প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি এবং দলীয় দুর্নীতিবাজ নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে হার্ডলাইনে সরকার

প্রথম পাতা » জাতীয় » প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি এবং দলীয় দুর্নীতিবাজ নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে হার্ডলাইনে সরকার
রবিবার ● ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯


প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি এবং দলীয় দুর্নীতিবাজ নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে হার্ডলাইনে সরকার

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥


দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি এবং সরকার দলীয় দুর্নীতিবাজ নেতাকমীদের নিয়ন্ত্রণে হার্ডলাইনে যাচ্ছে সরকার। ওই লক্ষ্যে দুর্নীতি দমনে সমন্বিত অভিযান জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেজন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), এনবিআরসহ সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে এ কাজে আরো সক্রিয় করা হবে। ইতিমধ্যে সরকারের উচ্চপর্যায়ের এই সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। দুর্নীতির সঙ্গে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের জড়িয়ে পড়ায় সরকারের ভাবমূর্তি ম্লান হচ্ছে। এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেই সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনার পর দুর্নীতি দমনে সমন্বিত কার্যক্রম জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারের নীতিনির্ধারকরা হঠাৎ করে দুর্নীতি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে বলে মনে করছেন। আর এ অপরাধে জড়িত সরকারদলীয় কিছুসংখ্যক নেতাকর্মী, যার দায় এসে পড়েছে সরকারের ওপর। তাই প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি ও অর্থপাচার রোধ এবং সরকারি দলের দুর্নীতিবাজ নেতাকর্মীদের লাগাম টেনে ধরতে সমন্বিত এ অভিযান পরিচালনা করা হবে। সরকারের সমন্বিত এই কাজের প্রধান লক্ষ্য দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক তৈরি করে এ অপরাধ থেকে তাদের দূরে রাখা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম অন্য সংগঠনগুলোর কিছুসংখ্যক নেতাকর্মীর কারণে জনমনে যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে, তা সরকার নিরসন করতে চায়। প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন কার্যক্রম মনিটর করবেন বলে জানা গেছে। তিনি উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করে এবং সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন দেখে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সম্ভাব্য দুর্নীতিবাজদের একটি তালিকা তৈরি করবেন। ওই তালিকা দুদক, এনবিআরসহ সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে পাঠানো হবে। সে অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরেও আনা হবে।
সূত্র জানায়, ক্ষমতাসীন দলের হাইকমান্ড আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের বিতর্কিত নেতাদের ব্যাপারে ক্ষুব্ধ। সম্প্রতি গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী বিতর্কিত নেতাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও হুঁশিয়ারি দেন। ইতিমধ্যে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও কৃষক লীগের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে খড়গ নেমে এসেছে। আর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে জানানো হয়েছে। এর পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান জোরালো করবে সরকার।
সূত্র জানায়, এ সরকারের আমলেই সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করেছে দুদক। সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধেও দুদক দুর্নীতির মামলা হয়। কক্সবাজারের বহুল আলোচিত সরকারদলীয় সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি দুদকের মামলায় কারাগারে ছিলেন। এরপর তিনি দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হন। শেরপুরের এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপ আতিউর রহমান আতিক এবং নরসিংদীর সাবেক এমপি কামরুল আশরাফ খানের দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করেছে দুদক। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি আবদুল ওদুদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত করছে। সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রলীগের দুজন শীর্ষনেতাকে সংগঠনের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়াসহ যুবলীগ ও কৃষক লীগের একাধিক প্রভাবশালী সদস্যকে গ্রেফতারের ঘটনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানেরই ইঙ্গিত।
এদিকে এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অতিসম্প্রতি ধানম-িতে দলের সভাপতির কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ কিংবা দলের সহযোগী সংগঠনের কোনো নেতা দুর্নীতি করলে দুদক ব্যবস্থা নেবে। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে বলা আছে। অপরাধ করে আওয়ামী লীগের কেউ পার পাবেন না। এর আগে সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের জানান, সরকারি দলের এমপিদের বিরুদ্ধেও দুদক চার্জশিট দিয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার পর একাধিক এমপির বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছে। অভিযুক্তরা জামিনের জন্য সহযোগিতা চাইলেও তাদের কথা শোনা হয়নি।
অন্যদিকে একই প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান এমপি জানান, দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে সরকারের চলমান কার্যক্রম অব্যাহত আছে। তবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো অ্যাকটিভ হওয়া প্রয়োজন। সরকার সেটাই করছে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে গণতন্ত্র, সুশাসন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা রক্ষা করতে চায়।
এ প্রসঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ জানান, দুর্নীতির বিষয়ে পত্রপত্রিকায় যেসব সংবাদ ছাপা হচ্ছে, তা দেখা হচ্ছে। দুদক নিজস্ব প্রসেস অনুযায়ী এসব ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৯:৫৫:৫১ ● ৬১৮ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ