আইনজীবির দ্বিতীয় স্ত্রীকে মেনে না নেয়ায় প্রথম স্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু!

প্রথম পাতা » বরগুনা » আইনজীবির দ্বিতীয় স্ত্রীকে মেনে না নেয়ায় প্রথম স্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু!
শুক্রবার ● ১ নভেম্বর ২০১৯


আইনজীবির দ্বিতীয় স্ত্রীকে মেনে না নেয়ায় প্রথম স্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু!

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আইনজীবি বিএনপি নেতা এম  ইসহাক বাচ্চুর কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী অরেক আইনজীবি আফসানা আক্তারকে মেনে না নেয়ায় প্রথম স্ত্রী দীপ্তি রানীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগ ভাই দীপাঙ্কর ও সহকর্মীদের। ঘটনার পরপর আইনজীবি  বাচ্চু এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। তার মুঠোফোন বন্ধ রয়েছে। আইনজীবি পলাতক থাকায় মৃত্যুরহস্য আরো ঘনিভুত ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
জানাগেছে, আমতলী সিনিয়ির জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আইনজীবি ও তালতলী উপজেলা বিএনপি সদস্য এম ইসহাক বাচ্চু আইনজীবি আফসানা আক্তারের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। আমতলী পৌর শহরের সবুজবাগ এলাকায় মহিলা আইনজীবির ভাড়াটিয়া বাসায় বাচ্চু প্রায়ই রাত্রী যাপন করতো এমন অভিযোগ প্রত্যক্ষদর্শীদের। এ নিয়ে সবুজবাগ এলাকার মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলছিল কানাঘুষা। পরে তারা গত এক বছর পূর্বে গোপনে বিয়ে করেছেন বলে এলাকাবাসীকে জানায়। মহিলা আইনজীবি আফসানা আক্তারের মা প্রতিবেশীদের সাথে আইনজীবি বাচ্চুর সাথে তার মেয়ের বিয়ে হয়েছে বলে জানান। তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে ঘরে তোলার জন্য প্রথম স্ত্রী দীপ্তিকে দীর্ঘদিন ধরে চাপ দিয়ে আসছেন বাচ্চু। প্রথম স্ত্রী এতে রাজি হয়নি। এনিয়ে তাদের মাঝে দ্বন্ধ লেগেই থাকতো এমন দাবী প্রতিবেশী ও সহকর্মীদের।
প্রথম স্ত্রী দীপ্তি রানীর (রাবেয়া মুন্নি) ভাই দীপাঙ্কর মজুমদার অভিযোগ করে বলেন, দ্বিতীয় স্ত্রীকে মেনে না নেয়ায় আমার বোনকে বাচ্চু পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। পুলিশ বাচ্চু ও তার কন্যা ইসরাত জাহান ইভাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে। তিনি আরো বলেন, বাচ্চু যদি নির্দোষই থাকতো তাহলে কেন তিনি পালিয়ে যাবে? এদিকে এ ঘটনার পরপর বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে আইনজীবি বাচ্চু পলাতক রয়েছেন। তার মুঠোফোন বন্ধ। বাচ্চু পলাতক থাকায় মানুষের মাঝে প্রথম স্ত্রী দীপ্তি রানীর মৃত্য রহস্যটা আরো ঘনিভুত হচ্ছে। প্রথম স্ত্রী দীপ্তি রানীকেও আইনজীবি ইসহাক বাচ্চু পরকিয়ায় জড়িয়ে ২০০২ সালে বিয়ে করেন। বয়সের দিক থেকে বাচ্চুর চেয়ে দীপ্তি রানী প্রায় ১৩ বছরের বড়। বিয়ের পরে দীপ্তি রানী হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে পূর্বের স্বামীর এক কন্যা সন্তানসহ মুসলমান হন। মুসলমান হওয়ায় তার (দীপ্তি রানী) বাবার পরিবারের সাথে কোন ধরনের যোগাযোগ ছিল না। বাবার পরিবারের সাথে যোগযোগ না থাকায় সুযোগ পেয়ে বসেন বাচ্চু। তাকে নির্যাতন করলেও কোন প্রতিবাদ করতে পারেনি এমন দাবী সহকর্মীদের।
এদিকে আইনজীবিকে রক্ষায় একটি প্রভাবশালী মহল উঠেপরে লেগেছেন। তারা দীপ্তি রানীকে মানষিক রোগী আখ্যা দিয়ে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে যাচ্ছেন। দীপ্তির সহকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, একটি প্রভাবশালী মহল বাচ্চুকে রক্ষায় দীপ্তি রানীকে মানষিক রোগী বলে প্রচারনা চালাচ্ছেন। আমার এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। তারা আরো বলেন, দীপ্তি রানী যথারীতি মৃত্যুর আগের দিনও অফিস করেছেন। তিনি কোন দিনই মানষিক রোগী ছিলেন না। বৃহস্পতিবার রাতে দীপ্তি রানীকে তার স্বামী বাচ্চুর বাড়ীতে দাফন করা হয়েছে। স্বামী বাচ্চু পলাতক থাকায় ওই দাফন কাফনে সে অংশ নেয়নি। দাফনে অংশ না নেয়ায় সহকর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে মৃত্যুরহস্যটি আরো ঘনিভুত হয়েছে। তারা বরগুনা পুলিশ সুপার মহোদ্বয়ের কাছে সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক স্বামী বাচ্চু ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন।
দীপ্তি রানীর ভাই (রাবেয়া মুন্নি) দীপাঙ্কর মজুমদার অভিযোগ করে বলেন , বাচ্চুর দ্বিতীয় স্ত্রীকে মেনে না নেয়ায় আমার বোনকে বাচ্চু পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। তিনি আরো বলেন,বাচ্চু যদি আমার বোনকে হত্যা নাই থাকেন তাহলে তিনি কেন পালাবেন। ঘটনার দুইদিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত (শুক্রবার দুপুর) আমার পরিবারের সাথে বাচ্চু যোগাযোগ করেনি।
আইনজীবি আফসানা আক্তারের মুঠোফোনে বিয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এরিয়ে যান। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে তিনি অনিহা প্রকাশ করেছেন।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক ডাঃ শংঙ্কর প্রসাদ অধিকারী বলেন, দীপ্তি রানী যথারীতি অফিস করেছেন। দৃপ্তি রানীকে একটি মহল মানুষিক রোগী আখ্যা দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে সত্য ঘটনাটাকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং প্রকৃত ঘটনা তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীর শান্তি দাবী করছি।
আমতলী থানার ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি বলেন, লোক মুখে এক মহিলা আইজীবিকে বাচ্চু দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন বলে শুনেছি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ আইনজীবি এম ইসহাক বাচ্চুর স্ত্রী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টার্ফ নার্স দীপ্তি রানী বৃহস্পতিবার ভোররাতে তার ভাড়াটিয়া বাসায় রহস্যজনক মৃত্যু হয়।

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২২:১৪:১৩ ● ৩০৮ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ