদেশ নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করতে পেরেছে। পদ্মা সেতু নিয়ে যেহেতু এতকিছু হয়ে গেছে, এটা ‘পদ্মা সেতুই’ থাকবে। এটার সঙ্গে আর কোনো নতুন নাম যুক্ত হওয়ার প্রয়োজন নাই। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমি নাম চাই না। জীবনে কোনো কিছু চাওয়া-পাওয়ার নেই। নিঃস্ব-রিক্ত হয়ে দেশের জন্য কাজ করতে এসেছি। আমার বাবা সারাটা জীবন এ দেশের জন্য কষ্ট করেছেন। আমার মাও কষ্ট করেছেন। তারা এদেশের গরিব-দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছেন। এ দেশের কোনো মানুষ গৃহহারা থাকবে না। প্রতিটি মানুষ শিক্ষা পাবে। এটা বাবা চাইতেন। আমরা রক্ত দিয়ে দেশের স্বাধীনতা এনেছি। আমরা বিজয়ী জাতি। সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে বাঁচবে এ দেশের মানুষ। দুর্ভিক্ষের দেশ বলে বদনাম ছিল। বিশ্বের বিস্ময় হবে বাংলাদেশ। ৩০ লাখ শহীদের জীবনের বিনিময়ে এ স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মানুষ জানতে পারছে। এ টানেলের মাধ্যমে চট্টগ্রামের গোটা অঞ্চল সমৃদ্ধশালী হবে। জিডিপিতে আরও অনেক অর্জন যোগ হবে। ডাবল ডিজিটে নিয়ে যাবো।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ নামে শতবর্ষের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবো। মুজিব বর্ষ ঘোষণা করেছি। ২০৭১ সালে স্বাধীনতার শতবর্ষ। আমাদের প্রজন্ম উন্নত, সমৃদ্ধশালী দেশে তা উদযাপন করবে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশে গত ৪৩ বছরে সবচেয়ে সফল কূটনীতিকের নাম শেখ হাসিনা।বীর চট্টগ্রাম এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা প্রত্যক্ষ করলাম, দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেলের বোরিং কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠান। এ স্বপ্নের রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে এ টানেলের নামকরণ করা হয়েছে। চট্টগ্রামবাসীর বারে বারে অনুরোধের প্রেক্ষিতে এ নামকরণ। বাংলাদেশের প্রথম সড়ক সুড়ঙ্গপথ ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ নির্মাণের কাজে চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী খুবই আনন্দিত হতেন বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বীর চট্টলার গণমানুষের নেতা প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কথা স্মরণ করে তিনি বলেছেন, মহিউদ্দিন চৌধুরী, তিনি চট্টগ্রামের মেয়র ছিলেন। নদীর ওপর ব্রিজ করলে নদীর ক্ষতি হবে। তাই গণমানুষের এই নেতা কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের দাবিতে আন্দোলনও করেছিলেন। আজ কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের কাজ শুরু হচ্ছে। তিনি থাকলে অত্যন্ত আনন্দিত হতেন। বাংলাদেশের অনেক আন্দোলন সংগ্রামে তার অবদান রয়েছে। আজ আমি তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।
টানেল নির্মাণ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, চীন সফরে গেলে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার আলাপ হয়। আলোচনার পর ওইদিনই আমরা চুক্তিতে সই করি। চীন সরকার সাধারণত ঋণের ৮৫ ভাগ দিয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য শতভাগ সহায়তা দিয়েছে তারা। আমাদের আগ্রহ দেখে চীনের প্রধানমন্ত্রী এ সহযোগিতা দিয়েছেন। চীনের প্রেসিডেন্টও বেশ সহযোগিতা করেছেন। তাদের সহায়তায় এই মহাযজ্ঞে আমরা প্রবেশ করেছি। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সময় চোখ মোছেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি কাজ করতে চাই দেশের জন্য, দেশের উন্নয়নের জন্য- এটাই বড় কথা। আমরা প্রথমবার সরকার গঠনের পরই চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল; যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের জন্য যা যা করণীয় তা করে দিয়েছি। চট্টগ্রামবাসীর আর কোনো দুঃখ থাকবে না। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। এর মধ্যে তিনি একটি সংবিধান দিয়ে গেছেন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলেছেন। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম পোর্টটা (চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর) চালু করেন; এই পোর্টে অনেক মাইন পোতা ছিল। সেগুলো বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর সহায়তায় সরানোর ব্যবস্থা করে পোর্টটাকে সচল করেছিলেন।অল্প সময়েই যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটাকে গড়ে তুলেন। কিন্তু তখনই বাঙালির ভাগ্য বিপর্যয় ঘটে। নেমে আসে ১৫ আগস্ট।
এসময় সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়কের চিন্তাভাবনা চলছে। কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভের কাজ শেষ করার পেছনে শেখ হাসিনার অবদান রয়েছে। সড়কটি না হলে রোহিঙ্গাদের নিয়ে দুর্দশায় পড়তাম। কক্সবাজার দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে বিনোদনের ব্যবস্থা করা হবে। আগামি ঈদের আগে তিনটি চার লেনের সেতু দৃশ্যমান হবে। ভবিষ্যতে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল করার চিন্তাভাবনা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মাণাধীন ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ চট্টগ্রাম শহরের বন্দর এলাকার সঙ্গে নদীর অন্য তীরের আনোয়ারা উপজেলাকে সড়কপথে যুক্ত হবে। এ টানেল চালু হলে পর্যটন নগরী কক্সবাজারসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ আরও সহজ হবে। পাশাপাশি কর্ণফুলীর দুই সেতুর ওপর যানবাহনের চাপ কমবে। সরকার বলছে, বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে চীনের সাংহাইয়ের আদালে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ মডেলে গড়েতোলা হবে কর্ণফুলীর তলদেশে এই টানেল নির্মাণের মধ্য দিয়ে।
দুটি প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন ও সুধী সমাবেশে যোগ দিতে সকাল পৌনে ১১টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনের পর মোনাজাত ও দোয়ায় অংশ নেন তিনি। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, গৃহায়ন ও গণপুর্তমন্ত্রী স ম রেজাউল করিম, ভুমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রামের মেয়র আজম নাসির উদ্দীন এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে শামসুন্নাহার চাঁপা, বিপ্লব বড়ুয়া ও পারভীন জামান কল্পনা এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।
কর্নফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের জন্য ২০১৪ সালের ১০ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বেইজিংয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। তিন দশমিক চার কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেইনের এ টানেল হবে দুই টিউব সম্বলিত। পশ্চিম প্রান্তে ৭৪০মিটার এবং পূর্বে চার হাজার ৯৫২ মিটার অ্যাপ্রোচ রোড থাকবে। টানেলটি নির্মাণ করছে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন্স কন্সট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি)। প্রকল্পের ৩২ শতাংশ কাজ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে। টানেল বোরিং মেশিন পতেঙ্গা অংশ থেকে মাটি কেটে কেটে নদীর ১৮-৩১ মিটার গভীর দিয়ে এগিয়েযাবে অন্য প্রান্তের দিকে। পাশাপাশি যন্ত্রের সাহায্যে কংক্রিট সেগমেন্ট যুক্ত হয়ে গড়ে তুলবেটানেলের কাঠামো। এরকম দুই হাজার সেগমেন্ট ইতোমধ্যে চীন থেকে নিয়ে আসা হয়েছে প্রকল্প এলাকায়। টানেলের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৫৫ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় তা আট হাজার ৪৪৬ দশমিক ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪ হাজার ৭৯৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকার যোগান দেবে চীনের এক্সিম ব্যাংক। বাকি ৩ হাজার ৬৪৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হবে। প্রকল্পবাস্তবায়ন করবে সেতু কর্তৃপক্ষ। ২০২২ সালে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। যমুনা নদীর নিচ দিয়ে গাইবান্ধা ও জামালপুর জেলার মধ্যেও আরেকটি টানেল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অধীনে বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২৫০কোটি ৮৪ লাখ টাকা। নির্মাণ কাজের দায়িত্বে রয়েছে ম্যাক্স-রেঙ্কিন জেভি। লালখানবাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েরনয়টি পয়েন্টে ২৪টি র‌্যাম্প থাকবে। এ প্রকল্পের পরিচালক সিডিএর প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, প্রকল্পের সিমেন্ট ক্রসিং-পতেঙ্গা এবং লালখান বাজার-টাইগার পাস অংশে কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি বারিক বিল্ডিং-কাস্টমস অংশের মাটি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। চার বছরের মধ্যে এ কাজ শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৪:০০:৪৫ ● ৬৬৯ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ